Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

Genocide ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ – ধারাবাহিক পর্ব -২

Spread the love

Genocide ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ধারাবাহিক পর্ব-৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশেষত গণহত্যার Genocide শুধু একটি কারণ হতে পারে না এর রয়েছে অনেক দিনের নিষ্পেষণ নিপীড়ন বৈষম্য ও অত্যাচার যার ফলে বাংলাদেশের মানুষ এবার শেষ বারের মত গরজে উঠেছে। কিছু নির্দিষ্ট অতীতের ঘটনা রয়েছে যেমন; ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন ও ১৯৫৬ সালের প্রথম সংবিধান, ১৯৫৮ সালের মার্শাল আইন, ১৯৬২ সংবিধান, ১৯৬৯ সালের গন অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের ইয়াহিয়া মুজিব আলোচনা।

প্রতিটি ঘটনার একটি নিজেস্ব ফলাফল, বৈষম্য  ও তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৪০ সালের সর্ব ভারতীয় মুসলিম লীগ লাহোর কনফারেন্স এর মাধ্যমে একটি স্বাধীন দেশ তৈরির যে ভিত্তি ছিল যেটা লঙ্ঘন করে। সেখানে বলা হয় মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ গুলোকে আলাদা আলাদা স্বাধীন প্রদেশ হিসাবে ভাগ করা হবে। তাই ১৯৪৭ সালের পাকিস্তানের সৃষ্টি, ঐ ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব কে লঙ্ঘন করে। ১২ মিলিয়ন হিন্দু জন্য সংখ্যা নিয়ে পূর্ব বাংলার জনসংখ্যা ছিল ৭৫ মিলিয়ন তবু ও তারা (পূর্ব বাংলা) পশ্চিম পাকিস্থানের কর্তৃত্ব মেনে নিয়েছিল।

আর এসময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়ই জাতীয় এসেম্বলি তে  সমান ক্ষমতার অধিকারী হবে বলে প্রস্তাবে সম্মত হয়। দু দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন ও সমান হবে। ঘটনাক্রমে সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে। দু দেশের মধ্যে বৈষম্য আর ঘনীভূত হতে থাকে যখনই ১৯৪৮ সালে মি জিন্নাহ ঘোষণা করেন যে উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। এখানে উল্লেখ্য যে , সমস্ত পাকিস্তানে মাত্র ৩.৬৫ % উর্দুতে কথা  বলত, পাঞ্জাবি ভাষায় ২৯.০২ % এবং ৫৫.৪৮ % বাংলায় কথা বলত।

১৯৪৮ এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলার  রাজনীতিতে একটা গতি সৃষ্টি করে। এর ফলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলা ৯৭% ভোট পায়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত যদিও পাকিস্তান সরকার সাংবিধানিক ভাবে চলেছে তবু বছরে ৩০ দিনের বেশি অধিবেশন বসে নি। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান এসে  মার্শাল আইন জারি করে এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বলবত থাকে। আর এই সময়ের মধ্যে দুই মুসলিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক এমন  খারাপ পর্যায়ে পৌছায় যেন মনে হয় পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হয়ে নিষ্পেষিত।

এর ফলে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৬ সালের আন্দোলন, এবং ১৯৬৯ সালের গন অভ্যুত্থান হয়েছিল। আইয়ুব খানের এই শাসন পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সাংবিধানিক গণতন্ত্র ছাড়া দু দেশের অস্থিরতা নির্মূল হবে না । জেনারেল ইয়াহিয়া খান এসে ঘোষণা করেন জনপ্রিয় কোন নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং তখন ই মার্শাল আইন উঠিয়ে নেয়া হবে।

জেনারেল ইয়াহিয়া আরও কিছু ঘোষণা দেন যেমন, সংসদীয় পদ্ধতির ফেডারেল গভারমেন্ট, নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন করা, তিনি আরও বলেন সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্থান, পূর্ব পাকিস্তান কে আলাদা স্বাধীন প্রদেশে করা হবে। পরবর্তীতে সব বাদ দিয়ে ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট চালু করা হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া তার ইচ্ছা মত সমস্ত ক্ষমতা মালিক বনে যান।

আর এভাবেই জেনারেল ইয়াহিয়া খান আওয়ামীলীগ এর শেখ মুজিবের দেয়া ৬ দফা সরাসরি ভঙ্গ করেন। যদিও শেখ মুজিবের ৬ দফা ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবর সাথে সঙ্গতি ছিল তবুও শেখ মুজিব কে কিছু করার ছিল না যেহেতু ইয়াহিয়া অগণতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠান ছিল। 

