২৫ শে মার্চ কালো রাত রচনা স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য
২৫শে মার্চের কাল রাত আসতো না যদি পরিকল্পনা ঠিক থাকতো
ঢাকার রেইস কোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান একটি প্রতিদ্ধন্দ্বী সরকার চালাবার কথা ঘোষণা দিলেন এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে কয়েকটি নির্দেশনা জারী করলেন। অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য তিনি সপ্তাহ ব্যাপী এক কর্ম সূচি প্রকাশ করনে যেটা ২ রা মার্চ শুরু হয়েছিল।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল ১। কর না দেয়া ২। সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ , সরকারি, আধা সরকারি, অফিস সমূহ, হাইকোর্ট, ও অন্যান্য কোর্ট বন্ধ করে দেয়া।রেডিও টেলিভিশন ও সংবাদপত্র সমূহ কে আওমীলীগের কর্ম পন্থা অনুযায়ী নির্দেশ দেয়া হল এবং এও জানান হল যে এ নির্দেশ অমান্য করলে মনে করা হবে যে ওই সব প্রতিষ্ঠান কর্মরত বাঙ্গালিরা সহযোগিতা করছে না।
পূর্ব ও পশিম পাকিস্থানের মধ্যে টেলিযোগাযোগ বন্ধ করা হল। এক নির্দেশে বলা হল, স্টেট ব্যাংক বা অন্যও কিছুর মাধ্যমে ব্যাংক পশ্চিম পাকিস্থানে টাকা পাঠেতে পারবে না। আর এই নির্দেশ বিশেষ করে উল্লেখ করা হল যে, প্রত্যেক ইউনিয়ন, মহল্লা, থানা, মহকুমা, এবং জেলা স্থানীয় আওয়ামীলীগ ইউনিটের নেতৃত্বে একটা করে সংগ্রাম পরিষধ গঠন করা হবে।
ঢাকায় রেডিও পাকিস্থানে বোমা নিক্ষেপ করা হয়।শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া যায় যে আওয়ামীলীগের ছাত্ররা জোর করে পিক আপ, জীপ, ও মাইক্রবাস নিয়ে যাচ্ছে।বরগুনা জেলায় পাকিস্থান জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
২৫ শে মার্চ কালো রাত রচনাঃ সময় তালিকা
৮ই মার্চ, ১৯৭১
ঢাকায় যাদের লাইসেন্স আছে তাদের কাছ থেকে জোর করে জবরজস্তি করে আওয়ামীলীগের সেচ্ছাসেবিরা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতে লাগল। পূর্ব পাকিস্থানের অন্যান্য শহর থেকেও অনুরূপ ঘটনার খবর পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ সারা পূর্ব পাকিস্থান জুড়ে মিটিং ও উত্তাল মিছিলের ব্যাবস্থা করলো জাতীয়তাবাদ ও পশ্চিম পাকিস্থান বিরোধী স্লোগান ছিল তাদের মুখে।
পূর্ব পাকিস্থানের আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ, শেখ মুজিবরের নির্দেশে কতোগুলি ব্যাতিক্রমি ব্যাখ্যা ও ঘোষণা করলো। এর মধ্যে ছিল স্টেট ব্যাংক বা অন্যও কোনভাবে বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠান যাবে না।
৯ই মার্চ ১৯৭১
বাংলাদেশের বাইরে যাতে টাকা পয়সা না যায় সে জন্য পূর্ব পাকিস্থানের আওয়ামী লীগের সেচ্ছাসেবীরা ও ছাত্ররা ঢাকার বিভিন্ন অংশে তল্লাসি ফাঁড়ি বসালো। তল্লাসি করার অজুহাতে এসব সেচ্ছাসেবীরা টাকা পয়সা ও অন্যান্য জিনিস বাংলাদেশের নামে হস্তগত করলো।
লালমনিরহাটে এক উন্মত্ত জনতা একটি চলন্ত ট্রেন থামিয়ে তার অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে। জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে যাত্রীদের কিছু ক্ষয়ক্ষতি করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা আক্রমণ ও করেছিল।রাজশাহীতে সিটি টাউন হলে একটা স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করা হয়।লন্ডন ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক কেলিতক্লার্ক এর পাঠানো একটি বিবরণ ১৯৭১ সালের ৮ই মার্চ উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, খবরে প্রকাশ যে রবিবার ৭ই মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্থাঙ্কে বিচ্ছিন্নতাবাদের শেষ প্রান্তে এনে ফেলেছিলেন তখন ঢাকা সম্পূর্ণভাবে অরাজকতার কবলে পড়েছিল। উক্ত পত্রিকায় আরও বলা হয় যে, আওয়ামীলীগ নেতা শেখ তার আন্দোলনকে স্বাধীনতা আন্দোলন বলে নাম দিয়েছিল। তিনি জাতীয় পরিষদ এর অধিবেশনে এমন সব শর্ত আরোপ করেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পক্ষে তা ম্যান নেয়া অসম্ভব ছিল। এ পত্রিকায় শেখ মুজিবের আর একটি নির্দেশ ছিল যে “গ্রামে গ্রামে আওয়ামীলীগ নেতাদের নেতৃত্বে মুক্তি কমিটি গঠন করা”।
১০ই মার্চ, ১৯৭১
আওয়ামীলীগ ঘোষণা করলো যে, ব্যাংকের লকার গুলোর কাজ বন্ধ থাকবে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশের বাইরে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন রকম সহযোগিতা করবে না। কুমিল্লায় চা বাগানে গোলযোগ অ সন্ত্রাসের খবর পাওয়া গেল।
১২ই মার্চ, ১৯৭১
১১ই মার্চ ও ১২ই মার্চ রাতে বরিশালের জেল ভেঙ্গে কিছু কয়েদি পালিয়ে যায়। বগুড়ায় জেল ভেঙ্গে ৭ জন কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার খবর ও পাওয়া যায়। কুমিল্লায় ৩০০ জন কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে ২ জন কয়দি নিহত ও ১০ জন আহত হয়।
মুক্তি ফ্রন্ট ও পূর্ব পাকিস্থানের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক শক্তি পূর্ব পাকিস্থানের সর্বত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তি ফ্রন্টের পক্ষ থেকে “সাইক্লস্টাইল্ড” এবং হাতে লেখা প্রচারপত্র গোপনে বিলি করা হয়। এসবেরই উদ্দেশ্য ছিল জাতিগত বিদ্বেষ সৃষ্টি ও হিংসাত্মক কার্যকলাপে উস্কানিদান। ৫টি সামরিক ট্রাকের একটি দল রেশন নেবার জন্য কুমিল্লা থেকে সিলেট যাবার সময় পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সশস্ত্র জনতা কর্তৃক আক্রান্ত হয়।
১৩ই মার্চ, ১৯৭১
ঢাকার রেল স্টেশানে আওয়ামীলীগ সেচ্ছাসেবীরা যাত্রীদের ঘেরাও করে পশ্চিম পাকিস্থানের দালাল বলে অভিযুক্ত করে জেরা করতো। কাকরাইলের কাছে এক বোতল এসিড নিক্ষেপ করে অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। যশোরে ডেপুটি কমিশনারের অফিসে পাকিস্থান জাতীয় পতাকার জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কুমিল্লায় আওয়ামীলীগ নেতারা দু জন কয়েদির মুক্তির জন্য জেল ভাঙ্গার হুমকি দেয়।
১৪ই মার্চ, ১৯৭১
শেখ মুজিবুর রহমান পূর্বের সব নির্দেশে বাতিল করে দেন এবং ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ থেকে নতুন নির্দেশ সম্বলিত এক কার্যক্রম ঘোষণা করেন। এর একটি নির্দেশে বলা হয়, ডেপুটি কমিশনার ও হমকুমা হাকিমগণ তাদের নিজ নিজ কর্তব্য ও দ্বায়িত্ব পালনে স্ব স্ব পর্যায়ে আওয়ামীলীগ সংগ্রাম পরিষদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবেন এবং সহযোগিতা করবেন। আরও একটি নির্দেশে বল হয়, কাস্টম বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করে যাবেন এবং যে পরিমাণ কর ধার্য করা হয়েছ তা পুরো জমা দেয়া হলে মাল বের করতে অনুমতি দেবে।
এই উদ্দেশে ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড এবং ইস্টার্ন মারকেন্তাইল ব্যাংক লিমিটেড (বেসরকারি ব্যাংক) এ কাস্টমস কালেক্টর দ্বারা পরিচালিত বিশেষ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে।কাস্টমস কালেক্টরগণ আওয়ামীলীগের মাঝে মাঝে প্রকাশিত নির্দেশ অনুযায়ী এই একাউন্ট গুলো পরিচালিত করবে।এই ভাবে যে কর আদায় হবে সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের একাউন্টে জমা হবে না।
১৫ মার্চ, ১৯৭১
এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামে ৪ জন সদস্য স্বীকার করেন যে, গাড়ি নিয়ে কিছু দুষ্কৃতীকারীরা বিভিন্ন বাড়ি ঘর এখন লুটপাট করছে এবং সংগ্রাম পরিষদের নামে এখন টাকা পয়সা আদায় করছে।
আরও খবর আসছিল যে, আওয়ামী লীগ তল্লাশি ফাঁড়ি জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে যে তল্লাসি চালাচ্ছে তাতে জনসাধারণ বর্বরোচিত ব্যবহারের শিকার হয়েছে। কুমিল্লার এক সশস্ত্র জনতা ফেনির এক আর্মি ফিল্ড ইউনিট ঘেরাও করে আক্রমণ করে।
