মৃদঙ্গ থেকে বাঁয়া-তবলা
আরবি ত বলা থেকে তবলা। প্রথম তবলা আবিষ্কার করেছিলেন আরব দেশের জুবল এর পুত্র টুবল,তা নাম অনুসারেই তবল নাম করণ করা হয়।এই তবল থেকেই তবলা হয়েছে। তবলার আক্ষরিক বা বিশেষ অর্থ বোধকতা নেই।
তখন কেবল মাত্র এটির ব্যবহার আরব সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যেই দেখা যেত।পরবর্তীতে আরবের শিল্পীদের সঙ্গীতের সূত্র ধরেই এই তবল পারস্যে আসে।পারস্যের সঙ্গীত শিল্পীরা তখন আদি গজলের সাথে এই তবল ব্যবহার করতেন।
সেই সময়ই আমির খসরুর পিতাসহ আরো অনেক সঙ্গীত শিল্পীরায় পারস্য থেকে ভারতবর্ষে আসেন।কারণ, ঈতুৎমিশের আমল আর চেঙ্গিসখানের যুদ্ধ যাত্রা।এ সকল নানাবিধ কারণে তখন পারস্য থেকে অনেক মানুষের সাথে অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত সুফি,সাধক,দরবেশ, গীতিকার, সঙ্গীতজ্ঞ ভারতবর্ষে আসেন।
তখন ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামল। আর পারস্য থেকে আগত সঙ্গীতজ্ঞদের হাত ধরেই তবল আসে ভারতে।পারস্যে এর তবল নামের যে তালযন্ত্রটি তা ভারতীয় তালযন্ত্র থেকে আলাদা।
তার আগে জেনে নেই তালযন্ত্র হচ্ছে মূলত গানের সাথে তাল,লয়,ছন্দ,সুর ও গতিময়তা দান করার জন্য। এক কথায় এটি গানের সাথে বাজানো হয়ে থাকে।পারস্যের এই আমির খসরু ভারতে তখন বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ হয়ে ওঠেন তাঁর গজল গান এর মধ্য দিয়ে।তাঁর সঙ্গীতের যাত্রা শুরু হয় গজল দিয়ে।
আমির খসরুর গজলের আগে ভারতবর্ষে যে কোনো তবলা নামের যন্ত্র ছিল তা জানা যায় না।তখন ভারতবর্ষে মৃদঙ্গ বাজানো হত গানের সাথে।যেটাকে বাংলায় খোল বলা হয়ে থাকে।মাটির তৈরী ঢোল।
আমির খসরু ও বাঁয়া-তবলা
আর আমির খসরু পারস্যের গজল গানের সাথে এই তবলা ব্যবহার করতেন। তাঁর এই গানের জনপ্রিয়তা থেকেই ভারতবর্ষে তবলার প্রচলন। তিনি মৃদঙ্গকে ২ভাগে ভাগ করেন, এক অংশের নাম দেন বাঁয়া বা ডুগি ও অপর অংশের নাম দেন তবলা ডাইনে।এটি মূলত এক সেট যন্ত্র।সর্বত্র ২টি খন্ডের একটি সেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাঁয়া বামহাতে বাজানো হয়ে থাকে সরাসরি মণিবন্ধ তালু আর মধ্যমা আঙ্গুলের সাহায্যে মাঝে মাঝে তর্জনী ও ব্যবহার করা হয় এর ধ্বনিকে প্রাঞ্জল আর শ্রুতিমধুর করতে।
ডাইনে ডান হাতের শুধু মাত্র তিনটি আঙ্গুলের সমন্বয়ে বাজানো হয়ে থাকে।তর্জনী, মধ্যমা,অনামিকা। মৃদঙ্গ র সুরকে শ্রুতিমধুর করে নেওয়ার কাজ।এছাড়া তিনি কয়েকপ্রকার তাল ও সৃষ্টি করেন।উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খমসা সাওয়ারি, পহলওয়ান,যৎ,ফরদৌস্ত,পস্তো,কওয়ালি,আড়চৌতাল,ঝুমরা,ত্রিতাল ইত্যাদি।এসব তালের আবার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা ও বোল আছে যার সাহায্যে সুর ও লয়কে পৃথক ভাবে চেনা যায়।
বাঁয়া-তবলা ও তাল
যেমনঃ কাহারবা ৮মাত্রা আর বোল
ধা ধিন না ধিন | না তিন নানা তেটে।
ত্রিতাল ১৬ মাত্রা। বোল
ধা ধিন ধিন ধা | ধা ধিন ধিন ধা | না তিন তিন না | তেটে ধিন ধিন ধা।
এগুলার আবার তালি ও খালি আছে, তালি থেকে তাল শুরু হয়। এভাবে মৃদঙ্গ থেকে তবলার প্রচলন শুরু হয় ভারতবর্ষে।
সংস্কৃতি বিবর্তনের ধারায় সঙ্গীতের রূপও পাল্টাতে থাকে।আমির খসরুর আগে তারের বাদ্যযন্ত্র আগেও ছিল আরব, পারস্য,ভারতে। কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষে তিনি এই যন্ত্রে তিনটি তার ব্যবহার করেছিলেন আর নাম দিয়েছিলেন সেতার।
যার অর্থ সেহ অর্থাৎ তিন তার, এতে ৩টি তার আরো ১৪ টি পর্দা রয়েছে।এর আগে অবশ্য তানসেন বংশের ওস্তাদ এতে ২টি তার যুক্ত করে ৫টি করে ব্যবহার করেছিলেন।
সেতার এর মূলত ৩টি তারে মা সা পা বাঁধা থাকে।বর্তমানে ৭টি তারও ব্যবহার করা হয়। ৪ নম্বরটি থাকে সা আর বাকি ৩টি সা সা গা তে বাঁধা থাকে। সেতারের নিচের অংশ কাঠের খোল একে তবলী বলে আর এর সাথে লম্বা কাঠের দন্ডকে পটরী বলে। এর সাথে তারগুলো আটাকানো থাকে।
ভারতবর্ষে সেসময় এই ২টি যন্ত্র সেতার আর তবলা-ই হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয়। এর আগে কেবল মৃদঙ্গ বাজত গানের সাথে,কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এসে মৃদঙ্গ থেকে বাঁয়া-তবলার প্রচলন শুরু হয় আর তা এখনও সবজায়গায় প্রচলিত।
মৃদঙ্গ (Mridangam) হল ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রধান তালবাদ্য যন্ত্র, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, কರ್নাটিক সঙ্গীতে ব্যবহৃত হয়। এটি হল দ্বি-মুখী ড্রাম যা এর জটিল তাল, মৃদু ও ধ্বনিপূর্ণ স্বর, এবং বাজানোর কৌশলের জন্য বিখ্যাত।
মৃদঙ্গের গঠন:
- আকৃতি: মৃদঙ্গ একটি লম্বাটে ষড়ভুজাকৃতির কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরি, যার দুই طرفে ছাগলের, ষাঁড়ের বা মহিষের চামড়া মেটানো থাকে।
- তারের ব্যবস্থা: চামড়ার উপর লেদারের ফিতে দিয়ে টান দেওয়া হয়, যা সুর নিয়ন্ত্রণ করে। কাঠামোর চারপাশে কাঠের খুঁটি ঢোকানো থাকে, ফিতাকে আরও টান দেওয়ার জন্য।
- বাজানোর কৌশল: মৃদঙ্গ বাজানোর সময় শিল্পীরা হাত, আঙ্গুল, এবং কখনও কখনও কব্জি ব্যবহার করে। বিভিন্ন ধরনের আঘাতের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন স্বর তৈরি করেন।
মৃদঙ্গের বিশেষত্ব:
- জটিল তাল সৃষ্টি: মৃদঙ্গ বিভিন্ন তাল সৃষ্টি করতে পারে, যা কರ್নাটিক সঙ্গীতের ভিত্তি। এই তালগুলি জটিল এবং দ্রুতগতির হতে পারে, শিল্পীদের কাছ থেকে উচ্চ স্তরের দক্ষতা ਦੀ প্রয়োজন হয়।
- স্বরের বৈচিত্র্য: মৃদঙ্গ মৃদু আলতো আঘাত থেকে শুরু করে জোরে আঘাত পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের স্বর তৈরি করতে পারে। এই বৈচিত্র্যটি সঙ্গীতে নাটকীয়তা ও গভীরতা যোগ করে।
- लय ও তালের সমন্বয়: মৃদঙ্গ শুধু তাল রাখে না, বরং গायक বা বাদকদের সাথে লয় বজায় রাখতেও সাহায্য করে। এটি সঙ্গীতকে একীভূত করে এবং শ्रोতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
মৃদঙ্গের ঐতিহ্য:
- মৃদঙ্গের ইতিহাস কয়েক হাজার বছরের পুরনো। এটি প্রাচীন হিন্দু দেবতা, নটরাজ (শিব) এর ডামরু থেকে উদ্ভূত বলে বিশ্বাস করা হয়।
- মৃদঙ্গ কেবল সঙ্গীতের জন্যই না, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বাজানো হয়।
More Stories
সাপ থেকে বাঁচার দোয়া
সাপ স্বপ্ন দেখলে কি হয়
জাপানিজরা শত বছর বাঁচে