Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

গোপাল ভাঁড় এর নির্বাচিত সেরা গল্প সমূহ

Spread the love

গোপাল ভাঁড় এর নির্বাচিত সেরা গল্প সমূহ

গোপাল ভাঁড়
গোপাল ভাঁড়

গোপাল ভাঁড় এর গল্প সমূহ

চিঠি

গোপালের অল্প বয়সে বাবা মারা গিয়েছিল, তাই সে লেখাপড়া বিশেষ শিখতে পারেনি। লেখাপড়া বিশেষ কিছু না জানলেও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভাঁড় বা সভাসদ হিসেবে চারদিকে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল । শুধু পাড়া-প্রতিবেশী নয় সারা কৃষ্ণনগরের লোক তাকে সম্মান করতো। কারো কোন যুক্তি পরামর্শ দরকার হলে গোপালের কাছে আসতো । একদিন দুপুরে বসে গোপাল ভাঁড় তামাক খাচ্ছে এমন সময় তাদের পাড়ার এক বুড়ি এসে বলল ভাই গোপাল ছেলেটার অনেকদিন কোন খবর পাচ্ছি না, তাকে একখানা চিঠি লিখে দাও না।

গোপাল দেখল মহাবিপদ। এবার আমার বিদ্যা বুদ্ধি ধরা পড়ে যাবে। তাই সে বলল আজ তো আমি চিঠি লিখতে পারছিনা ঠাম্মা। বলল কেন ভাই গোপাল? মুখ বেঁকিয়ে যন্ত্রণা কাতর স্বরে গোপাল ভাঁড় বলল আমার পায়ে যে বড় ব্যথা। বুড়ি অবাক হয়ে বলল পায়ে ব্যথা তো কি হয়েছে? চিঠি তো লিখবে হাতে! গোপাল সঙ্গে সঙ্গে হেসে উত্তর দিল, হাত দিয়ে লিখব কিন্তু আমার লেখা চিঠি পড়তে পারবে না কেউ । আমাকে গিয়ে পড়ে দিয়ে আসতে হবে। তাই এই পায়ের ব্যথা নিয়ে অত দূর হেঁটে গিয়ে চিঠি পড়ে দিয়ে আসতে পারবো না তুমি অন্য কারো কাছে যাও। বুড়ি মনে কষ্ট নিয়ে চলে গেল।

বিয়ে

আগামীকাল গোপালের বিয়ে। মনের মত করে তাই সে বরের পোশাক তৈরি করিয়ে পোশাকটা বাড়িতে এনে দু-একবার পরেও দেখল। তারপর বিরক্ত হয়ে তুলে রেখে দিল । রাতে খাবার সময় গোপালের মা জিজ্ঞেস করল, কিরে গোপাল, পোশাক পছন্দ হয়েছে? তো গোপাল বলল সবই ঠিক হয়েছে মা, কিন্তু বেটা দর্জি আমার পাঞ্জাবীটা একটু বেশি লম্বা করে ফেলেছে। পরদিন সকালে গোপাল বেরিয়ে গেল কৃষ্ণনগর বাজারে। মায়ের হঠাৎ মনে পড়ে গেল, কাল রাত্রে গোপাল বলেছে তার পাঞ্জাবিটা বড় হয়েছে।

তাই সে ভাবলো একটু কেটে ছোট করে দেয়া যাক, এই ভেবে সে পাঞ্জাবির খানিকটা ঝুলি কেটে সেলাই করে রাখল। এদিকে গোপালের বোনেরা এসেছিল । দাদার বিয়েতে ।তারাও শুনেছিল দাদার পাঞ্জাবীটা বড় হয়েছে, তাই গোপালের বড় বোন কাউকে কিছু না বলে পাঞ্জাবি টা বের করে খানিকটা কেটে সেলাই করে রাখল। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ছোট বোনের মনে পড়লো দাদার পাঞ্জাবীটা বড় হয়েছে । সেও ঠিক করে দেয়া দরকার বলে মনে করল। তা না হলে দেখতে বেমানান হবে এই কথা মনে হতেই ছোটবোন গিয়ে পাঞ্জাবির ঝুল খানিকটা কেটে সেলাই করে দিল ।

এভাবে কাটতে কাটতে বেশ ছোট হয়ে গেল পাঞ্জাবীটা। বিয়ে করতে যাওয়ার সময় গোপাল পাঞ্জাবি পরতে গিয়ে অবাক! যে পাঞ্জাবি বড় ছিল, সেই পাঞ্জাবি ছোট হয়ে এমন হয়েছে যে ঝুলটা পেটের উপরে উঠে গেছে । তাড়াতাড়ি দর্জি দোকানে খবর দেয়া হলো। কিছু বলতে পারল না তখন গোপাল গিয়ে দর্জিকে রেগেমেগে বেশ কড়া কথা শুনিয়ে দিয়ে এলো। বাড়িতে এসে গোপাল সকলকে জিজ্ঞেস করতে লাগল অবশেষে জানতে পারল যে তার কথার ভুলের জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে। তখন নিরুপায় হয়ে কৃষ্ণনগরের বাজার থেকে নতুন আর একটা জামা কিনে এনে সেই জামা পরে গোপাল বিয়ে করতে গেল।

কাশি

জ্যোতিষ চর্চা করতো গোপাল। গোপালের যেমন নাম হয়েছিল ঠিক তেমনি জ্যোতিষ চর্চা করেও গোপাল ভাঁড় নাম করেছিল একদিন একজন ভদ্রলোক তার ছেলেটিকে নিয়ে গোপালের কাছে হাত দেখাতে এসেছিল। গোপাল ভাঁড় বেশ কিছুক্ষণ ধরে লোকটির হাত দুখানা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গম্ভীরভাবে বললো আপনার কাশিতে মৃত্যু হবে। বেশ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। গোপাল-জ্যোতিষীর মুখে এই কথা শুনে তারা বাড়ি চলে গেল। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই সে রক্ত বমি করে মারা গেল।

যথারীতি শ্রাদ্ধশান্তি হয়ে যাবার পর তার ছেলেটি গোপাল কে বলল আপনি যে বলেছিলেন বাবা কাশিতে মারা যাবেন? কিন্তু বাবা তো এখানে বাড়িতেই মারা গেলেন । এই কথা শুনে গোপাল বলল আমার গণনা ভুল হয়নি। তোমাদের বুঝতে ভুল হয়েছে। কাশিতে তোমার বাবার মৃত্যু হয়েছে আমি কাশ না বলে কাশিতে বলেছি এটুকু শুধু তফাৎ।

আমের আটি

গোপালকে মাঝেমাঝেই ধার করতে হতো। একবার এক মহারাজের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আজ দেবো কাল দেবো বলে এসে টাকা আর ফেরত দেয়া সম্ভব হয়নি। সেই মহাজন’ গোপালকে একদিন বাজারের মধ্যে পাকড়াও করে বলল আমার টাকাগুলো ভালই ভালই দিয়ে দাও নইলে আজ তোমায় আমি ছাড়ছি না। মহাজন দ্বারা অপমানিত হয়ে গোপাল বলল, টাকা কি দেব না বলেছি? আপনার টাকা আগামিকালই দিয়ে দেবো। কাল সকালেই আমার বাড়িতে চলে আসুন।

আগামীকালের মধ্যে আপনার টাকার ব্যবস্থা করতে না পারলে আমি আর জল স্পর্শ করবো না ।গোপালের কথা শুনে মহাজন’ ভাবলেন গোপাল যখন এত লোকের সামনে কথা দিল তখন আগামীকাল যেভাবেই হোক টাকা পরিশোধ করবেই। পরদিন ভোরে গোপালের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো । আমার টাকা দাও, মহাজনের ডাক শুনে গোপাল বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে বলল দয়াকরে বাড়ির দাওয়াই একটু বিশ্রাম নিন। আমি আপনার টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করছি। টাকা পাবে বলে নিশ্চিন্ত হয়ে গোপালের বাড়ির দাওয়ায় বসে রইলো মহাজন ।

কিছুক্ষণ পরে গোপাল আর গোপালের ছেলে বাড়ির সামনে মাঠে ৫ ফুট অন্তর অন্তর আমের আঁটি পুঁততে লাগলো। তা দেখে মহাজন’ গোপালকে জিজ্ঞেস করলো একি করছো গোপাল? আমার যে বেলা যাচ্ছে। কাজকর্ম আছে তো। গোপাল আমের আঁটি পুঁততে পুঁততে বলল দেখছেন তো আপনার টাকার ব্যবস্থা করছি? একটু বসুন না আপনার টাকার ব্যবস্থা করে তবে আজ জল গ্রহণ করব। আমের আটি পোতা শেষ হওয়ার পর গোপাল মহারাজ এর কাছে এসে দাঁড়াতেই মহাজন’ জিজ্ঞেস করল সেই থেকে তো বসিয়ে রেখেছো?

তুমি আমার টাকার কি ব্যবস্থা করলে? কথা শুনে গোপাল মুচকি হেসে বলল, এতক্ষণ ধরে তো আপনার টাকা ও সুদের ব্যবস্থা করলাম মশাই। মহাজন’ তো অবাক। তুমি তোমার আমের আঁটি পুতলে। কিন্তু এতে আমার টাকা ও সুদের কি ব্যবস্থা হল তা তো বুঝতে পারলাম না ?গোপাল বলল আমের আঁটিতে আমগাছ হবে এবং সব গুলো আমগাছে যা আম ধরবে তা তো আর কম নয় মশাই? দু বছরের আমের টাকায় আপনার সব দেনা পরিশোধ হয়ে যাবে। আপনাকে যখন কথা দিয়েছি, আজ টাকা ও সুদের ব্যবস্থা করব।

তাই ব্যবস্থা করে দিলাম। দুবছরের জন্য আমের গাছ আপনাকে দিয়ে দিলাম আর ভাবছেন কেন ধরুন টাকা আপনার বলতে গেলেই পেয়ে গেলেন ।গোপালের কথা শুনে পাওনাদার মহাজন’ হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারলো না । শেষপর্যন্ত বেচারা হেসেই ফেলল । গোপাল বলল টাকা নগদ পেয়ে গেলেন বলেই হাসি আর ধরে না যে দাদার।

বোঝা

একদিন সন্ধ্যাবেলায় কৃষ্ণনগরের রাস্তায় একজন পাহারাওয়ালা পাহারা দিচ্ছিল। নতুন পাহারাওয়ালা তাই গোপাল কে সে চিনত না। সেই সময় সেই পথ দিয়ে মাথায় এক বিরাট বোঝা নিয়ে গোপাল আসছিল। পাহারাদার তাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাথায় এত বড় বোঝায় কি আছে? গোপাল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল এতে মদ আছে। এই কথা শুনে সে বলল জানিস না, রাজার হুকুম হয়েছে কেউ মদ খেলে ও বিক্রি করলে তাকে কারাগারে বন্দি রাখা হবে।