১৬ মার্চ, ১৯৭১
নাটোরের মহারাজ হাইস্কুল থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ও এসিড চুরি হয়। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা একটি অস্ত্রের দোকান লুট করে। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ, লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায়, ৫৮টি গ্রাম থেকে আসা প্রায় শতিনেক আওয়ামী লীগের সংগ্রাম পরিষদের লোক একত্রিত হয়ে মিটিং করেছে এবং তারা প্রয়োজনবোধে পাকিস্থানের সেনা বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত।
হিন্দুস্তানের দৈনিক পত্রিকা স্টেটম্যান জানায়, আওয়ামী লীগের ১৪ মার্চ ২৯১৭ জারী করা নির্দেশে বলা হয়েছে যে, মিস্টার মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছেন। পত্রিকা আরও জানায়, শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের অতিথি হবেন, ঢাকায় পর্যবেক্ষকরা ের এই অর্থ বুঝিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্থান নিজেকে পশ্চিম পাকিস্থান থেকে স্বতন্ত্র একটি এলাকা মনে করেন।
১৭ মার্চ, ১৯৭১
১৬ ও ১৭ই মার্চের মধ্যবর্তী রাতে ঢাকায় আজিমপুরে একটি সরকারি অফিসে দুটি এসিড বোতল নিক্ষেপ করা হয়। ঢাকার মতিঝিল কেন্দ্রীয় হাই স্কুলের উপর হামলা চালান হয় এবং এসিড নিক্ষেপ করা হয় ও রাসায়নিক দ্রব্য লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৮ই মার্চ, ১৯৭১
যশোরে সেনাবাহিনীর শিবিরে দু জন সামরিক কর্মচারীর উপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়।
১৯ শে মার্চ, ১৯৭১
ঢাকার একটি লেভেল ক্রসিং এর উপর ময়মনসিংহ থেকে প্রত্যাবর্তনকারী একটি সামরিক যানের উপর এক জনতা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। আক্রমণকারীরা অস্তর শস্ত্রসহ ৩ জন লোক কে নিয়ে পালিয়ে যায়।
যশোরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতি সাধন করা হয়। যশোর-খুলনা সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।খুলনায় ৫ই মার্চের হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ৩০০ লোকের উপর নতুন করে হামলার হুমকি দেয়া হয়। রংপুরে ছাত্ররা কালীগঞ্জ থানার লালিবাড়ি গ্রামে ১২ টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
ঢাকা থেকে ২২ কিমি দুরে লেভেল ক্রসিং এর উপর ট্রেন রেখে সেনা বাহিনীর সাথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ২ জন লোক নিহত অ ৫জন আহত হয়।
২০শে মার্চ ও ২১ শে মার্চ ১৯৭১
যশোরে ভারত থেকে সাতক্ষিরা হয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র শস্ত্র চোরাপথে সীমান্তের আপারে আসে বলে খবর পাওয়া যায়। চোরাপথে আনিত অস্ত্র শস্ত্র চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পাঠান হয় বলে খবর পাওয়া যায়।
২২শে মার্চ ১৯৭১
দিনাজপুরে আওয়ামীলীগ কর্মীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কুশ পুত্তলিকা পুড়িয়ে এক উন্মত্ত মিছিল করে। কুশ পুত্তলিকার বুকে তীর বসান হয়। সিলেটের চা বাগানে ভারতীয় অস্ত্র শস্ত্র এনে রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
২৩শে মার্চ ১৯৭১