Genocide2

 ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ১৭,  ১৯৭১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩১৩ সদস্যের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৬৯ টি মধ্যে ১৬৭ টি  পেয়ে জাতীয় এসেম্বলি তে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এবং পূর্ব পাকিস্তান এ ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসন পেয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় এসেম্বলি র ঘোষণা দেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান সেটা স্থগিত করেন।  মুজিব সমস্ত ঢাকা শহরে হরতালের ডাক দেন। পূর্ব বাংলার জনপ্রিয় সরকার শেখ মুজিব ও ভাইস অ্যাডমিরাল SM আহসান কে পদচ্যুত করা হয়।। বিভিন্ন জায়গায় কার্ফু জারি হল ও সেনা দল মাঠে নেমে পড়ল। শেখ মুজিব ৩ মার্চ থেকে একটি অসহিংস অসহযোগ আন্দোলনের  ডাক দেন। মার্চের ৫ তারিখে আওয়ামীলীগের ৩০০ জন নেতা কর্মী কে হত্যা করা হয়। মার্চের ৭ তারিখ ১৯৭১ শেখ মুজিব তার বিখ্যাত ৭ই মার্চের ভাষণ দেন রেস কোর্স মাঠে।

ইস্ট বেঙ্গল রাইফেলের সদস্যরা আওয়ামীলীগের কোন সমর্থকের উপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে সেদিন থেকে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান বিচারকগন, টিক্কা খানের নামে শপথ নিতে অস্বীকার করে।  মার্চের ১৫ তারিখে মুজিব ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বতন্ত্রতা।  এর মধ্যে ভুট্টো ও ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন  মুজিবের সাথে আলোচনার জন্য। একই সাথে বিপুল পরিমাণ সেনা বাহিনী রাতের অন্ধকারে পূর্ব বাংলায় আনা হয় গনহত্যার Genocide পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য।

মুজিব সরল বিশ্বাসে ভেবেছিল ইয়াহিয়া হয়ত ক্ষমতা হস্তান্তর করতে দেবেন। ইয়াহিয়া ছলনার আশ্রয় নিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গের এক নিষ্ঠুর উদাহরণ রেখে গেছেন। শেখ মুজিবের নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানে সমান্তরালে দুইটা সরকারের শাসন চলেছে । ১৫ মার্চ সমস্ত কর আদায় হয়েছে আওয়ামীলীগের নামে। এই সুযোগে সমস্ত মার্চ মাস জুড়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ভারী অস্ত্র ও সেনা সদস্য মজুত করতে কাজে লাগিয়েছে। মার্চের ১৬ মুজিব আবার ঘোষণা করেন প্রতিটি বাড়িতে যেন এক একটি ঘাঁটি হয়।   মার্চের ২৩ তারিখ একটি স্মরণীয় দিন। 

বাংলাদেশে গণহত্যা Genocide শুরুর নেপথ্যে

আওয়ামীলীগের কি ভুল ছিল?

আওয়ামীলীগ যদিও সাংগঠনিক দিক থেকে বৃহৎ ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত ইয়াহিয়া খানের কুটিল ষড়যন্ত্র ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। গনহত্যার Genocide পরিকল্পনা ২৫ মার্চের অনেক আগেই করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ ছিল সম্পূর্ণ অন্ধকারে। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পেরে ছিলেন যে কেন ইয়াহিয়া খান কাল ক্ষেপণ  করছেন বিভিন্ন আলোচনার নাম করে।

এবং এর মধ্যে সেনা বাহিনীর দ্বারা একটা বড় হত্যা যজ্ঞর পরিকল্পনা করছেন। এটা আওয়ামীলীগের নিসেন্দেহে একটা রাজনৈতিক বিপর্যয় বিশেষত বিপুল ভাবে নির্বাচনে জয়ী হবার পর পরই।  যদি আওয়ামীলীগ সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারত তাহলে হয়ত বহু মানুষের জীবন রক্ষা করা যেত।

