Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

উন্মুক্ত গোসলখানা জাপানে

Spread the love

উন্মুক্ত গোসলখানা জাপানেঃ প্রজ্বলিত আগুনের কক্ষে ২ মিনিট

নরক দেখে এলাম জাপানে ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রক্তিম কক্ষ ও বিদ্যুতের শক এর অভিজ্ঞতা জলে

গতকাল নরকে প্রবেশ করেছিলাম আপনারা হয়তো ভাবছেন যে এটা কেমন কথা কারণ আমার এমনই মনে হল । আমার চারিদিকে আগুনের ভয়াবহতা তার মধ্যে বসে আছি। আমি যদি আরো দুই মিনিট বসে থাকতাম তাহলে আমার সমস্ত জৈবিক প্রক্রিয়ায় গন্ডগোল দেখা দিত এবং শরীরের প্রোটিন গুলো গলে যেতে থাকতো। এমন এক ভয়াবহ জায়গা আমি বসে ছিলাম। যারা হয়তো জাপানে গিয়েছেন তারা জানেন যে ভূগর্ভস্থ হাইড্রো থার্মাল ওয়াটার যাকে জাপানি ভাষায় বলে ওনসেন । হাইড্রো থার্মাল ওয়াটার যখন নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে স্নান করার বা গরম জলে শরীরটা ধোয়ার জন্য শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য সেটাকে করা হয় ওনসেন। আমার এক জাপানিজ বন্ধু আর আমি আজকে গিয়েছিলাম ওনসেনে।

উন্মুক্ত গোসলখানায় কি ভাবে যেতে হয়?

এখানে মূলত শরীরের সমস্ত জামা কাপড় খুলে ফেলতে হয় । ঢুকেই আমরা দেখলাম অনেক পুরুষ তাদের কারো গায়ে কোন জামাকাপড় নেই সম্পূর্ণ উলঙ্গ। ঢোকার সময় আমাদের হাতে একটি করে ছোট্ট রুমাল দিয়েছিল যাতে আমরা লজ্জা স্থান ঢেকে রাখতে পারি অথবা গতর মার্জনের কাজে ব্যবহার করতে পারি। এখানে শ্যাম্পু বডি লোশান সাবান রয়েছে। ফোয়ারার পানিতে শাওয়ার করার স্টাইলে আমরা প্রথমে ছোট ছোট উন্মুক্ত কক্ষের টুলের উপর বসে শ্যাম্পু সাবান দিয়ে ঘা পরিষ্কার করে দিলাম । তারপর ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রার গরম জলে নেমে পড়লাম। এরপর নিচ থেকে পানির স্রোত তীব্রভাবে আসতে লাগলো পরে স্রোতের উপর পা রেখে জলের উপর ভেসে থাকতে চেষ্টা করলাম ।

আমি এবং আমার বন্ধু দুজনেই যথারীতি নিয়ম অনুসারে পাশাপাশিসুইমিং পুলের হাতল ধরে গল্প করলাম আর গরম জলের উপভোগ করতে থাকলাম নিচ থেকে গরম জলের স্রোত উপরে চলে আসছে আমাদেরকে ভাসিয়ে রাখছে। পুলের গরম জল অনেক স্বচ্ছ টলটলে নীলাভ । আমরা জলের উপর ভেসে থাকার চেষ্টা করতে থাকলাম। অর্থাৎ আমি দেখতে থাকলাম যে জলের ফোর্স আমাকে ভাসিয়ে রাখতে পারে কিনা আমি এভাবে কিছুটা সময় খেলা করতে থাকলাম এবং আমার বন্ধুকে বললাম তুমিও চেষ্টা করতে পারো, দেখো তোমাকে জলের ফোর্স ভাসিয়ে রাখবে।সেও চেষ্টা করল।

নরক দেখে এলাম জাপানে ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রক্তিম কক্ষ

এভাবে কিছুক্ষণ গরম জলের উষ্ণ অনুভূতি উপভোগ করার পরে বন্ধু আমাকে বলল যে তুমি কি কখনো ষাট ডিগ্রি তাপমাত্রার পক্ষে প্রবেশ করেছ? ওটাকে জাপানিজ ভাষায় বলে ছাওনা । আমি বললাম না। তখন সে আমাকে বলল তুমি চেষ্টা করতে পারো। তখন আমি ছাওনা সম্বন্ধে ভেবেছিলাম যে হয়তো কোন জলের পুল যেখানে জলের তাপমাত্রা ৬০° হবে। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি একটি আগুনের কক্ষ হতে পারে ওই ছাওনা। যখন আমি ছাওনা কক্ষে গেলাম তখন দেখলাম কক্ষের ভিতর চার থেকে পাঁচজন মানুষ বসে আছে । স্টেডিয়ামের সিড়ির মতো করে ধাপে সাজানো কাঠের তৈরি সিড়িতে বসে আছে । আমার বন্ধুটি উপরে উঠে গেল আমি নিচের ধাপে বসলাম।

স্বভাবতই আমাদের গায়ে কিচ্ছু নাই এবং সেখানে ঢুকে অন্যরকম একটি ভয়ংকর একটা অনুভূতি পেলাম। মনে হল আমি জলন্ত কোন আগুনের ভিতর প্রবেশ করলাম। যেটা এখনোও আমাদের জন্য সহনীয়। আমার বন্ধুটি বলল যে এই রুমে কেউ তিন মিনিটের বেশি থাকে তাহলে আমাদের শরীরের প্রোটিন গুলো গলে যেতে থাকে। আমাদের শারীরিক সমস্যা তৈরি হবে আমার বন্ধুটি আমাকে বলল আমি যদি কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে চাই তাহলে আমি বের হয়ে যেতে পারি আমার ইচ্ছা স্বাধীন।

