মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল
প্রতি টি কাজে মনযোগ দেয়ার জন্য আলাদা আলাদা কৌশল দরকার যাতে শত বাধা থাকেলও মনোযোগ থাকে যাকে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করা একটি ভালো অভ্যাস কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে মনোযোগ থাকে না কারণ আমাদের মন পাখির মতোই চঞ্চল তাই মনোযোগ ধরে রাখার জন্য এবং কাজের মধ্যে ডুবে থাকার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যা পর্যন্ত গণনা করা এবং পুনরাবৃত্তি করা একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যেখানে ১০০ শতাংশের মধ্যে এক শতাংশ অন্যমনস্ক হলেই সমস্ত আয়োজন বৃথা হয়ে যেতে পারে। সেইসব কাজগুলোর মধ্যে একটি হল পাথর কেটে স্লাইড তৈরি করা।
এই কাজে একটু মুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক হলে সমস্ত স্যাম্পল অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে ঘূর্ণায়মান লোহার তৈরি চক্রের ঘর্ষণে।
আমাদের জীবনে এরকম আরো অনেক সূক্ষ্ম গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যেগুলোর জন্য দরকার 100 ভাগ মনোযোগ।
আজ সকালে একটি কৌশল আবিষ্কার করলাম আমার মত যাদের মন চঞ্চল তাদের জন্য এটা কাজে লাগতে পারে।
এটাকে আমরা মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল বলতে পারি। তবে সবারই এই সব ছোট ছোট মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল গুলো জেনে রাখা ভাল।
যাদের মন চঞ্চল তাদের জন্য এই কৌশল অনেক উপকারে আসবে হয়তো । আমি আসলে কোন কাজে মনোনিবেশ করতে পারি না শতভাগ। বেশিরভাগ কাজেই আমার অমনোযোগিতা চলে আসে। আমার সর্বদা যেটা হয় তা হল, মনটা সর্বদা অন্য কিছুতে চলে যায়।
যেমন কাজ করতে গিয়ে কাজের ফাঁকে অন্য কেউ কি কথা বলেছিল সেই কথাগুলো মনে পড়ে যায় অথবা কোন অপরিচিত মানুষ তার সাথে প্রথম সাক্ষাতে কি কথা হয়েছিল সেই কথাগুলো মনে পড়তে থাকে অথবা কাউকে কি কথা বলতে হবে বা কি বলা উচিত সেই ধরনের কথাও ভাবতে থাকি। এমনই হাজার পরিকল্পনা মাথায় আসে কাজের ফাঁকে । কাজ করার সময় একসাথে এইরকম দোটানায় থাকলে কখনোই ভালো ফলাফল দেবে না ।
আজকে সকালে জাপানের প্রফেসর ল্যাবরেটরিতে গিয়ে একটি স্লাইড তৈরি করতে বলে আমাকে যদিও এটা আমার রুটিন কাজ। আমি স্লাইড তৈরি করতে গেলাম এবং বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলাম আমার কাজটি ছিল চুনাপাথর কেটে স্লাইড তৈরি করা। যারা গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত তারা জানেন পাথরে আণুবীক্ষণিক জীবের ফসিল থাকে সেগুলো দেখে বোঝার চেষ্টা করা যে প্রাগৈতিহাসিক কালের কোন পরিবেশ কি ঘটনা ঘটেছিল তা পুরুদ্ধার করাই এর প্রধান কাজ।
যাইহোক কাজের কথায় আসি। স্লাইড গ্লাস কাটার পরে এটা একটি লোহার গোলাকার ঘূর্ণায়মান চাকার উপর ঘষতে হয় যাতে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে এটা সূক্ষ্ম এবং পাতলা স্বচ্ছ আকার ধারণ করে যাতে আমরা মাইক্রোস্কোপের নিচে সমস্ত ফসিল গুলো দেখতে পারি। আমারা সে সব ফসিল আশা করেছিলাম তা হল, কোরাল, ফুসুলিনইড, স্ট্রমাটলাইট ইত্যাদি।এসবই ২৫ কোটি বছর আগের পাথর।
এভাবে লোহার ঘুর্নয়মান চাকার উপরে স্লাইডটি ঘষাঘষি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল, কারণ দুই আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে কাজ করতে হয় একটু বেশি চাপ পড়ে গেলে লোহার ঘূর্ণায়মান চাকার ঘর্ষণে সব ক্ষয় হয়ে যেতে পারে এবং এতদিনের পরিশ্রম সব বৃথা যাওয়ার উপক্রম হবে। এই কাজটি শতভাগ মনোযোগ দিয়ে করতে হয় কিন্তু যেহেতু আমার মন বড় চঞ্চল তাই শতভাগ মনোযোগ দিয়ে কাজটি করতে পারছিলাম না। প্রফেসর আমাকে বলল যে একশত ভাগের একভাগও যদি অন্যমনস্ক হওয়া যায় তবে কাজের আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না ।
আমিও এটা দেখলাম পরীক্ষা করে। এই কাজটি সমাধান করতে শতভাগ মনোযোগ ই দিতে হবে। তাই আমি অনেক চিন্তা করতে থাকলাম কি করা যায়? কিভাবে মনোযোগ শতভাগ দেওয়া যায়? অনেক চিন্তার পর একটি কৌশল মাথায় আসল। জানি না আপনাদের কাজে লাগবে কিনা?
