Genocide ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ধারাবাহিক পর্ব-৩
২৫ মার্চ ১৯৭১ জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের ইতিহাসে এক কাল অধ্যায় শুরু করেন যখন তিনি ঘোষণা দেন যে কোনো মূল্যে পূর্ব পাকিস্তানকে প্রতিরোধ করা হবে সেজন্য তিনি পাকিস্তানের মজুত ৫ টি পূর্ণ সেনা বাহিনী কে নির্দেশে দেন আক্রমণের জন্য। ২৫ মার্চ থাকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যথা মুক্তি বাহিনীর কাছে ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের আগে পর্যন্ত কত মানুষ হত্যা করেছিল পাকিস্তানিরা এই ২৬৭ দিনের ভয়াল নারকীয় যুদ্ধে যাকে বলে Genocide?
কিছু বিদেশী খবরের কাগজ যেমন the times, the gourdian, de monde, অনুসারে ১ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করা হয়েছে যেখানে ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকরিজীবী ও পুলিশ অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন এর খবরের কাগজ pravda ৩ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে রিপোর্ট করে যে মোট ৩ মিলিয়ন মানুষ কে হত্যা করা হয়েছে। এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ যা কিনা যুদ্ধে সমব্যাথী দের জন্য প্রচার করা হয়ে থাকে আমেরিকা ছাড়া।
যদিও এই সংখ্যাটি অবান্তর নয় মোটেও তবে এর সঠিক প্রমাণ হয়তো কখনোই জানা সম্ভব নয়। তবে শেখ মুজিব সোভিয়েত ইউনিয়নের pravda কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট টা সঠিক মনে করেন। যখন তিনি ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন এসেই ঘোষণা দেন যে যুদ্ধে আমার দেশের ৩ মিলিয়ন মানুষ কে হত্যা ও ২ লক্ষ মা বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের এক গণনায় দেখা যায় যে ৩ মিলিয়ন মানুষ হত্যা ও ৪ মিলিয়ন মানুষ আহত হয়েছে যদিও এটা তখন যথার্থ ভাবে সঠিকতা যাচাই হয়নি।
নতুন সরকার এসে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সমন্বিত একটি কমিটি গঠন করে যে টা বাড়িতে বাড়ীতে গিয়ে হতাহত ও মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করে। মার্চ মাস ১৯৭২ সালে গণনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদার রহমান জানান যে অবিশ্বাস্য ভাবে মাত্র ৩০ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ( শহীদ) ৩ লাখ ছাড়িয়েছে এবং এটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বাংলাদেশ সরকার খসড়া ও প্রাথমিকভাবে ধারণা করে যে এই সংখ্যা ৩০ লক্ষ ছড়িয়ে যাবে এই Genocide এ । বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আলাদা আলাদা ভাবে শহীদের সংখ্যা গণনা করেন এতে প্রায় ৩০ লক্ষ ছুঁয়ে যায়। ৩০ লক্ষ শহীদের মধ্যে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুসলিম ও হিন্দুদেরকে হত্যা করে রাজাকাররা। পাকিস্তানের সেনা বাহিনী যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাঙালিদের হত্যা করে আর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম ২ সপ্তাহ পর্যন্ত রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ঘাতকরা মুসলিম ও হিন্দু বাঙ্গালীদের হত্যা করে।
হত্যাযজ্ঞ শুরু Genocide হয়েছিল মার্চের শুরুতে ৮ দিন ব্যাপী মুজিব – ইয়াহিয়া খানের আলোচনা বিফল হবার পর পরই।
২৫ মার্চ রাতে হত্যা যজ্ঞ কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু ৩-৪ ঘণ্টা পর নিয়মিত ভাবে সমস্ত শহর ব্যাপী হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এ অবস্থানকারী বিদেশী সাংবাদিকগণ আর্টিলারির গুলি ধ্বংস যজ্ঞের তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছিল।
হোটেল থেকে তারা উত্তর ঢাকাতে বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলের ব্যারাকে আগুনের লেলিহান শিখা প্রত্যক্ষ করেছিল। একদিকে আগুন সেই সাথে গুলি পর দিন সকাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে চলেছিল তখন ৩৫ জন বিদেশী কে ঢাকা শহর ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা দেখেছিল বিমান বন্দর রোডে একটা হতদরিদ্র পরিবারের খড়ের চালে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা। দোকানপাট ঘর বাড়ি সহ কমপক্ষে ৫০০ স্থাপনা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
২৬ মার্চ ভোর ৪ টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সব থেকে বড় আগুনের ঘটনা দেখেছে। বিদেশী সাংবাদিকরা দেখেছে যে আগুন ঘণ্টা ব্যাপী তাণ্ডব লীলা চালিয়েছে এবং প্রথম ৩০ মিনিট এটা উজ্জ্বল লাল লেলিহান শিখা সহ দাউদাউ করে জ্বালিয়েছে সব কিছু। দেখে মনে হয়েছে ২ একর জায়গা জুড়ে আগুনে পুড়েছে আর এর শিখা ও ধোয়া আকাশের ১০০ ফুট উচু পর্যন্ত পৌঁছেছে।
২৬ মার্চ সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঝে মাঝে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ট্র্যাক মাইক নিয়ে প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে বলে যাচ্ছে আর বাড়ির ছাদে আওয়ামীলীগের নির্দেশে বাংলাদেশের পতাকা অর্ধনমিত করে কালো পতাকা উড্ডয়ন করে যাচ্ছে। আনুমানিক তিন ব্যাটালিয়ন পাকসেনা ঢাকা আক্রমণ করেছিল এ Genocide এ। মুজিবুর রহমানকে ফোন করে বলা হয়েছিল যে ঢাকাতে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে কিন্তু তিনি বাসা ছেড়ে কোথাও যাননি।
শেখ মুজিব বলেছিলেন, আমি যদি বাসার বাইরে বেরিয়ে লুকিয়ে থাকি তবে পাক সেনারা সমস্ত ঢাকা শহর জ্বালিয়ে দেবে আমাকে খোঁজার জন্য। শেখ মুজিব কে এরেস্ট করা হয়েছিল। তাতে শহরের ধ্বংস লীলা কিছুটা কম হয়েছিল বৈকি!
More Stories
গনহত্যা কি? প্রেক্ষাপট 1971 সাল বাংলাদেশ
পুন্ড্রবর্ধন: ঐতিহাসিক রহস্যের এক অধ্যায়
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত