Genocide ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ধারাবাহিক পর্ব-৪
ইউএস কর্তৃক প্রদেয় M24 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সহ একদল মিলিটারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি তে ঘাঁটি স্থাপন করে 25 মার্চ রাত 11 টায়।সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং ইকবাল হল বর্তমানে যার নাম জহিরুল হক হল এই সব এলাকা ঘন ধোঁয়ায় মেঘাচ্ছন্ন ছিল গোলাবারুদের ইকবাল হলের একটা অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা সাংবাদিকগণ এটা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে মার্চ মাসের 30 তারিখ দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশ করেন কমপক্ষে 200 ছাত্র-ছাত্রী হত্যা করা হয়েছিল ।
পড়ুন Genocide-২। ইকবাল হলে এবং তাদের রুমগুলো মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করা হয়েছিল দুইদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তাদের মরদেহগুলো প্রজ্বলিত সামনেই পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে কিছু কিছু মরদেহ পাশের লেক এ ভাসতে দেখা যায়। 7 জন শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে ওইখানকার আবাসিক ভবনে এবং বারটি পরিবারকে তারা গুলি করে নিশ্চিহ্ন করেছে মিলিটারিরা অনেক মৃতদেহ কে সরিয়ে ফেলে ছিল কিন্তু 30 টি মৃতদেহ রক্তের চিহ্ন সহ ইকবাল হলের বারান্দায় তখনো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল।
অন্য একটা হলে মৃতদেহগুলোকে সৈন্যরা কবর দিয়েছিল একটা গণ কবর খুঁড়ে ভারী ট্যাংকের মাধ্যমে পিষ্ট করে। পাক সেনারা নিকটেই একটা বাজারে বিভিন্ন দোকানে আক্রমণ করে এবং ঘুমন্ত দোকানি দের হত্যা করে দুইদিন পরেও দেখা যায় সেইসব এলাকায় মানুষ গুলো পড়ে থাকতে তাদের কারও গায়ের কম্বল গলার উপর দিয়ে পড়ে রয়েছে দেখে মনে হয় ঘুমন্ত অথচ তারা সবাই মৃত।
সব থেকে পাশবিক ও নরকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছিল পুরাণ ঢাকা তে। পড়ুন Genocide। এখানে 26 মার্চ দুপুরবেলা কোনরকম সতর্কতা বা ইঙ্গিত ছাড়াই অতর্কিত পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করেছিল এখানে প্রায় 1 মিলিয়ন মানুষের বসবাস পরবর্তী 12 ঘন্টায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় যেটা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের একটা বড় সমর্থক ঘাঁটি ইংলিশ রোড রোড নয়াবাজার সদরঘাট এবং বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে আগুন জ্বলছিল।
পাকসেনারা গ্যাসলিন ঢেলে দিয়ে সমস্ত ইটের দেয়াল বাড়িঘর অগ্নি শিখা জ্বালিয়ে দিয়েছে এই ধ্বংসযজ্ঞ এবং নিসংসতা ছিল সীমাহীন যারা জীবিত এবং ভীত সন্ত্রস্ত করার জন্য আগুনে প্রজ্বলিত মৃতদেহগুলো তিন দিন ধরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে মুসলিম ধর্মের বিধি অনুসারে 24 ঘন্টার মধ্যেই কবর দেওয়ার বিধান রয়েছে। 25 শে মার্চ কালরাত্রি অতর্কিত আক্রমণে শুরু থেকে 48 ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ী সহ 500 ছাত্রছাত্রীকে হত্যা করা হয়।
পাক বাহিনী এলিট সমাজেও Genocide এর বীজ বুনেছিল তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক, দর্শন বিভাগের প্রধান গোবিন্দ চন্দ্র দেব, 65 সহ ভদ্র হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব যোগেশচন্দ্র ঘোষ, 86 সাধনা ঔষধালয় প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানের বিখ্যাত কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির মালিক কে হত্যা করা হয়। তাকে সৈন্যরা বাড়িতে ঢুকে বেডরুম থেকে টেনে নিয়ে আসে এবং গুলি করে হত্যা করে এবং তার বাড়ি লুট করা হয় রণদা প্রসাদ সাহা, ৮০, পূর্ব পাকিস্তানের পাট রপ্তানিতে প্রথম সারির ব্যবসায়ী তাকে হত্যা করা হয়.