চল রাজার কাছে , সেখানে তোর বিচার হবে । এত বড় ভারী বোঝা নিয়ে রাজবাড়ী পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তায় কোন লোক নেই যে তাকে পয়সাকড়ি দিয়ে বুঝানো যাবে। যাক ভালোই হলো পাহারাদার বেটার মাথায় বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাক । গোপাল কিছু বলছে না দেখে পাহারাদার খুব রেগে গিয়ে বোঝাটা নিজের মাথায় তুলে নিয়ে বললো, এই চল রাজবাড়ীতে তিন বছর জেলখানায় থাকবি। এই বলে রাজবাড়ির পথে চলতে থাকল পাহারাদার। গোপাল নিশ্চিন্ত মনে তার সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পরে রাজ বাড়ির কাছাকাছি এসে পাহারাওয়ালা ভাবলো আজ বাড়িতে নিয়ে গেলে তো আর আমায় কিছু লাভ হবে না তার চেয়ে একটু আড়ালে নিয়ে যদি কিছু আদায় করতে পারি সেই চেষ্টা করা যাক। এই চিন্তা করে সে অন্য রাস্তায় যেতে লাগল। তাই দেখে গোপাল তাকে বলল ওদিকে কোথায় যাচ্ছ রাজবাড়ীতো এইদিকে। পাহারাওয়ালা অবাক হয়ে বলল, তুমি রাজবাড়ী চেনো? গোপাল বলল চিনি কি আর আমাকে তো আজ রাজ বাড়িতে যেতে হবে একখানা চিঠি আছে পৌঁছে দিতে হবে।

পাহারাদার বললো কই দেখাও দেখি তোমার চিঠি গোপাল তখন তার সামনে চিঠিখানা বের করল। চিঠি দেখে পাহারাদার অবাক! চিঠিখানা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের নামে লেখা। সে রেগে বলে উঠল তুই আগে আমাকে চিঠি দেখালি না কেন ? গোপাল একগাল হেসে বলল, আগে দেখালে তুমি কি আর এই বিরাট বোঝা এতদুর ঘাড়ে করে বয়ে আনতে ? এই বলে সে পাহারাওয়ালার কাছ থেকে বোঝা নিয়ে রাজবাড়ির দিকে পা বাড়ালো যাবার সময় পাহারাদারকে উদ্দেশ্যে করে বলল, একেই বলে গোপাল, ভাগ্যবানের বোঝা বয় পাহারাওয়ালা।

ফাও

গোপাল রোজই বাজারের থলি নিয়ে হাটে বাজার করত হাতে থাকতো ছাতা। একদিন হাটে যাবার পথে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো । সে গোপালকে রসিকতা করে বলল তুমি যদি বিনে পয়সায় আলু কিনতে পারো তাহলে আমি তোমাকে 10 টাকা দেব। গোপাল বলল এই কথা। হাটে চলো তোমার সামনেই বিনা পয়সায় আলু কিনে বাড়ি ফিরব ।কাউকেই এক পয়সা দেবো না । তোমাকে কিন্তু 10 টাকা দিতে হবে। বন্ধু রাজি হলো । গোপাল হাটে গিয়ে যত আলুর দোকানদার ছিল সকলের কাছে গিয়ে বলল, ভাই আমি যদি তোমার কাছ থেকে পাঁচ সের আলু কিনি কয়টা আলু ফাও দেবে?

তখনকার দিনে আলু খুবই সস্তা ছিল একসঙ্গে পাঁচ সের আলু নেবে শুনে আলু ওয়ালা বলল তুমি এর জন্য পাঁচটা করে আলু ফাও পাবে । গোপাল ভাঁড় আর কোন কথা না বলে প্রত্যেক আলু দোকানদারের কাছ থেকে পাঁচটা করে আলু তুলে নিয়ে বলল এই হাটে আজ আলু ফাও নিয়ে গেলাম, সামনের হাটে তোমাদের সকলের কাছ থেকে পাঁচ সের করে আলু কিনব। আলুর দোকানদাররা সবাই গোপালের দিকে চেয়ে রইল। গোপাল মনের আনন্দে বিনি পয়সায় থলে ভর্তি আলু নিয়ে বাড়ি ফিরলো। বন্ধুটি তখন বাধ্য হয়ে কথা মত ১০ টাকা গোপাল কে দিল।

গোপালের আলু পোড়া খাওয়া

গোপাল ভাঁড় এর নির্বাচিত সেরা গল্প সমূহ

একবার আলুর গুদামে আগুন লেগেছিল। অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। গোপাল তখন সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল আলুর গুদাম পুড়তে দেখে কিছুক্ষণ দাঁড়ালো সেখানে। তারপর সামনে মুদির দোকান দেখতে পেয়ে একটু নুন এনে দিব্যি গুদামের পোড়া আলু খেতে লাগলো গোপাল। তারই কিছু দূরে একটি লোক মাথায় হাত দিয়ে বসেছিল। গোপাল পোড়া আলু খেতে খেতে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন কেন? লোকটি বলল আমি এই গুদামের মালিক আর আমার এ গুদামের সব আলু পুড়ে গেল।