জেনারেল ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা সিন্দুকে তালা বদ্ধ কোন অজ্ঞাত প্লান ছিল না। দৃশ্যত দেখা গিয়েছে যে, ১ মার্চের কিছু পূর্বে , ট্যাঙ্ক  দক্ষিণে, রংপুরে পাঠান হয়েছে,  পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার বিভিন্ন ব্যবসায়ী দের সাথে করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেনা ঘাঁটি বৃদ্ধি করতে থাকে  যা চলেছিল ২৫ মার্চ এর ইয়াহিয়া-ভুট্টো- মুজিব আলোচনা পর্যন্ত। সেনা বাহিনী সিভিল পোশাকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে করে শ্রীলংকা হয়ে পূর্ব বাংলায় ঢুকেছে। C-130 ফ্লাইটে করে আগ্নেয়াস্ত্র ঢাকায় আনা হয়েছে পাকিস্তান থেকে।

ধারনা করা হয় যে মার্চের ১ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত একটি পূর্ণ সেনাবাহিনী ও রসদ পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকেছে। এ জন্য বিমান বন্দরে কড়া নিরাপত্তা ও বিশেষ বাহিনীর দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। ১৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান,  শেখ মুজিবের সাথে বন্ধুত্ব সূচক আলোচনা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে স্বীকার করেন। শেখ মুজিব এতে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যা ছিল ৬ দফা র ভিত্তিতে। কিন্তু তার সব ই ছিল  মিথ্যার মোড়কে ঢাকা। শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনার ভিত্তিতে শাসন তন্ত্র দেবার কথা বলেন এবং আলোচনায় বসেন তখন ইয়াহিয়া প্রস্তাব করেন ভুট্টো কে কোয়ালিশন সরকারে রাখতে।

কিন্তু অনেকে বাধা দেন এই বলে যে আওয়ামীলীগ সমস্ত পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল তাই শুধু একটি ই দল থাকবে সরকার গঠনে। জেনারেল ইয়াহিয়া ২৬ মার্চ এক বেতার ভাষণে কেন তিনি সেনা বাহিনী দিয়ে হত্যা যজ্ঞ Genocide চালিয়েছে তা পরিষ্কার করে বলেছেন। সেখানে তিনি পাকিস্তানে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অবৈধ ঘোষণা করেন এমনকি আওয়ামীলীগ কেও। এবং ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে মিলিটারিকে বলেন দেশের সার্বভৌম রক্ষার জন্য যে কোন উপায়ে।

২৫ মার্চ রাত ১১ টা, সব কিছু প্রস্তুত। সৈন্যরা শহরের নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ইয়াহিয়া, আওয়ামীলীগকে কোন রকম সতর্ক ঘোষণা দেয়নি, কোন কার্ফু জারি করা হয়নি, অতর্কিত রাতের আধারে মেশিন গান আর্টিলারি, ট্যাঙ্ক গুলি বর্ষণ করছে সর্বাত্মক ধ্বংস করার জন্য। সকালে জেনারেল টিক্কা খান মার্শাল আইন জারি করেন। বহু নারী, শিশু, নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছ। ঢাকা শহর পরিণত হয়েছে কসাইখানা। টিক্কা খান কে গণহত্যার Genocide দায়িত্ব দিয়ে, ইয়াহিয়া খান ২৫ রাতেই ঢাকা ত্যাগ করেন।

এটা মোটা মুটি সবাই জানে যে আওয়ামীলীগের কোন রকমের সামরিক প্রস্তুতিই ছিল না এবং গেরিলা বাহিনী তৈরির জন্য কোন ভাল কোন রসদ ই ছিল না।  মুক্তি বাহিনী প্রাণপণে যুদ্ধে করে দুর্বল অস্ত্র নিয়ে। গেরিলা বাহিনী বাংলাদেশের চালনা ও চট্টগ্রামে ৭০ জন গেরিলা সদস্যের শহীদের বিনিময়ে ৪৫০ জন পাকিস্তানি আর্মিকে হত্যা করে। সাতক্ষীরাতে ২০ জনের বিনিময়ে ৩০০ জন পাক আর্মি খতম করা হয়।

গেরিলারা রাইফেল, মেশিন গান, হাত- গ্রেনেড মর্টার ব্যবহার করতো। একটা সময় ইন্ডিয়া সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। এতে মুক্তি বাহিনী উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হয়। ইন্ডিয়া যথাযথ কারণ খুঁজে পায় পাকিস্তানি আর্মিদের কে আক্রমণ করার যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙ্গালিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যদিও সমালোচনার ক্ষেত্রে বলবে যে ইন্ডিয়া কেন যুদ্ধে আসল তবে পাকিস্তানিদের অতিরিক্ত নির্দয়তা দেখে কোন প্রতিবেশী দেশ চুপ করে হত্যা যজ্ঞ উপভোগ করতে পারে না।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে গণহত্যা Genocide শুরুর নেপথ্যে