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য মতে জানা যায় সৈন্যরা রণদাপ্রসাদ সাহা কে তার প্রতিষ্ঠিত মির্জাপুর স্কুলের যুবতী মেয়েদের ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানিদের কাছে পাঠাতে বলেন কিন্তু তিনি রিফিউজ করেন রনদা প্রসাদ সাহা কে পরে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর থেকে রনদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে নিখোঁজ।
একজন কর্মীর স্বচক্ষে বর্ণনা থেকে জানা যায় সাধনা ঔষধালয় কর্মী বলেন 10 জন সেনাসদস্য যোগেশচন্দ্র ঘোষ এর রুমে প্রবেশ করে এবং শুরুতেই তাকে প্রহার করতে শুরু করে রাইফেলের বাট দিয়ে সবকিছু দেখে তৎক্ষণাৎ যোগেশচন্দ্র ঘোষ পলায়ন করতে চেষ্টা করে কিন্তু তাকে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয় এবং বেয়োনেট দিয়ে আঘাত করা হয় তার দেহ দুইদিন পড়ে ছিল।
সাধনা ঔষধালয়ের একজন কর্মী ও সাধনা ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক বাহার আলী বলেন পাক সেনা দের সাথে কক্ষে কয়েক জন মুসলিম লীগের লোক আসেন এবং মূল্যবান জিনিসপত্র ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
রাত ১১.৩০ মিনিটে ইপিআর ঘাঁটি পিলখানায় ট্যাংক, বাজোকাস, ও সয়ংক্রিয় রাইফেলের দিয়ে হত্যা যজ্ঞ চালানো হয়। ১০০০ জন ইপিআর সদস্যের মধ্যে ৬০০ জনকেই হত্যা করা হয় বাকিদের ট্রাকে করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পড়ুন Genocide পর্বগুলো। তাদের মধ্যে ২০% এখনো হদিস নাই। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ও একইসাথে আক্রমণ করা হয়। ৫০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তান সেনা দের অপছন্দের বাঙ্গালী সেনা বা পুলিশ সদস্যে দের হত্যা করা হয়। ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হত্যাযজ্ঞ পরদিন ২৬ মার্চ ভোর ৪.০০ পর্যন্ত চলেছিল।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে , তেজগাঁও বিমান বন্দর এর কাছাকাছি ২৬ তারিখ মধ্য রাত পর্যন্ত তাণ্ডব চলেছিল। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এলাকায় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার অফিসে আক্রমণ করা হয়েছিল কারণ দৈনিক ইত্তেফাক ছিল আওয়ামীলীগের মুখপাত্র ও হিন্দু আবাসিক এলাকায় অবস্থিত অফিস। ২৬ মার্চ সারাদিন পাকসেনারা শাঁখারীবাজার ও তাতি বাজার পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। আনুমানিক ৮০০০ নারী পুরুষ ও শিশু
পাক হানাদাররা Genocide এ মেতেছিল পুরান ঢাকায় সদরঘাট এলাকাতেও। পাকসেনারা আক্রমণ করে সেখানে অবস্থানকারী জনসাধারণ ছিল সম্পূর্ণ নিরস্ত্র। সদরঘাটের টার্মিনালের ছাদে পাকসেনারা মেশিনগান স্থাপন করে এবং নারী পুরুষ বৃদ্ধ শিশু সবাইকে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করে শেষে মৃতদেহগুলোকে তারা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। 29 তারিখে একটা অনুসন্ধানে দেখা যায় টয়লেট গুলো রক্তে ভিজে রয়েছে।
একজন বাঙালি ছাত্রের প্রত্যক্ষ নজরে জানা যায় যে সাধারণ বাঙালি রা সদরঘাট এলাকায় লঞ্চ করে কোথাও যাবার জন্য অপেক্ষা করছিল এবং তাদের ওপর অতর্কিত এই হামলা করা হয়। পুরান ঢাকার আমেরিকার মিশনারি থেকে একজনের বক্তব্যে জানা যায় Genocide এর শুরুতে পাকসেনারা ২৮ মার্চ সকালে রাস্তার শেষ প্রান্তে মেশিনগান স্থাপন করে এবং কোনরকম ওয়ার্নিং ছাড়াই অতর্কিত আক্রমণ করে এবং গণহত্যা চালায়। 29 ও 30 মার্চ দেখা যায় একসময়ের ব্যস্ততম শাঁখারীবাজারে কোন জীবন্ত মানুষ নেই।
রাস্তার চারিদিকে পড়ে পড়ে আছে শুধু মানুষের লাশ যেগুলো কবর দেওয়ার কেউ নেই। রমনা কালী বাড়ি এলাকায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয় যেখানে একসময়ে হিন্দু অধ্যুষিত মানুষের আনাগোনা থাকতো সর্বদা। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভাজিত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ও এত ধ্বংসযজ্ঞ সাধিত হয়নি। রমনা কালী বাড়ি পাশের গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ২৮ তারিখ রাত্রে আনুমানিক 200 মানুষকে হত্যা করা হয় এবং 29 তারিখ সকালে 70 থেকে 100 জন মানুষের লাশ স্তূপ করে রাখা হয়।
ন্নায়ের বাজার, রায়েরবাজার ও কয়েকটি বস্তি (শান্তি এলাকায়) আগুনে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়। পড়ুন Genocide। 29 তারিখ মহাখালী হাসপাতাল এলাকার বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং পলায়নরত মানুষকে কুকুরের মত গুলি করে হত্যা করা হয়। ইকবাল হলের আশেপাশে মেশিনগান ট্যাংক ও সৈন্যরা গ্রেনেড হামলা করে। দুদিন পর অনুসন্ধানে দেখা যায় ইকবাল হল ট্যাংক দিয়ে বিধ্বস্ত করা হয় এবং মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায় কিছু মানুষকে ভবনের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয় যাতে লাশের সংখ্যা গণনায় কম দেখানো যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে হিন্দু ছাত্র দের জন্য বরাদ্দ থাকত। একজন চিকিৎসাধীন মেডিকেল ছাত্রের বক্তব্যে জানা যায় আনুমানিক 103 জন ছাত্রকে হত্যা করা হয় পড়ুন Genocide। 26 তারিখ সকালে জগন্নাথ হলে অতর্কিত আক্রমণ করা হয় এবং অস্ত্রের মুখে কয়েকজন ছাত্র কে তাদের নিজেদের কবর খুঁড়তে করতে বাধ্য করা হয়। সেই সব ছাত্রদেরকে পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
More Stories
গনহত্যা কি? প্রেক্ষাপট 1971 সাল বাংলাদেশ
পুন্ড্রবর্ধন: ঐতিহাসিক রহস্যের এক অধ্যায়
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত