জন্মদিনের শুভেচ্ছা
গত এক বছর থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করি মেয়ের সাথে। মেয়ের কত বায়না মেয়ে বলে পাপা জন্ম দিনে তুমি কি কিনে দিবে আমাকে? আমি বললাম তোমাকে একটা আইপাডের ড্রইং পেন কিনে দিব। আমি তখন জাপানে থাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বা ল্যাবের কাজ করার জন্য। সেখানে গিয়েছি কালচারাল ভিসা ক্যাটাগরিতে যে ভিসা ক্যাটাগরিতে কোন ধরনের আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে না। জব করা যাবে না। আমি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে এখানে মাসিক খরচ চালাব এমন টা দেখিয়েছি জাপানের ইমিগ্রেশন কে।
আসলে সেখানে গিয়েছি বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার জন্য। জাপানের বিনা পয়সায় গবেষণার কাজ করে দেয়া যায় যারা এমন কথা শুনবে তারা বলবে এটাও কি সম্ভব? কিন্তু আমি সেটাই করে দেখিয়েছি গত একটি বছর। সত্যি বলছি আমি বিনা বেতনে থিন সেকশন স্লাইড তৈরি করে দেয়া ক্লাসে অংশগ্রহণ করা, ফিল্ডে যাওয়া গবেষণার পাথর সংগ্রহে যখন যে কাজ আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে তাই করেছি।এক ডণ্ড বসে থাকিনি। এমন এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলাম কারণ বউয়ের আবদার মেটাতে গিয়ে আরও এক বছর যাতে জাপানে ছেলে মেয়েরা থাকতে পারে তাই আমাকে যে কোন মূল্যে জাপানে থাকতে হবে। সেটাই করেছি।
মেয়ের সাথে ফোনে কথা হয়। মেয়ে বলে পাপা জন্ম দিনে তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আমার আর মেয়ের বর্তমান ঠিকানার মধ্যে দূরত্ব ৯০০ কিলোমিটার। ইচ্ছা করলেই আসা যায় না। বাসে যেতে সময় লাগে ১৮ ঘণ্টা। মেয়েকে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আইপাডের পেন কিনে দিব।
জন্ম দিনের উজ্জাপন হবে অনেক ধুমধাম করে । কারণ এটাই আমার জাপানে মেয়েদের সাথে শেষ জন্মদিন পালন করা হবে। এরপর আর মেয়ের সাথে দেখা হবে না । জানি না কবে দেখা হবে। চিরদিনের জন্য দুরে চলে যেতে হবে । এমন ভাবেই আমার প্রাক্তন ডিভোর্সি স্ত্রী পরিকল্পনা করেছে। যাতে আমি আর কোনদিন মেয়েদের কাছে আসতে না পারি। অথবা কতটা সহজ বা কঠিন হোক আমার জন্য মেয়েকে দেখতে পাওয়া সেটা তার বিবেচ্য বিষয় নয়। এসব আমি অনুধাবন করেই মেয়ের মা আমার প্রাক্তন স্ত্রী কে একটা শেষ উপহার দিব ভেবে জাপানের একটা সুপার শপে গিয়ে একটা স্বর্ণের কানের দুল কিনলাম। অতি যত্ন করে । মনটা ভরে উঠল। তার পর যত বিষণ্ণতা থাকুক না কেন কিছুটা প্রশান্তি ছিল মনে যখন ঐ স্বর্ণের দুল টার দিকে তাকাতাম।
মেয়ের জন্য আইপাডের পেন কিনব বলে অনেক দোকানে খুঁজেছি । নতুন কিনতে পারবো না বলে রিইউজড শপে গিয়েছি কয়েকবার। এর মধ্যে শহর থেকে বিদায় নেয়ার পালা। আমি মেয়েকে বলে জানার চেষ্টা করেছি যে আমি কি মেয়েদের কাছে যাওয়ার অনুমতি পাবো কিনা ওরা যেখানে থাকে। মেয়ে বলল মা মনি কিছু বলে নি। প্রথমে না আসতেই বলেছিল। তবে আমি বলেছিলাম এখানে অতিরিক্ত দিন থাকার অনুমতি নাই। তাই বলেছিল এখানে এসে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না । কারণ সে এখন জাপান সরকারের কাছ থেকে টাকা সহায়তা পায় সিঙ্গেল মাদার হিসাবে। সিঙ্গেল মাদার হল যার কোন স্বামী নাই। জলজ্যান্ত স্বামীকে ইচ্ছা পূর্বক তালাক দিয়ে সিঙ্গেল মাদার হয়েছে। শুধু মাত্র জাপানে বসবার করার জন্য। পরিস্থিতি আরও অনুকূলে আনার জন্য জাপানে রিফুজি ভিসায় দরখাস্ত করা হয়। সেটাও বাকি নাই। দরখাস্ত করা হয়েছে এখন ফলাফল পাবার অপেক্ষা। এসবই আমাকে না জানিয়ে করা হয়েছে যদিও আমি জানতেও চাই না।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে মেয়েদের কাছে চলে আসলাম জন্মদিনের ১০ দিন আগেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরিতে ৫০০০০ ইয়েন বকেয়া গ্যাস ও জলের বিল পরে দিব মর্মে সেখান থেকে ছাড়া পেলাম। তারা আমার অর্থনৈতিক কষ্টের বিষয়ে অনুধাবন করেছিল। কোন মতে সাময়িক মুক্তি পেয়ে চলে আসলাম মেয়েদের কাছে।
মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে আমি মেয়ের সাথে থাকি সারাদিন বাসায় একাই কেটে যায়। ওরা স্কুলে যায় বাসায় আসে । এরপর আমার ওদেরকে নিয়ে ব্যস্ততা বাড়ে। খাওয়ানো ঘর গুছিয়ে রাখা যথা সময়ে শোবার ব্যবস্থা করা। বিকালে বাইরে যাওয়া। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ও বড় মেয়েকে নিয়ে বাইরে যাওয়া একেবারেই নিষেধ। ছোট মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে যেতে মানা নাই। বাইরে গেলে চকলেট আইসক্রিম কিনে আনি সবার জন্য।
আকিকো বাইরে কাজ করে । কোন কোন দিন ভোরে যায় রাতেও বাসায় আসে না ফোন করে বলে যে আমি আসতে পারবো না। মেয়েরা একা একা রাতে বাসায় থেকে যা ৫ বছরের মেয়ের জন্য একেবারেই উচিত নয়। জাপান সরকার বলেছিল রাতে বাসায় একা রাখা যাবে না । সব কিছু চলছে তার ইচ্ছা মত প্রচুর টাকা দরকার তাই বাচ্চারাও কষ্ট সহ্য করছে।
জন্মদিনের দুইদিন আগের ঘটনা। খুব ভোরে স্ত্রীর হুংকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় । দেখি সে আমার ছোট মেয়েকে চিৎকার করে তিরস্কার করছে এবং এখনও কেন ঘুমিয়ে আছে তাই চিৎকার করে ৫ বছরের মেয়েকে ধমাচ্ছে। আমি দেখলাম ছোট মেয়েটার মুখে ভয়ের ও আতংকের প্রতিচ্ছবি। এসহায় ও প্রতিবাদ হীন। আমি প্রতিবাদ করলাম। কেন এই ছোট মেয়েটাকে এভাবে ধমকান হচ্ছে । সে হুংকার দিয়ে আমাকে বলে তুই চুপ থাক কুত্তা।
আমি কোন মতেই চুপ থাকব না বলে প্রতি উত্তর দিলাম কেন চুপ থাকব? ছোট মেয়েটাকে তুমি এভাবে ধমকাবে ওর মনে ভয় ও আতংক। তার পর সে বলে উঠল, ওরে কুত্তা তুই আবার কথা বলিস এই বলেই সে হাতের কাছে ঘর ঝাড়ুর লাঠি দিয়েই আমাকে আঘাত করলো। আমি কোন অংশেই তার থেকে শারীরিক শক্তিতে দুর্বল নই। আমি প্রতি আঘাত করলে সেই আঘাত সইতে পারবে না । এটা আমি জানি। তবুও সর্ব সহা হয়ে সহ্য করে নিলাম। হুংকার দিলাম দ্বিতীয় বার আঘাত করলে কিন্তু ছেড়ে দেব না। সে বলল, কি করবি ? কর? আমি কিছুই করলাম না।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। সে বক বক করতেই থাকল। মেয়েটা পাশে ভয় ও আতংকে চুপ করে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আজ মেয়ের জন্ম দিন।
