ধনী হওয়ার উপায়
দক্ষ পেশাদার চাকুরীজীবী কেন ধনী হতে পারে না?
দক্ষ পেশাদার বেশিরভাগ চাকুরীজীবী জীবনে অঢেল ধনসম্পত্তির মালিক হতে পারেনা। প্রশ্ন হতে পারে কেন? আমরা এই বিষয় নিয়ে আজকের কথা বলব। ধনী হওয়ার উপায় কি?
যারা পেশাগতভাবে খুবই দক্ষ এবং নিষ্ঠাবান চাকরিজীবী বেশিরভাগ সময়েই চাকুরিতে সময় ব্যয় করে। প্রতিদিন অফিসে যায় বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি ফিরে সংসারের দেখাশুনা কাজকর্ম সন্তানের সময় দেয়া চায়ের স্টলে আড্ডা দেয়া এসব করে সময় কাটায়।পরদিন সকালে আবার অফিসে যায়।
এটাই তাদের জীবন। তারা অফিসে দক্ষ একজন কর্মী হলেও ব্যাক্তি জীবনে অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। এর কতগুলো কারণ রয়েছে। অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে চাইলে শুধু বেতনের পয়সা দিয়ে হবে না। আপনাকে আলাদাভাবে অর্থ লগ্নী করতে হবে অথবা ব্যবসা করতে হবে।
একটি কথা আছে টাকায় টাকা আনে। আপনার বেতনের টাকা আপনার লিভিং সাবসিস্টেন্স এর জন্য। জীবন চলার জন্য সংসারিক খরচ মেটানোর জন্য। অঢেল সম্পত্তি অর্জনের জন্য আপনাকে ব্যবসায়িক চিন্তা অথবা রিয়েল স্টেট বিজনেসে ইনভেস্ট করতে হবে। সর্বোপরি আপনার নিজের উপর অর্থ ব্যয় করতে হবে। দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
যারা গরীব থাকে তারা জীবনে কখনো ঝুঁকি নিতে জানে না। বেশিরভাগ গরিব থাকা মানুষকে প্রশ্ন করা হলে তারা উত্তর দিবে তারা জীবনে কখনো অর্থ বা টাকা পয়সা হারানোর ঝুঁকি নেয়নি। যারা জীবনে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছে তারা ঝুঁকি নিতে জানে। ঝুঁকি নিতে তারা কখনো ভয় করে না। যেকোনো অর্থনৈতিক ঝুঁকি আপনার জীবনের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে পারে। ধনী হওয়ার উপায় তারা জানে না ।
ব্যর্থতা ছাড়া যেমন সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। শিশুরা যখন প্রথম হাঁটতে শেখে তখন আছাড় খায়, ঠিক তেমনি সম্পত্তির মালিক হতে চাইলে আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে এবং হারতে জানতে হবে। হেরে যাওয়াকে ভয় পেলে চলবে না। হেরে যাওয়ার সংখ্যা কিভাবে কমানো যায়, সফলতা কিভাবে বাড়ানো যায় তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যারা ঝুঁকি নিয়েছে তারাই সফল হয়েছে। এটাই ধনী হাওয়ার উপায়।
বেশিরভাগ চাকুরীজীবী তারা জীবনে ঝুঁকি নিতে চায় না। বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে যেমন রিয়েল স্টেট বিজনেস অথবা যেকোনো ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়া। আপনাকে মনে রাখতে হবে জীবনে অঢেল সম্পত্তির মালিক হতে চাইলে ধনী হাওয়ার উপায় টি অবশ্যই আপনাকে মেনে চলতে হবে। একটি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে হবে । ধনী হতে চাইলে অবশ্যই একটি ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে হবে।
ধনী হওয়ার সেরা উপায় হল নিজের উপর ইনভেস্ট করতে হবে। সময় দিতে হবে এবং যেকোনো একটি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনার পরিচিত যারা সফল হয়েছে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন। তারা কিভাবে সফল হয়েছে তাদের থেকে জ্ঞান অর্জন করুন। তাদের পরামর্শ মেনে চলুন এবং তাদের মত করে কাজ করুন। সফল ব্যক্তিরাই পারে আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিতে। মনে রাখবেন সরকারি চাকরি অথবা বেসরকারি চাকরি যাই থাকুক না কেন আপনাকে জীবনে অঢেল সম্পত্তির মালিক করতে পারবেনা। যদি আপনি নিজেকে আরো বেশি দক্ষ ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে সম্পৃক্ত না করেন নিজেকে। হতে পারে ব্যবসা, হতে পারে কোন সম্পত্তি ক্রয় করে রাখা যেমন জমি অথবা কোন প্রপার্টি।