যদিও আমার আরো চারটি আলুর গুদাম আছে। এই গুদামটা হঠাৎ আগুনে পুড়ে গিয়ে আমার খুব ক্ষতি হয়ে গেল ।গোপাল পোড়া আলু নুন দিয়ে খেতে খেতে বলল আপনার আরো চার-চারটে আলুর দাম আছে বললেন না, সেগুলো কবে পুড়বে দয়া করে বলবেন? গুদামের মালিক শুনে তার দিকে তেড়ে এল আর গোপাল সোজা দৌড়।

বাঁদর

একবার গোপাল তার বন্ধুর ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী হয়ে গিয়েছিলো । বলাবাহুল্য কনের বাড়ির অনেকেই গোপালকে চিনত । বরযাত্রীদের আদর-আপ্যায়ন এরপর কন্যা পক্ষের এক রসিক লোক গোপালের সঙ্গে রসিকতা করার লোভ সামলাতে পারল না। লোকটি হঠাৎ গোপাল কে বলল এই গোপাল তুমি দেখছি বরযাত্রী হয়ে এসেছ তা ভালো করেছো তবে কি জানো আমাদের এখানে অনেক বাঁদর আছে? বাদরের অত্যাচার এখানকার লোক অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তবে তোমার ভয় নেই কারণ তোমাকেও বাঁদরের মতোই দেখতে।

বাঁদরদের সঙ্গে তোমাকে ভালোই মানিয়ে যাবে। তোমাকে দেখলে অনেক লোকের বাঁদর দেখা হবে । তুমি কি বাঁদর দেখেছো কখনো? গোপাল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো অনেক বাঁদর দেখেছি কিন্তু আপনার মত এমন অসভ্য বাদর দেখিনি।

আঠারো মাসে বছর

একবার গোপালের খুব টাকার দরকার হলো । এক বছর পরে সুদ সমেত টাকা শোধ করবে বলে এক মহাজনের কাছে কিছু টাকার ঋণ করেছিল। সুদ একটু চড়া। দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল ।মহাজন’ বারবার গোপালকে তাগাদা দিয়ে টাকা না পেয়ে শেষে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারের নালিশ করল। নালিশ অনুযায়ী মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপাল কে দরবারে ডাকলেন । গোপাল রাজার হুকুমে দরবারে গিয়ে উপস্থিত হতেই মহারাজ সেই মহাজনের সামনে গোপালকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি এর কাছ থেকে টাকা ধার করেছ সে কথা কি সত্যি ?

গোপাল বলল হ্যাঁ মহারাজ এক বছরের মধ্যে সুদসহ টাকা শোধ করব বলেছিলাম। কিন্তু এখনো তো এক বছর শেষ হয়নি। মহারাজ রেগে গিয়ে বললেন মিথ্যে কথা বলোনা যেদিন তুমি টাকা নিয়েছো সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত 14 মাস হয়ে গেছে গোপাল মুচকি হেসে বলল মহারাজ কারো বছর শেষ হয় 12 মাসে 14 মাসে। এই মহাজন’ ভদ্রলোকের সুদের বহর দেখে আমি মনে করেছিলাম 18 মাসে বছর। গোপালের কথায় মহারাজ হেসে উঠলেন গোপালকে বিনা সুদে টাকা শোধ করে দিতে বললেন। মহাজন গলাকাটা সুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গোপাল ঋণের টাকা শোধ করে দিল।

কোলাকুলি

বিজয়া দশমীর পর দিন হিন্দুদের প্রথা অনুযায়ী গোপাল অনেকের সঙ্গে কোলাকুলি করে এমন সময় একজন গোপালের সঙ্গে কোলাকুলি করতে গিয়ে গোপালের পকেট থেকে একটা টাকা বাগিয়ে নিল। গোপাল বুঝতে পেরে লোকটির পকেট থেকে ও কিছু খুচরো পয়সা হাতিয়ে নিল । তারপর কোলাকুলি সেরে গোপাল তার সামনেই খুচরো পয়সা গুনে দেখল এক টাকা হয়েছে। তখন সে হাসতে হাসতে লোকটিকে বলল এসো ভাই আবার কুলাকুলি করে যার যার পকেটে যা ছিল তাই ফিরিয়ে দেই আমদের দুজনের পেশা যে এক তা এই কোলাকুলি থেকেই বুঝতে পেরেছি।

এ ছাড়াও গোপাল ভাঁড় এর নির্বাচিত সেরা গল্প সমূহ নিম্নে দেওয়া হলোঃ

ভোজন ও দক্ষিণা

কৃষ্ণনগরে বাজারের পাশে এক হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে হোটেল ওয়ালার সঙ্গে তার বন্ধু গল্প করছিল এমন সময় দূরে দেখা গেল বাজারের তুলে হাতে নিয়ে গোপাল বেশ খুশি বলে হেলতে-দুলতে আসছে গোপালকে দেখে হোটেলওয়ালা আর বন্ধু বলল ওই যে লোকটা আসছে ওকে পাকাতে পারবে হোটেলের নাম শুনে ছিল বটে কিন্তু তাকে চিনতো না তাই সে বলল আর এমন কি কথা আমি এখনই জব্দ করে দিচ্ছি এই কথা বলে দুই বন্ধুতে হোটেলের মধ্যে চলে গেল গোপাল এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালো সামনে রাস্তার উপর কারণ গোপালের এক বন্ধুর সেখানে আসার কথা ছিল গোপাল দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায় এদিকে হোটেলে তখন মাংস রান্না হচ্ছে বেশ সুন্দর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে

হঠাৎ হোটেলওয়ালা গোপালকে ঠকানোর জন্য বেরিয়ে বেরিয়ে বলল সেখানে দাঁড়িয়ে মাংসের গন্ধ শুঁকলেন এখন দাম টা দিন একটু চিন্তা করে বললো দেখো ভাই তোমার মাংস রান্নার গন্ধ শোকার জন্য আমি এখানে দাঁড়ায়নি এক বন্ধু আসবে বলে তাই দাঁড়িয়ে আছি রাস্তাটা তো আর তোমার নিজের সম্পত্তি নয় এটা হল সর্বসাধারণের হোটেল গরম দেখিও বলল তাতে কি হয়েছে মশাই জানেন তো গ্রামের অর্ধভোজন গন্ধ শুকলে অর্ধেক খাওয়া হয় এটা আমাদের হিন্দু শাস্ত্রের বিধান ১২০ মাংসের দাম আটানা তার অর্ধেক আপনাকে দিতে হবে।

একথা শুনে গোপাল পকেট থেকে একটা শিবের করে হোটেলের সামনে টনটন করে কয়েকবার বাজিয়ে আবার জামার পকেটে রেখে দিল হোটেলওয়ালা বলল কি হল মশাই দাম দিন গোপাল হেসে বলল অর্ধেক খাওয়া হয় তাহলেও শ্রবণে অর্ধেক দাম পাওয়া হয়েছে আমি যেমন গন্ধ শুঁকে তুমিও তেমনি পয়সার বাদ্দি শুনেছ তাহলে তোমার দামটাও মিটে গেল হোটেল সঙ্গে তর্ক বিতর্ক শুনে বিশেষত সেরকম কিছু পথচারী ইতিমধ্যে সেখানে জমায়েত হয়েছিল তারা সব শুনে হেসে উঠল বেচারা হোটেলওয়ালা উপযুক্ত জবাব শুনে হোটেলের ভেতরে চলে গেলো আসতে লাগলো।

সিংগা ফোকা

হ্যালো হনুমান কৃপণ হলে কি হবে তার স্ত্রী ছিল গোপালের সঙ্গে তার স্ত্রীর লেগেই থাকত মাঝে মাঝে বলতো আমি মারা গেলে তোমাদের যে হাড়ি হাল কি হবে এভাবে চললে এখন যা আনছি দুই হাতে রোজগার করে আর তুমি তার দিব্যি চার হাতে উড়াচ্ছ ওরাও আমি মরলে টের পাবে গোপালের স্ত্রী ও কম নয় সে বলল বটে আমাদের হারিয়ে কি হাল হবে তোমার অবর্তমানে বেশতো একবার বলেই দেখো না আমাদের মা ব্যাটার সংসার চলে কিনা তোমার বিহনে গোপাল বলল বেশ তো দেরি কিসের আমি দিন কতক গা-ঢাকা দিচ্ছি কেমন তুমিও তোমার ছেলে সংসার চালাও দেখি গোপালের স্ত্রী জবাব দিল হয়ে যাক।

পরদিন গোপালের ইস্ত্রি ছেঁড়া কাপড় পড়ে অত্যন্ত দিনোহিন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় গিয়ে হাজির হয়ে এক পাশে দাঁড়ালো মহারাজের দিকে দৃষ্টি পড়ায় তিনি ঐ লোকটিকে কোন ভদ্রলোকের ঘরের মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে বোধ হয় দুরবস্থায় পড়ে আমার সাহায্য চাইতে এসেছে মহাদেশের তখনই একজন লোক গোপালের স্ত্রীর কাছে গিয়ে তার পরিচয় জানতে চাইলেন সে জোর করে ফেলল বলল মহারাজ আমি গোপাল ভাঁড়ের বউ আমার স্বামী গত রাত্রিতে শিখিয়েছেন সিংগা এই কথা মহারাজ কে শোনাতেই তিনি আক্ষেপ করে বলে উঠলেন আহারে বড় ভালো লোক ছিল গোপাল তার হঠাৎ এই হল এরকম না না দুঃখ প্রকাশ করে খানজাহান চিকেডে কে গোপালের স্ত্রী হাতে পাঁচশত টাকা দিয়ে বললেন তারপর

গোপালের স্ত্রীর দিকে ফিরে বললেন এখন এসব নিয়ে যাও তারপর আবার দেখা হবে গোপালের আঁচলে চোখের জল মুছতে মুছতে টাকাগুলো চাদর বেঁধে মহারাজকে অনেক সাধুবাদ দিয়ে বাড়ি ফিরে এলো বাড়ি ফিরে স্বামীকে সব কথা বলল ভারগিন নি আমি এবার নিশ্চিন্তে মরতে পারবো না ঠিকই সংসার চালাতে পারবে আমার সব দিক বজায় থাকবে এদিকে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র গোপাল মরেনি সে বহাল তবিয়তে আছে শুনে ভীষণ রেগে গেলেন মহারাজ তিনি বললেন গোপালের প্রতারক এর বংশ যার যখন যেমন ইচ্ছে শেষে তখন তেমন হবে টাকাগুলো বের করে নিচ্ছে প্রতারণা করে ছেলে বললোঃ বাবা কেষ্ট পেয়েছেন টাকা চাই স্ত্রী এসে বললো আমার স্বামী স্বামী ছিনতাইআচ্ছা আমার নাম কৃষ্ণচন্দ্র দেখি ভাঁড়ের বউ কেমন করে স্বামী আর ছেলে নিয়ে সংসার কর দুজনকে আমি শুলে ছাপাবো।

গোপাল দূর থেকে মহারাজকে সদলবলে তারই বাড়ির দিকে ক্ষুব্ধ পদক্ষেপে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি একটা নিয়ে বাজাতে শুরু করল সিঙ্গার আওয়াজে পাড়ার লোক জড়ো হয়ে পরলো মহারাজ কাছে এসে হাতের চুরি দিয়ে গোপালের পাজরের একটা খোচা মেরে বললেন বলি এটা কি হচ্ছে শুনি গোপাল ভার দেখে অভিবাদন করে এক গাল হেসে বলল আগে সিঙ্গাপুর আর যাই করো এখন তোমার যাতে ভালো রকম হয় তার ব্যবস্থা করে যাব গোপাল মহারাজ আমি আর ভয় করিনা এখন বুঝেছি আমি মারা যাই আমার সঙ্গে করবে না আমার ছেলে ফন্দি-ফিকির করে ঠিক চালিয়ে নিয়ে যাবে কড়া কড়া কথা বলতে গিয়েও বলতে পারল না হেসে বললেন গুষ্টিসুদ্ধ ব্যবসা বেশ ভালোই চালিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হলেন

অনামুখো

যাদেরমুখ সকালবেলায় দেখলে সারাটা দিন খারাপ যায় তাদের অনামুখো বলে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অনামুখো দের একদম পছন্দ করতেন না রাজবাড়ীতে একদিন যাত্রাগান হওয়ায় গোপাল আর সে রাত্রে বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি ভোররাত্রে রাজবাড়ী সংলগ্ন অতিথিশালায় ঘুমিয়ে পড়েছিল পরদিন সকালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ঘুম থেকে উঠে অতিথিশালার বারান্দার দিকে তাকাতেই গোপালের সঙ্গে তার দৃষ্টি বিনিময় হলো গোপাল মহারাজ কে নমস্কার জানালো কিন্তু সেদিন দুপুরবেলা স্নান করতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণচন্দ্র হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন এবং হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ফলে তার সামনে একটি দাঁত ভেঙে গেলমহারাজ মনে করে দেখলেন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তিনি তার সবার আগে কার মুখ দেখেছেন

মনে পড়ে গেল সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে তিনি গোপালের মুখ দেখেছেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে রক্ষীদের আদেশ দিলেন গোপালকে ধরে এনে শূলে চড়াও ওর মুখ দেখে আমার দাঁত ভেঙেছে আমার কোন আপত্তি নেই বিশেষ করে যখন আদেশ দিয়েছেন কিন্তু সূর্যের আগে আমি একবার মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে চাই গোপালের বিশেষ গোপালকে বেঁধে নিয়ে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কে জিজ্ঞেস করল মহারাজ আমার অপরাধ কি বললেন তোমার অপরাধ গুরুতর তোমার মত অনামুখো দ্বিতীয়টি আর নেই সকাল ঘুম থেকে উঠে সবার আগে তোমার মুখ দেখেছিলাম তাই আজ তোমায় পড়তে হয়েছে

এবং তার ফলে আমার একটি দাঁত ভেঙ্গেছে তোমার মত অনামুখো মরনি ভালো তুমি বেঁচে থাকলে আরো বহু লোকের সর্বনাশ করবে গোপাল তখন নির্বিকার ভাবে বলল মহারাজ ঘুম থেকে উঠে আপনি সর্বপ্রথম আমার মুখ দেখেছিলেন তাই আপনি হোঁচট খেয়ে পড়েছেন আপনার একটি দাঁত ভেঙ্গেছে কিন্তু ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম আমি আপনার মুখ দেখেছিলাম তাই আজ আমাকে ওরে প্রাণের মরতে হচ্ছে আপনি রাজা এখন আপনি বিচার করে বলুন আমাদের দুজনের মধ্যে কে বেশি অনামুখো যুক্তিসংগত কথা শুনে চন্দ্র কৃষ্ণচন্দ্র গোপালের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দিলেন

শাস্তি

আগেকার দিনে যত্রতত্র মাটির বাড়ি ছিল বিশেষ করে যে ক’টি পাকা বাড়ি ছিল আঙ্গুলে গুণে তা বলা যেত আর মাটির বাড়ি ছিল বলে আগেকার দিনে চোরেরা সিঁদ কেটে চুরি করত আবার অনেক সময় চালের তালি সরিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে চুরি করে দরজা খুলে পালা তো এভাবে এক চোর গোপালের বাড়িতে চুরি করতে এসে ভীষণ বিপদে পড়ল তখন ও পাকা বাড়ি করতে পারেনি সে বাস করত মাটির ঘরে আর চালতি ছিল টালির দ্বারা আচ্ছাদিত কিন্তু মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রিয় পাত্র বলে চারদিকে গোপালের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল

এসব শুনে একসিদেন্ট চোরের ঘরে চুরি করার মতলব করল তখন প্রায় মাঝ রাত কৃষ্ণপক্ষ চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার চুপি চুপি এসে উঠল গোপালের তালে হঠাৎ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল গোপালের বউ এর ঘরের মধ্যে নামবে বলে একখানা চালিয়েছে গোপালকে ঠেলে দিয়ে আস্তে আস্তে ডেকে ঘুম ভাঙার বউ ঠিক এই সময় একদল ডাকাত গোপালের বাড়িতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করতে লাগল গোপাল সেই সুযোগে টাকা-পয়সা গয়নাগাটি যা ছিল একটা পুঁটলিতে বেঁধে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাগানে গিয়ে লুকিয়ে রইল মহাবিপদ বাড়িতে ডাকাত পড়েছে অথচ তার পালানোর পথ নেই চাল থেকে নামতেইডাকাতদের হাতে পড়বে গোপালের বহু আগে থেকেই জানতো যে চালের উপর একটা চোর বসে আছে

গোপাল তার বউকে বলে গেছে কি করতে হবে এটা এসেছে যা বেশি না করে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগল এদিকে ঢাকা দরজা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে টুকরো টুকরো করে ফেলবো তাড়াতাড়ি বল বাড়ির কর্তা কোথায়গোপালের মতো তার স্ত্রী ও বেশ বুদ্ধিমতী ছিল তাছাড়া গোপাল তাকে সব বলে দিয়েছিল তাই সে তাড়াতাড়ি ডাকাতদের বলল কর্তা তোমাদের ওই যে টালির চালিয়ে বসে আছে ওর কাছেই সিন্দুকের চাবি আছে এর বেশি আর আমি কিছু জানি না বাবা সঙ্গে সঙ্গে ঘরের টালির চালের উপর থেকে ডাকাতরা গোপাল ভেবে লোকটাকে ধরে টেনে করে নামিয়ে এনে বললো সিন্দুকের চাবি কোথায় জলদি বল নইলে তোর খবর আছে তোমাদের পায়ে পড়ি আমাকে ছেড়ে দাও এর সুরে বলল চোট্টা চোর

তখন ভয় পেয়ে ডাকাতদের পায়ে ধরে বলল মা কালীর দিব্যি বলছি আমি এ বাড়ির কেউ নই নতুন নিয়ে বাড়িতে এসেছি আমাকে ছেড়ে দাও। বাবা ডাকাতরা তার কথা বিশ্বাস না করে সিন্দুকের চাবি জন্য নির্মমভাবে তাকে প্রহার করতে লাগল ডাকাতরা যত মারে সে ততো বলে আমাকে ছেড়ে দাও বাবারা সত্যি বলছি আমি এ বাড়ির কেউ নই। সিন্দুকের চাবি কোথায় আমি জানিনা এভাবে বেশ কিছুক্ষন কেটে গেল, এদিকে গোপাল তখন সারা গ্রামের লোকজন লাঠিসোটা বর্ষা ইত্যাদি নিয়ে হৈ হৈ করতে করতে সেখানে এসে হাজির হলো।

এত লোকজন দেখে ডাকাতরা যে যেদিকে পারল প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচল কিন্তু চোর বেচারা পড়ে রইল মরার মত। তখন তার আর উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিলনা। গোপাল যদি এসে না পড়তো তাহলে চোরটাকে ডাকাতরা মেরে ফেলত। গান তখন তাকে মারতে যেতেই গোপালের বলল ওকে বাড়ির কর্তা সাজিয়ে আমরা যাত্রা ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি গোপালের বউ এর কাছে সব কথা শুনে চলে গেল সেবা-শুশ্রূষা করল চুরি করবে না বলে বাড়ি ফিরে গেল

চোর

গোপালের বউ বেশ কিছুদিন হলো ছেলে ফুলেদের নিয়ে বাপের বাড়িতে গিয়েছিল। গোপাল বাড়িতে তাই একা একদিন রাতে হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে মশারির ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে দেখল একটা চোর কেটে ঘরে ঢুকেছে। গোপাল কোনোরকম সাড়াশব্দ না দিয়ে ঘাপটি মেরে রইল। ঘরের কোণে একটা বড় জালা ভর্তি ছিল এদিক-ওদিক চেয়ে চুরি করার কিছু না পেয়ে জ্বালার কাছে গিয়ে জ্বালায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বালা ভর্তির চাল আছে।

গোপাল তখন মশারির ভিতরে ঢুকানোর ভান করে নাক ডাকতে লাগল তার গায়ে ছিল একখানা চাদর সে ঘরের মেঝেতে চাদরখানা পেতে যার কাছে গেল চাল নেবে বলে এমন সময় গোপাল চুপিচুপি হাত বাড়িয়ে চাদরখানা মশারির ভিতর টেনে নিল তাড়াতাড়ি জ্বালা থেকে চাল তুলে মেঝেতে চাদর পাতা আছে মনে করে তার উপর ঢালতে লাগল

এইভাবে বেশকিছু চাল ঢেলে চাদরের তুলে একসঙ্গে বাদদে বলে অন্ধকার হাতে লাগলো কিন্তু চাঁদ ওকে খুঁজে পেল না এমন সময় ভেতর থেকে বলে উঠলো চাদর মশারির ভেতরে আটকে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতে পারে তার হাতটা ধরে ফেললো তারপর বললো গুলো সব আমার জ্বালায় তুলে রাখ যেখানে সেটাও বোঝাও তবে ফেরত পাব চোর আর কি করবে তার কারণ ছিল খুব দামী একবারও লোকের বাড়ি থেকে চুরি করতে পারছিল না তখন গিয়ে চাদরটা দিয়ে দিল