দশমতম জন্ম দিন। সারা দিন ঘর গোছাচ্ছি। পরিপাটি করে রাখছি যাতে সুন্দর করে বহুল প্রতীক্ষিত মেয়ের জন্ম দিনটা করতে পারি। আসলে মেয়ের জন্মদিন পালনের জন্যই আমি মেয়ের কাছে প্রাক্তন স্ত্রীর অবহেলিত ব্যবহার উপেক্ষা করে এখানে আছি। জন্ম দিনের বেলুন সাজ সজ্জার জিনিষ কিনে আনলাম। দোকানে গিয়ে দেখি আমার কাছে অনেক পয়সা । ছোটবেলায় আমরা কোমরে গ্যাঁজে নিয়ে ঘুরতাম সেই গ্যাঁজের ভিতর থাকতো পয়সা। যারা গ্যাঁজে শব্দটা নতুন শুনছে তাদের জন্য হল, এটা সুতা দিয়ে নেট এর মত করে বুনন হত। একটা পয়সা রাখার খোলা মুখ রাখা হত কিন্তু নেট হওয়ার কারণে মুখটা বন্ধ হয়ে যেত। সুতা দিয়ে গ্যাঁজের দুই মুখ কোমরের বেড় দিয়া বাঁধা থাকতো।
যাইহোক আমার পয়সার বাগে অনেক পয়সা কিন্তু সব মিলিয়ে দোকানিকে গুণে গুণে দিতে ৬৮০ জাপানি ইয়েন হল যা দিয়ে আমি ৫টি বেলুন ও একটা চকলেট কিনে আনলাম। আমার কাছে এটাই হল নগদ টাকা। বাসায় এসে মহা উৎসাহে ঘর সাজানোর জন্য প্রতিটি বেলুন গুলো দিয়ে ঘর সাজাব বলে ভাবছি। ওদের জন্য অপেক্ষা করছি। মেয়েরা এখনও স্কুল থেকে বাসায় আসেনি। বাসায় এসেই ওদের মাথায় বেলুনের তৈরি রানীর মুকুট প্লাটিকের পাইপ দিয়ে সবাই মিলে ফুলিয়ে ফুলিয়ে মাথায় পরিয়ে দিলাম ওরা অনেক আনন্দ করলো। মেয়ে দুইটা পাইপ দিয়ে বেলুন ফোলাল। ইতিমধ্যে অনলাইনে অর্ডার করা ওদের পার্টি ড্রেস চলে আসল। ওদের মা মনি অর্ডার দিয়েছিল।
সন্ধ্যায় বার্থডে পার্টি শুরু হবে। রান্নার আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যে আকিকো বাইরে গিয়েছে কিছু কিনতে। আমি শুনলাম, ইয়ুমি এসে বলছে যে বার্থডে পার্টির কেক কেনা লাগবে । আমাকেই কিনতে হবে এমন একটা কথা শুনলাম। তার অর্থ আকিকো বার্থডে কেক কিনে নাই? আমি অবাক হলাম। যাই হোক পার্টি সফল করার জন্য আমার আগ্রহ কম নয়। জাপানের সেই সুদূর সর্ব দক্ষিণের শহর থেকে এসেছি বার্থডে পার্টিতে যোগদান করতে।
মেয়ের পার্টির কেক কিনতে বাইরে বের হলাম । একটা মোমবাতি কিনব আর একটা কেক। জাপানে ৭-১১ দোকানে দিয়ে দেখি কান্ডেল রয়েছে দোকানের তাকে সাজানো । এরপর কেক না পেয়ে ভাবলাম বড় সুপার শপে যাই। পথে বের হতেই দেখি আকিকো আসছে হাতে কোকের বোতল এবং গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস বারনার। গতকাল রাতেই বিল পরিশোধ না করার জন্য গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে। বাসায় কোন রান্না বা জল গরম করার সুযোগ নাই তাই পোর্টেবল গ্যাস বারনার ই সই। আমাকে বলা হয়েছিল যে গ্যাস চুলাটা যেন পরিষ্কার করে রাখা হয়। আমি যত্ন সহকারে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রেখেছিলাম। পথে দেখা হতেই বললাম মেয়েদের জন্য কেক কিনতে হবে এবং কান্ডেল। সে বলল এওন মলে গেলেই হয়।
আমি সরাসরি ছুটে গেলাম এওন মলে।
একটা কেক আর একটা নবমতম জন্মদিনের জন্য 9 লেখা সবুজ রঙের কান্ডেল কিনে আনলাম। লাইটার আমার বাগে আছে সেটা মনে পড়ছে। কারণ কখন কখন বিরহে সিগারেট টান দিতাম সেটা মনে পড়ছে। অনেক কষ্টে তা বাদ দিয়েছি। শুধু শুধু শরীরের ক্ষতি করে কি লাভ?