ঘষার কাজটি চলতে থাকা অবস্থায় আমি সংখ্যা গুনতে থাকলাম যেমন ১,২,৩,৪ এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো এক থেকে ষাট পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে। এরপর আমি স্লাইডটি উঠিয়ে এর পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম ও দেখলাম। আবার গুনলাম ১-৬০ পর্যন্ত ।
এভাবে ধারাবাহিকভাবে আমি পদ্ধতিটির পুনরাবৃত্তি করতে করতে স্লাইড ঘষতে থাকলাম এবং দেখলাম যে ভালই কাজ হচ্ছে। আমি শতভাগ মনোযোগ দিতে পারছি এরপরে আমি ১ থেকে ৬০ পর্যন্ত না গুনে এক থেকে ত্রিশ পর্যন্ত গোনার পরে প্রতিবার স্লাইডটি উঠাতে থাকলাম এবং অবস্থাটা দেখলাম একটা সময় আমি লক্ষ্য করলাম যে আমার কাজে আমি শতভাগ মনোনিবেশ করতে পেরেছি। সুন্দর একটি স্লাইড করে প্রফসরের প্রশংসা পেলাম। নিজেকে নিজেই ধন্যবাদ দিলাম।
আসলে যে কোন কাজে শতভাগ মন দিতে হয়। বিশেষ করে কিছু কিছু কাজ রয়েছে যেগুলোতে শতভাগ মনোযোগ দিয়ে না করতে পারলে সেই কাজের যথাযথ ফলাফল পাওয়া যায় না। আমি উপলব্ধি করলাম যে শুধু এই কাজটাই নয় এমন আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলোতে আমরা শতভাগ মনোযোগ দিতে হয় অন্যথায় ব্যর্থ হয়ে যাই।
কিছু মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল যেমনঃ
দ্রুত গতিতে মোটর বাইক চালানো অথবা গাড়ি চালানো তে শুধু রাস্তার দিকে মনোযোগ দিতে হয়।
গবেষণাগারে স্লাইড তৈরি করতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক সংখ্যা গণনা করার পুনরাবৃত্তি কৌশল ভাল কাজে দেয়।
গানের তাল ঠিক রাখার জন্য তবলার বোল না বলে গানগুলোর তালের ছন্দ ১২৩, ৪৫৬ (বিশেষ করে দাদরা তালের জন্য) গানের কথাগুলোর পরিবর্তে এই ছন্দটা দিয়ে গান গাওয়ার অভ্যাস করলে তাল সম্বন্ধে দ্রুত সম্যক ধারনা পাওয়া যায়।
গরম চায়ের কাপ অথবা গরম দুধ অথবা গ্লাস ভর্তি শরবত অতিথিকে পরিবেশন করার সময় গ্লাস ভর্তি গরম চায়ের দিকে তাকিয়ে অথবা গরম দুধ এর গ্লাসের দিকে তাকিয়ে শরবতের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে গেলে পরিপূর্ণ গ্লাস ভর্তি অবস্থাতেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান যায়।
বিনিদ্র রজনী অনেকেরই একটি সাধারণ সমস্যা এটাকে কাটানোর জন্য অন্ধকার ঘরে হাত মুখ ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে শয়নকালে ধারাবাহিকভাবে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত গণনা অথবা ১০০ থেকে আগ পর্যন্ত গণনা অথবা নির্দিষ্ট কোন ঠাকুর দেবতার চরণে (বিধর্মীদের জন্য অন্য কোন পবিত্র কিছু) নিজেকে সমর্পিত করার দৃশ্য দেখতে দেখতে মনটাকে একটা বিষয়ে কেন্দ্রীভূত করা একটি ভালো অভ্যাস।
More Stories
শরিফার গল্প বাদঃ কি শিক্ষা পেলাম
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
আবেগ কি আমাদেরকে ব্যক্তিত্ব নির্দেশ করে