পাকিস্থান দিবসের নাম পরিবর্তন করে প্রতিবাদ দিবস করা হয়। ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বিভিন্ন সরকারি অফিসের ভবনের চুড়ায় পাকিস্থানের পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। মুক্তি ফ্রন্ট এর আধা সামরিক বাহিনী ও অবসর প্রাপ্ত সামরিক কর্মচারীদের মার্চ পাস্ট ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামীলীগের নির্দেশ অনুসারে ঢাকা টেলিভিশন ওই দিন পাকিস্থানি পতাকা প্রদর্শন করেনি। তবে মিরপুর ও অন্যান্য কয়েকটি এলাকায় অধিবাসীরা নতুন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে অস্বীকার করে এবং পাকিস্থানি পতাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে তাদের উপর হামলা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান তার বাস ভবনে সশস্ত্র মার্চ পাস্টে সালাম গ্রহণ করেন। এখানেও আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন ছাত্ররা পশ্চিম পাকিস্থানি ব্যাবসায়ী দের অপহরণ করে এবং মুক্তি পণ দাবি করে। সশস্ত্র জনতা ঢাকা বিমান বন্দরের কাছে বহির্গামী যাত্রীদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এবং তাদের হয়রানি করে।
২৪শে মার্চ, ১৯৭১
যুদ্ধংদেহী ছাত্র এবং শ্রমিকরা জনগণকে হিংসাত্মক কাজের উস্কানি দিয়ে পূর্ব পাকিস্থানের বিভিন্ন জায়গা হাতে লেখা এবং সাইক্লস্টাইল করা প্রচারপত্র বিলি করা শুরু করে।পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলনের জেলা কমিটি ওই ধরনের একটি প্রচার পত্র বিলি করে যাতে লেখা ছিলঃ “ পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির আন্দোলন এগিয়ে চলছে।
এই দাবানল কে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন। দেশপ্রেমিক বিপ্লবী জনগণ। হাতিয়ার তুলে নিন।শত্রু সৈন্য কে বাধা দিন এবং তাদেরকে নির্মূল করুন। সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে মুক্ত এলাকাকে রক্ষা করুন।“দেশবাসী বন্ধুগণ! হ্যাটের কাছে যে অস্ত্র পান তাই হাতে তুলে নিন এবং শত্রুদের অগ্রগতি বন্ধ করুন। যে জায়গা শত্রুদের নিয়ন্ত্রণে নাই শয়েই জায়গার সড়ক সেতু, রেল যোগাযোগ প্রভৃতি বিচ্ছিন্ন করে দিন। ঘরে ঘরে হাত বোমা ও মলটভ বোমা প্রস্তুত রাখুন।
যদি আমাদের কে আত্মসমর্পণ বা শত্রু কর্তৃক সরাসরি আক্রান্ত হয়ে পড়ি তাহলে আমাদের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ সংগ্রাম করতে হবে।“মনে রাখবেন, পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি কেবল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে যার জন্য দীর্ঘ সময়ের ও প্রয়োজন হতে পারে। কাজেই গেরিলা যুদ্ধ কৌশল ছাড়া আমরা শত্রুদের প্রতিহত করতে পারব না। যে কোন মূল্যে মুক্ত এলাকা কে রক্ষা করতে হবে। পূর্ব বাংলার দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়নি বরং এটাই কেবল শুরু।
আমাদেরকে দুর্বল করার জন্য শত্রুরা অর্থনৈতিক অবরোধ করতে পারে। পূর্ব বাংলা জয় অবশম্ভবি আমরা পাকিস্থানের উপনিবেশের জিঙ্গির ছিঁড়ে ফেলব। স্বাধীন পূর্ব বাংলা জিন্দাবাদ। রংপুরের উত্তর সৈয়দপুর গোলারহাট থেকে অগ্নি সংযোগের খবর পাওয়া যায়। লাঠি সড়কি ও অন্যান্য অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত এত হাজার লোকের এক উন্মত্ত জনতা সৈয়দপুর অভিমুখে যাত্রা করে সেখানকার অধিবাসীদের উপর আক্রমণ করার জন্য ৫০ টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
২৫শে মার্চের কাল রাত, ১৯৭১ ঢাকার ইকবাল হল
জগন্নাথ হল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ ব্যাপকভাবে এসিড বোমা তৈরির খবর পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের সর্বত্র ব্যারিকেড ও বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত পাল মারটিন এর পাঠান এক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন বিপ্লবী ছাত্ররা আগ্নেয়াস্ত্র ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছে। পূর্ব পাকিস্থানের বহু গ্রামে একটি গন বাহিনীর সূচনা হিসাবে সেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়েছে।
এই গন বাহিনীর কাজ হবে পাকিস্থান সেনা বাহিনীর মোকাবেলা করা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ল্যাব থেকে চুরি করা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে তৈরি পেট্রল বোমা বা হাত বোমা বা এসিড বোমা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রথম বারের মত দেখা যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের ব্যাপক সশস্ত্র প্রস্তুতি আর একা ধাপ এগিয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক কর্নেল উসমানী কে বিপ্লবী বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়। এবং তিনি সরাসরই শেখ মুজিবের কর্তৃত্বাধীনে থাকবেন।
শেখ মুজিবুর রহমান প্রাক্তন সামরিক কর্মচারীদেরকে নিজ পক্ষে রাখার জন্য অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল মজিদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কমান্ডার ময়াজ্জম কে নিয়োগ করেন। তালিকা সুষ্ঠু ভাবে করা হয় এবং তা আওয়ামীলীগের সদর দপ্তরে রাখা হয়। অন্যও দিকে তাদের হাতে অস্ত্র দেয়াড় ব্যাবস্থা করা হয়। আর এজন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলান, যশোর, থেকে অস্ত্র দকান গুলো লুট করা হয়। এরপর তা বড় বড় শহরে মজুত করা হয়। একমাত্র ঢাকা পুলিশ স্টেশন এই গুলি ভর্তি ১৫ হাজার রাইফেল জমা করা হয়।
বিভিন্ন ইপিআর, ইবি আর, বহিরফারির মধ্যে ওয়ারলেস ট্রাস্মিটার এর মাধ্যমে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবং এক ইউনিট থেকে অন্যও ইউনিট পর্যন্ত দ্রুত নির্দেশ পাঠান হয়। বৃহত্তম পরিচালন সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার। পরিচালনা কার্যক্রম অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে তৈরি করা হয়। এবং এমন ব্যাবস্থা করা হয় যে ঢাকার আওয়ামীলীগ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়ে যাবে। যে সব ব্যবস্থা বনেয়া হয় সেগুলো হল।
১।আকাশ কিংবা সমুদ্রও পথে পাকিস্থানি সৈন্যের আগমন রোধ করার জন্যে ইবি আর বাহিনী ঢাকা ও চট্টগ্রাম দখল করবে।
২। ইপিআর পুলিশ এর সাহায্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবশিষ্ট সৈন্য রা বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট ও ফাঁড়ীতে সশস্ত্র সৈন্যও দের নির্মূল করবে।
৩।ইপিআর সীমান্তের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো দখল করবে এবং তা বহির সাহায্যের জন্য খোলা থাকবে।
৪। অবশিষ্ট অস্ত্র সশস্ত্র সংগ্রহ করা হবে ভার থেকে
৫। আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো দখল ও পাকিস্থান সেনা বাহিনীকে পর্যুদস্ত করা মাত্রই ভারতীয় সৈন্যও রা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়
শুক্রবার দিন ভরে এই বিদ্রোহ শুরু হবে বলে সময় ধার্য করা হয়। ২৫ শে মার্চ দিন গত রাতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অভ্যুত্থান বাস্তবায়িত করার মাত্র কয়েক ঘনতা আগে প্রেসিডেন্ট পাকিস্থান সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের কাজে ঝাঁপিয়ে পরার এবং পশ্চিম পাকিস্থানের কর্তৃত্ব পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন।
সেনা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে এবং তারা আওয়ামীলীগ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্থানের সশস্ত্র পরিকল্পনা বানচাল করে দেয়। এর পর ২৫ শে মার্চ কাল রাতেই পক হানাদার বাহিনী ঢাকার নিরীহ বাঙ্গালির উপর সশস্ত্র ঝাঁপিয়ে পড়ে ও বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাক বাহিনী ঢাকাকে এক মৃত্যুর নগরীতে পরিণত করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিল খানা, সর্বত্র তারা ধ্বংস লীলায় মেতে ওঠে।
অনুবাদ; রমন কুমার বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক,পবিপ্রবি
মুলঃ কল্যাণ কুমার চৌধুরী বই; জেনসাইড অফ বাংলাদেশ
More Stories
পুন্ড্রবর্ধন: ঐতিহাসিক রহস্যের এক অধ্যায়
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