বাসায় এসেই দেখি সমস্ত সাজানো গোছানো বাসাটা সব কিছু এদিক ওদিকে ছড়ানো ছিটান। বাসায় ঢুকতেই হুংকার আসল ব্লেন্ডারের ব্লেড কই। আমি বললাম কেন আছে ঐ ব্যাগে। রান্নার হাটা কুন্তি ইত্যাদি যথা স্থানে না পেয়ে সব কিছু সমস্ত বাসাময় ছড়ানো ছিটানো হয়েছে। দেখে আমারও রাগ হল। আমি বললাম তুমি কেন এগুলো ছড়িয়েছ। অনেক আজেবাজে গালি ও কথা শোনা লাগলো মিনিট ২০ ধরে, তারপর আমিও উত্তেজিত হতেই সে বটি নিয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হল। আমি অনেক সহ্য করেছি এখন সহ্য করছে আমার ছোট মেয়ে ইয়ুমি, ১২ বছরের ইউতা । আর সহ্য করব না । এখন আমাদের ডিভোর্স হয়েছে তার কোন রাইট নাই আমাকে অপমান, মারধর করার। ডিভোর্স লেটারে পরিষ্কার লেখা রয়েছে।
সে এক পর্যায়ে বলল এই বাসা থেকে নামবি। তোকে কে আসতে বলেছে এই বাসায়? আমি বললাম আইকোর থেকে তোমার অনুমতি পেয়েই এখানে এসেছি। সে তৎক্ষণাৎ আইকোকে সম্মুখে পেয়ে জেরা করে বসল। আইকো কোন উত্তর দিতে পারল না। বাবা নাকি মা কার পক্ষ নেবে। মা কখনই ছেড়ে কথা বলে না তাই অতীতে বাবাই পরাজিত হত আর বাচ্চাদের উপর জেরার চাপ কমত। কিন্তু আজ আমিও পরাজিত হতে চাইনা। তার গলার টোন যত বেশি আমিও তার থেকে এক স্কেল বাড়িয়ে উচ্চস্বরে উত্তর দিচ্ছি। বাচ্চারা ঠায় দাঁড়িয়ে। ঘুমন্ত আইকোকে সে জোর করে হাড় ধরে টেনে ঘুম থেকে টেনে উঠিয়ে জেরার সম্মুখে দাড় করিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে। আজ তার জন্ম দিন।
সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে চেয়ার , টেবিল হাতের কাছে যা পায় তাই উঁচু করে মারতে আসে আমি প্রতি রক্ষার কাজে ব্যাস্ত। আমি পালটা আঘাত করলে মুহূর্তেই ঝগড়া থেকে যায়। আমি কোন আঘাত না করে প্রতিরক্ষা করে যাচ্ছি আর আকিরাকে বলছি বাবা দেখ তোমার মা মনি কিন্তু এই নিয়ে ৫ বার আমাকে মারার জন্য উদ্যত হয়েছে। ধারাল বটি টি ছিল প্রথম উদ্যোগ। ওটা এখন আমার কব্জায়। যাতে আর আঘাত করতে না পারে। ইউতা বলছে তোমরা দুজনেই থাম। আমি থামলাম ধীরে ধীরে। সে পুলিশে ফোন দিবে বলে অনেক চিৎকার করতে লাগলো। যুদ্ধে আমার ডান হাতের মধ্য আঙ্গুলটা ব্যথা করছে আর চেয়ের আঘাতে ডান পায়ের হাঁটুর উপরে ব্যথা। যদিও এখন সমস্ত শরীরটাই ব্যথা অনুভব করছি।
একটু শান্ত হলে আমি বাইরে চলে গেলাম যাতে পরিস্থিতি আরও সান্তও হয়ে যায়। আমি দোকান থেকে ককনাট মিল্ক কিনে আনলাম। যা সে খুঁজছিল হন্যে হয়ে। আবার গেলাম পায়েস রান্নার চিনি কিনে আনতে।
বাসায় এসে দেখি পরিস্থিতি অনেক শান্তও সে সাবলীল কথা বলছে কারো সাথে।
বাসায় এসেই বল্লমা তোমাদের জন্মদিন পালন হবে ডোন্ট ওরি-
বাসার ভিতর গিয়ে দেখে মেয়ে দুইটা ঘুমাচ্ছে বাসায় জন্মদিন পালনের কোন পরিবেশ দেখছি না। ওদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে জন্মদিনের কেক কাঁটার কথা বলতে বলতে ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওরা ঘুমে অচেতন।
আমি ভাবছি এতো আয়োজন সব বৃথা হয়ে যাবে? আমিই উদ্যোগ নিয়ে বক্স থেকে কেক বের করে রেডি করলাম কিন্তু ওরা তখনও ঘুমাচ্ছে । ওদের মা মনি শুয়ে ফোনে কথা বলছে। আমিই আবার বলতে চেষ্টা করলাম যে জন্মদিন কি হবে না?
ইউতা বলল উত্তর জোগাড় করে আমাকে বলল যে, সকালে।
আমি কয়েক বার ওদের ঘুম থেকে ওঠানর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।
এক পর্যায়ে আমি রাতের খাবার খেয়ে আইকোর জন্য খাবার রেডি করছি হটাৎ রুমের লাইট অন করতেই উচ্চ স্বরে লাইট নেভানর অর্ডার আসল। আমি বললাম আস্তে কথা বল আমি আইকোর জন্য খাবার রেডি করছি। তখন সে আমাকে আজে বাজে ভাবে কিছু কথা শোনাতেই আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো তার কথা তে। তারপর সে পুলিশ ডাকবে বলে হুংকার দিল যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হল। আমি বললাম তুমি আমার পিছনে লেগেছ আমিও তোমার পিছনে লাগব। যদিও এটা আমার মনের কথা নয়, কথার কথা। তার ক্ষতি করলে ছেলে মেয়েদেরই ক্ষতি হবে। তা এখন পর্যন্ত কোন প্রতিরোধ করিনি তার নিরাপদ জাপান প্রবাসে যা হবে ভবিষ্যতে সুন্দর ও সুখী।
সে তখন উত্তেজিত হয়ে আমার চাকরি খেতে ফেলবে বলে হুশিয়ারি দিল। তারপর বাংলাদেশে আমার সম্মুখেই একজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিকে ফোন দিল। ইচ্ছা মত কিছু মিথ্যা বানোয়াট গল্প ফেঁদে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো যে আমি তার গায়ে প্রতিদিন মারধর করি। আমি তাকে শারীরিক মানসিক অনেক যন্ত্রণা দিচ্ছি। যত মিথ্যা অভিযোগ দিকনা কেন কোন বিচক্ষণ মানুষ সব অভিযোগ যাচাই করে দেখে বিশ্বাস করার পূর্বে। আমি জানি তার প্রতিটি কথার সঠিক জবাব আমার কাছে রয়েছে কারণ আমি ভিকটিম।
আমি মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প শুনতে শুনতে বার্থডে বেবি কে ঘুম থেকে উঠিয়ে চিংড়ি মাছের মালাইকারি দিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছি আর হাসছি মৃদু মৃদু। মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো তুমি হাসছ কেন আমি বলল তোমার মা মনি যে ভাবে কান্না করতে করতে মিথ্যা বলছে তাই দেখে ও শুনে হাসি পাচ্ছে মৃদু মৃদু। যদিও এই মিথ্যা অভিযোগ হোক আর সত্য হোক এর একটা প্রভাব আমার উপর আসবেই তা ভেবে চিন্তিত ও হচ্ছি। যাকে এনেছিলাম বন্ধু ও স্ত্রী হিসাবে সেই আজ আমার শত্রু। প্রিয়জন যখন শত্রু হয়ে যায় তা হয় ভয়ংকর।
টেবিলের উপর জন্মদিনের কেক সাজানো রয়েছে। অতি আদরের মেয়ের জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদের জন্য সেই কেক আর কাঁটা হয়নি।
গল্প; জন্মদিনের শুভেচ্ছা
লেখক; রনাঙ্গ
More Stories
ধনী হওয়ার উপায় 2024
প্রেজেন্টেশন টিপস আমি যা মেনে চলি
ভালবাসা নিয়ে কিছু কথাঃ উপলদ্ধি