আমি এক মিনিট পার করেছি । এখানে বসে আছি আর আমি কথা বলছি,  ভাবছি যে এটা তো একটি নরক। আমার বন্ধুটি আরও একটি ভয়ংকর তথ্য দিল যে কোন একদিন নাকি এই ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রার আগুনের কুন্ডলীর কক্ষে থাকা অবস্থায় দরজার লক নাকি আটকে গিয়েছিল খুলতে পারছিল না ।

অর্থাৎ জ্বলন্ত দগ্ধ হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়েছিল। এটা ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠলো এবং আমি বললাম যে আমি আর থাকতে চায় না এখানে তারপর আমি বের হয়ে গেলাম। মনে হল আমি নরকের দেখা পেলাম।  নরকের জীবন্তপুড়িয়ে মারার কথা শুনেছি কিন্তু ষাট ডিগ্রি তাপমাত্রার এই কক্ষটি দেখেই আমার নরকের কথা মনে পড়ল কারণ ভিতরে আগুন নেই তবে আগুনের তাপে সমস্ত কক্ষটি লাল হয়ে আছে যেমনটি দেখা যায় লোহার খণ্ডকে উত্তপ্ত করলে যেমন লাল হয়ে যায় দেখেই আমার মনে এক ভয়ঙ্কর শিহরণ জেগে উঠলো। সেখান থেকে বের হয়ে আমি ৪০ ডিগ্রি তাপের গরম জলে আবার নেমে পড়লাম ।

নরক দেখে এলাম জাপানে জলের ভিতর বিদ্যুতের শক এর অভিজ্ঞতা

ওখান থেকে কিছু সময় পরে আমি অন্য একটি ইলেকট্রিক শক পাওয়া যায় এমন জলের পুলের কাছে গেলাম। সেই চৌবাচ্চায় নামতেই দুই দিক থেকে আমার হাতে হালকা বৈদ্যুতিক সক অনুভব করতে লাগলাম। আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আমার হাতের আঙ্গুলগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই এমনিতেই আঙ্গুলগুলো বাঁকা হয়ে যাচ্ছেঅর্থাৎ আমরা হাত মুঠ করলে যেমন আঙ্গুলগুলো গুটিয়ে যায় ইলেকট্রিক শকে অটোমেটিক আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে আঙ্গুলগুলো এরকম ব্যবহার করছে। আমার আঙ্গুলগুলো অবশ হয়ে যায়। যথা সম্ভব চেষ্টা করলাম ইলেকট্রিক শখ থেকে দূরে রাখার। যত কাছাকাছি হাতগুলো রাখছি  হাতের আঙ্গুলগুলোর নিয়ন্ত্রণ ততোই কমে যাচ্ছে।

তারপর আমার শরীরের কোমরের কাছে ইলেকট্রিক শটটা নিতে থাকলাম সেখানে আমি কিছুটা ভালো অনুভব করলাম। তবে এখানে আমার একটা অনুভূতি হল যে আমাদের শরীর যে কাজ করে সেটা সম্পূর্ণ রূপে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল এর উপর ভিত্তি করে। আমাদের ব্রেন থেকে ইলেকট্রিক সিগন্যাল স্নায়ুর মাধ্যমে তাড়িত হয়ে আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো নির্দেশনা পায় এবং এভাবেই কাজ করে। বাইরে থেকে যখন বৈদ্যুতিক সিগন্যাল আমার হাতে এসে লাগে তখন আমার শারীরিক সিগন্যাল কাজ করছে না কারণ বাইরের বৈদ্যুতিক উৎসের শক্তিটা একটু বেশি হয়তো। 

এজন্য আমার শরীর-গত বৈদ্যুতিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার উপরে বাইরের বৈদ্যুতিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বেশি প্রভাব সৃষ্টি করছে আর সেজন্যই আমার হাতের আঙ্গুলগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে আসছে। এটা আমি অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলাম ।

 

যাই হোক সেখান থেকে আমরা বের হয়ে এসে আরো একবার সাবান-শ্যাম্পু গায়ে মেখে বের হয়ে আসলাম। শারীরিক ওজন মেপে দেখলাম যে ২০০ গ্রাম আমার ওজন কমে গেছে। এর কারণ হলো যখন আমি গরম পানিতে থাকব তখন শরীর থেকে কিছু তাপ বের হয়ে যাবে পানি শূন্যতা তৈরি হবে। তাছাড়া ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রার আগুনের কক্ষে প্রবেশ করেছিলাম সেখানে শরীর থেকে এমনিতেই পানি বের হতে থাকবে।  পানি সহ কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যায় বলে আমার বন্ধুটি আমাকে জানালো। তবে হাইড্রো থার্মাল ওয়াটার থেকে যে উপকার পাওয়া যায় এটা আমরা সবাই জানি। হাইড্রোত্রার্মাল ওয়াটার এ বা ওনসেনে কিছু প্রাকৃতিক মৌলিক পদার্থ ও রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো ।

আমরা যখন ক্লান্তি বোধ করি তখন ওনসেনে গিয়ে একটু গরম জলের অনুভূতি নেয়াটা অনেক বেশি আরামদায়ক। আমরা বাইরে বের হয়ে আসলাম এবং যথারীতি বাসায় চলে আসলাম।