মাছি রসগোল্লা

গোপালের বাবা গোপালের যখন ১0 বছর বয়স তখন হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যান বাবা টাকা পয়সা বা বিষয় সম্পদ কিছুই রেখে যেতে পারেন নি গোপালের মা ছেলেকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়াতে পারত না।গোপালের যখন ১৫ বছর বয়স তখন একবার মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল মামার বাড়ি যাওয়ার পথে তার ভীষণ খিদে পেয়েছিল টাকা পয়সা না থাকায় তার ইচ্ছে পূর্ণ করতে পারছিল না পেটে খিদে নিয়ে কতক্ষণ আর বলা যায় তাও আবার ভর দুপুর বেলা কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে এক তলায় গোপন গোপাল একটা মিষ্টির দোকান দেখতে পেল।

মিষ্টির দোকানে কেবলমাত্র একটি বাচ্চা ছেলে বসে ছিল মিষ্টির দোকানের মালিক দোকানের নাগোয়া বাড়িতে আহারাদির পড়ছিল বাচ্চা ছেলে দিকে একাকী দোকানে বসে থাকতে দেখে গোপাল রসগোল্লা খাওয়ার মতলব করল দোকানে ঢুকে চটকরে রসগোল্লার পাত্র ধরে গোপাল গপাগপ রসগোল্লা খেতে লাগলো বাচ্চা ছেলেটি গোপালের কান্ড-কারখানা দেখে জিজ্ঞেস করল এই তুমি কে হে বাপু বলা নেই কওয়া নেই গভীর রসগোল্লা খাচ্ছ গোপাল রসগোল্লা খেতে খেতে মুচকি হেসে বলল আমার নাম মাছি আমি রোজই খাই বিশ্বাস না হয় তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো।

বাচ্চা ছেলেটি তখন তার বাবাকে ডাকলো বাবা মাছি খাচ্ছে ছেলেটির বাবা বাড়ির ভেতর থেকে উত্তর দিল তা আগে তা খাক গে ও নিয়ে মাথা ঘামায় না গোপাল রসগোল্লা খেয়ে যখন মামার বাড়ির দিকে যাচ্ছিল তখন বাচ্চা ছেলেটি আবার তার বাবাকে ডেকে বলল বাবা মাছি রসগোল্লা খেয়ে পয়সা না দিয়ে চলে যাচ্ছে ছেলেটির বাবা বাড়ি ভিতর থেকে ঘুমের ঘরে বলল বোকা মাছিরা পয়সা পাবে কোথায় যে দেবে মাছি রোজ রোজ বিনিপয়সায় খায়।

অন্যান্য আরো গোপাল ভাঁড় এর নির্বাচিত সেরা গল্প সমূহ হলোঃ

  • গোপাল ভাঁড়ের রাজ্য রক্ষা
    গোপাল তার চটপটে মন ও বুদ্ধির মাধ্যমে একবার রাজ্যের শত্রুদের হাত থেকে রাজ্য রক্ষা করে। এই গল্পে গোপাল তার মেধা ও হুঁশিয়ারির মাধ্যমে একটি বিপদজনক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।

  • গোপাল ভাঁড়ের নতুন জামা
    গোপাল নতুন জামা কেনার জন্য কিছু মজার কাণ্ড ঘটায়। জামার দাম নিয়ে যে কৌশল সে ব্যবহার করে, তা হাস্যরস এবং শিক্ষামূলক।

  • গোপাল ভাঁড়ের বিচার
    গোপাল একটি বিচারে অংশগ্রহণ করে যেখানে সে তার কৌতুকপূর্ণ বুদ্ধি দিয়ে একটি জটিল সমস্যার সমাধান করে। এই গল্পটি তার বিচক্ষণতার একটি উদাহরণ।

  • গোপাল ভাঁড়ের তরমুজ
    একটি তরমুজ কেনার পর গোপাল তার বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে কিভাবে একটি বড় ধরনের সমস্যার সমাধান করে তা এই গল্পে বর্ণিত হয়েছে।

  • গোপাল ভাঁড়ের পিপঁড়ে
    এই গল্পে গোপাল তার স্বাভাবিক বুদ্ধি এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এক বিরক্তিকর সমস্যা সমাধান করে।

  • গোপাল ভাঁড়ের পেট খারাপ
    গোপাল তার পেট খারাপের সমস্যা নিয়ে মজার কাহিনী তৈরি করে এবং এতে তার বুদ্ধির পরিচয় মেলে।

  • গোপাল ভাঁড় ও রাজা
    রাজা গোপালকে এক বিশেষ কাজ করার জন্য নিয়োগ দেন। গোপাল কিভাবে তার হিউমার ও বুদ্ধির মাধ্যমে সেই কাজ সম্পন্ন করে তা গল্পে বর্ণিত।

এই গল্পগুলো সাধারণত হাস্যরসাত্মক এবং শিক্ষামূলক হয়, এবং বাংলার লোকসাহিত্যে গোপাল ভাঁড়ের জনপ্রিয়তা অব্যাহত রাখে।