মনে রাখবেন আপনার নির্মিত শখের বাড়ি বা গাড়ি কিন্তু আপনার সম্পত্তি নয় এটা আপনার খরচের খাত। বাড়ি বা গাড়ি থেকে আপনার কোন অর্থনৈতিক উন্নতি আসবেনা বরং এটা আপনার খরচের খাত। তাই এমন কোন খাতে অর্থ লগ্নী করুন যেখানে আপনার প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন, যেমন জমি ক্রয় করে রাখা অথবা কোন স্টক ব্যবসা লগ্নী করা।
যারা গরিব তারা কখনো ঝুঁকে নেয় না। ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। ভয় তাদের জীবনকে সাধারণ মানের করে তোলে। তারা জীবনভর ভয় নিয়েই থাকে এবং সাধারণ মানের জীবন যাপন করে। ধনী ব্যক্তিরা কখনোই ঝুঁকি নিতে পিছপা হন না। একবার ঝুঁকি নিয়ে হেরে গেলে তারা দ্বিতীয়বার ঝুঁকিকে জয় করার চেষ্টা করে। এভাবেই উন্নতি সাধিত হয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় বা ধনী হওয়ার যায়। আপনার চাকুরী আপনাকে কখনোই সম্পত্তি দেবে না এটা মাথায় রাখতে হবে সর্বদা। আপনার চাকরি আপনার দৈনন্দিন সাংসারিক খরচ খরচার জন্য, ব্যয়ভার মেটাতে পারে কিন্তু অঢেল সম্পত্তি দিতে পারবে না যদি না আপনি আলাদাভাবে অর্থলোগ্ন করেন।
নিজেকে দক্ষ করে তুলুন, প্রচুর বই পড়ুন, অর্থনৈতিকভাবে কিভাবে মুনাফা অর্জন করা যায় সে সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করুন। স্টক বিজনেস যারা পছন্দ করে তারা স্টক বিজনেস করতে পারে। বর্তমানে প্যাসিভ ইনকাম করার ব্যবস্থা রয়েছে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য যারা কোন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে তারা ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করতে পারে অবসর সময়ে। তবে অর্থনৈতিকভাবে মুনাফা লাভের জন্য দ্রুততম উপায় হল যে কোন এসেট ক্রয় করা অথবা স্টক বিজনেস করা এসব ই ধনী হওয়ার উপায়।
আমরা জীবনে ইঁদুর দৌড়ে দৌড়াতে পারি না কারণ প্রাত্যহিক জীবনের বিদ্যুৎ বিল জলের বিল গ্যাসের বিল এবং সাধারণ গ্রোসারী সামগ্রী ক্রয় করার জন্য আমরা চাকুরীর অর্থ ব্যয় করে থাকি। বছর শেষে সরকারি ট্যাক্স প্রদান করা এবং দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণের জন্যই আমাদের সরকারি চাকরি অথবা বেসরকারি চাকরির বেতন নির্ধারিত হয় কিন্তু এই ইদুর দৌড়ে আমরা এগোতে পারবো না। সারা মাস কঠোর পরিশ্রম করি আমরা বেতনের কিছু টাকা পাওয়ার জন্য। এটা একটা চক্রাকারে আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে সারা জীবন ধনী হওয়ার বড় অন্তরায়।
ইঁদুর দৌড়ে দৌড়ায় সাধারনত গরিব নিম্নশ্রেণী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকগন। সমাজে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর নাগরিকগণ কিন্তু অন্যভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সামগ্রিক বিষয়ে তারা ইঁদুর দৌড়ে দৌড়াতে চান না। ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা থেকে তারা ভিন্ন পথে চিন্তা করে।
সমাজে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে হয়ত সবাই বলবে এটাই একমাত্র ধনী হওয়ার উপায়ঃ
⇒ স্কুলে যাও
⇒ কঠোর ভাবে পড়াশুনা কর
⇒ সুন্দর একটি চাকুরি পাও
⇒ বিয়ে কর
⇒ জীবন হবে সুন্দর ও সুখী।
সমাজের যারা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গিয়েছেন তারা কিন্তু এই সামাজিক ধারণার সাথে একমত নন। তারা চলেছে ভিন্ন পথে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাদেরকে অঢেল সম্পত্তির মালিক করে দিতে পারে না। আপনি ইস্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনে মেধাবি ছাত্র-ছাত্রী হতে পারেন কিন্তু এই মেধা আপনাকে অঢেল সম্পত্তির মালিক করতে পারবে না। আপনি যদি র্যাট রেস বা ইদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে না আসেন তবে আপনি সারা জীবন গরিব থেকে যাবেন।
আপনি কি জানেন গরিব মানুষ আরো গরিব হচ্ছে মধ্যবিত্তরা ঋণের দায়ে জর্জরিত, উচ্চবিত্তরা আরো বেশি অর্থবিত্ত হচ্ছে অর্থ কামাই করছে?
জীবনে যারা বড়লোক হতে চায় তাদের অবশ্যই যে কোন অ্যাসেট ক্রয় করতে হবে। অ্যাসেট এবং লাইয়াবিলিটি দুইটা আলাদা জিনিস। সম্পত্তি বা এসেট হল আপনার ক্রয়-কৃত জমি যা থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব অন্যদিকে আপনার সুন্দর বাড়ি এবং গাড়ি হল লাইবেলিটি যা আপনার খরচের একটি বড় খাত। যা থেকে আপনার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্ভব নয়।
ধনী হওয়ার উপায়ঃ চাকুরীর পাশাপাশি আপনি সম্পত্তি ক্রয় করুন এবং তাতে বিনিয়োগ করুন ।
গতানুগতিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাদেরকে অর্থনৈতিক শিক্ষা দেয় না কিভাবে জীবনে সম্পত্তির মালিক হওয়া যায় তার শিক্ষা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাই না অথবা আমাদের শিক্ষাজীবনের কারিকুলাম থেকেও পাই না। এই শিক্ষা আমাদেরকে নিজেদের অর্জন করে নিতে হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাদের বিনিয়োগ করা বা ক্রেডিট কার্ড, লোন বা অর্থনৈতিক মুক্তির উপায়, বা ধনী হাওয়ার উপায়, কখনোই শিক্ষা দেয় না সমাজ ব্যবস্থাও আমাদেরকে এগুলোর শিক্ষা দেয় না।
ধনী হওয়ার উপায় আমাদের নিজেদেরকেই অর্জন করে নিতে হয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে।
তাই আমাদেরকে নিজেদের প্রতি বিনিয়োগ করতে হবে। যেকোনো দক্ষতা অর্জন করে, হতে পারে যেকোনো ব্যবসা সম্পর্কিত অথবা স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করার দক্ষতা। যে কেউ যেকোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারে নিজের পছন্দ এবং ইচ্ছা অনুসারে।
অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের জন্য নিজেকে আরো বেশি যোগ্য করে তোলার কোন বিকল্প নেই। আপনাকে একজন প্রতিষ্ঠিত মেন্টর ধরতে হবে, তার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে কিভাবে সে সফলতা পেয়েছে। আপনার ইচ্ছাই আপনাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে ।
অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি লাভের জন্য অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে যেকোনো ধরনের বিনিয়োগে ঝুঁকি গ্রহণ করা শিখতে হবে। চাকুরী করে আপনি সাধারণভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়া অসম্ভব। এটাই হল ধনী হাওয়ার উপায়।
More Stories
গল্পঃ অতৃপ্ত জন্মদিনের শুভেচ্ছা
প্রেজেন্টেশন টিপস আমি যা মেনে চলি
ভালবাসা নিয়ে কিছু কথাঃ উপলদ্ধি