প্রাগৈতিহাসিক
মহামারী সংকলন-১ ( চীনের প্রাগৈতিহাসিক মহামারী)
উত্তর-পূর্ব চীনের স্বায়ত্তশাসিত দীর্ঘ অঞ্চল অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়া। অভ্যন্তরীণ মঙ্গোলিয়ার প্রাচীনতম ৫০০০ বছরের পুরনো ছোট গ্রাম হামিন মানহা, যা এখন সহস্রাব্দের জন্য মৃত।অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সময়কার একটি অঞ্চলের মহামারী কথন এটি।২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এই অদ্ভুত নিউলিথিক সাইটটি আবিষ্কার হয়েছিল।
মাত্র ২৯ টি বাড়ির একটি ছোট প্রাগৈতিহাসিক গ্রাম । যেখানে ২০০ বর্গফুট কুড়ে ঘরের মধ্যে ১০০ টি কঙ্কাল পাওয়া যায়।কতজনই বা থাকতে পারে ২৯ টি বাড়ি বিশিষ্ট একটি গ্রামে! আর যদি ১০০ বাসিন্দা মারা যায় তবে কতজন বাকি ছিল? “ কঙ্কালগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো খুব তাড়াহুড়ো করে একটির উপর একটি লাশ স্তূপ করা হয়েছিল।”-২০১৮ সালের উক্ত সাইটের প্রত্নতাত্ত্বিক কাগজে প্রকাশ করা হয়।
তবে কিভাবে মারা গেল সেখানকার জনপদ? নৃতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা মারাত্মক সংক্রমনে মারা গিয়েছিল , মহামারী এতটাই বাজে ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে ভয়ে তারা মৃতদেহের সৎকারের ব্যবস্থাও করেনি কবর দেওয়ার আগে।তারা তাড়াতাড়ি লাশগুলোকে জ্বালিয়ে দিয়ে চলে যায় এবং কখনো আর এইস্থানে ফিরে আসেনি। আর গ্রামটি সময়ের সাথে সাথে হয়ে যায় – পরিত্যক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং অনন্তকালের জন্য জনশূন্য।
চীনের জিলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক যারা হামিন মনহা নিয়ে গবেষনা করছিলেন তারা আরও বলেন, মহামারীটি নিয়ে গ্রামবাসী এতটাই ভয়ে ছিলেন যে তারা মৃতদেহগুলিসহ কুড়ে ঘরটিতে আগুন দিয়ে দেন এবং এতে কুটিরের কুচকানো ছাদ ভেঙ্গে গিয়েছিল।গবেষকরা জানেন না যে রোগটি কি হতে পারে – তবে বেশিরভাগেরই ধারণা এটি এমন একটি সংক্রামক যেটা কিনা অতি দ্রুত একটা জনপদের গণ শ্মশানে পরিণত করেছিল।
এমনটা কেবল ভাইরাসজনিত সংক্রামকের দ্বারাই সম্ভব।ওই অঞ্চলের আরও কিছু নিউলিথিক সাইট থেকে একই সময়কালের মধ্যেই কিছু গণসমাধি , পরিত্যক্ত সাইট ও মহামারীর চিহ্ন পাওয়া যায়। হামিন মানহার উক্ত মহামারীটি পৃথিবীর তখনকার উষ্ণজলবায়ুর সময় সংগঠিত হয়েছিল এবং চার সহস্রাধিককাল ধরে স্থায়ী ছিল। এখনও পর্যন্ত জানা সবচেয়ে পুরাতন মহামারীর ঘটনা এটি।আমাদের বর্তমান পৃথিবীর জলবায়ু এখন আগের চেয়েও উষ্ণতম পর্যায়ে আছে। আর চলছে মহামারী কোভিড-১৯ এর আক্রমণ । যার সূচনাও হয়েছে চীনেই।
মহামারী সংকলন-২ ( খৃষ্টপূর্ব ৪৩০ এর এথেন্সের প্লেগ মহামারী )
প্রাচীন গ্রীকে পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধের ২ বছর পর একটি মহামারী এথেন্স শহরকে বিধ্বস্ত করেছিল। এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে । যুদ্ধে তখন জয়ের কাছে পৌছে গিয়ে ছিল এথেন্সিয়ানরা। প্লেগ নামের এই মহামারী ৭৫,০০০ থেকে ১,০০,০০০ মানুষের জীবন নিয়ে নিয়েছিল। ধারনা করা হয়, পাইরেয়াসের মাধ্যমে এথেন্সে প্রবেশ করেছে এই মহামারী।
কারণ, এটিই নগরীর একমাত্র খাদ্য সরবরাহের বন্দর । পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখেছিল। কিন্তু মহামারীর প্রভাব সেখানে কম ছিল। তবে এথেন্সে এই মহামারী ৫ বছর যাবৎ স্থায়ী ছিল।
ঐতিহাসিক থুসিডিডিস এর বর্ণনা অনুযায়ী, “সুস্থ লোকেরা হঠাৎ করেই মাথায় হিংস্র উত্তাপে আক্রান্ত হন এবং তাদের চোখের মধ্যে লালভাব , প্রদাহ, গলা ও জিহ্বার মত অভ্যন্তরীণ অংশ রক্তাক্ত ও একপ্রকার অপ্রাকৃত এবং নিঃশ্বাসে দূর্গন্ধ জাতীয় লক্ষণ দেখা দেয় ।”
এই মহামারীটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেকে এটিকে টাইফয়েড জ্বর বলেন আবার কেউ ইবোলা সহ আরও অনেকগুলো সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসেন।বিজ্ঞ জনেরা মনে করেন যু্দ্ধের ফলে অতিরিক্ত জনসমাগমের সৃষ্টি হয় এবং তা মহামারীকে আরও বাড়িতে তোলে।
স্পার্টার সেনাবাহিনী শক্তিশালী ছিল এবং এথেন্সিয়ানদের তাদের শহরের বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখা দরকার ছিল। তাই তারা বাধ্য হয়ে‘ Long Walls’ নামে ধারাবাহিক দুর্গের পিছনে আশ্রয় নিয়েছিল। মহামারী থাকার সত্ত্বেও যুদ্ধ থামেনি, এটি চলেছিল খৃষ্টপূর্ব ৪০৪ পর্যন্ত, এবং স্পার্টা বাধ্য হয়েছিল এথেন্সকে বন্দি করতে।
আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যেত। আর মৃতদের একের উপর এক কবর করে মাটি চাপা দাওয়া হতো এরপর মৃতের সংখ্যা বাড়লে গণকবর দিয়ে তাদের পুড়িয়ে দেওয়া হতো। খৃষ্টপূর্ব ৪৩০-৪২৬ এর মধ্যে একটি গণকবর পাওয়া গেছে যেখানে ১,০০০ সমাধিসৌধ ছিল।গণকবর একটি নিচু প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল, ধারনা করা হয় জলাভূমি থেকে রক্ষা করার জন্যই প্রাচীর দেওয়া হয়েছিল। আর যারা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরতেন তারাই করতেন আক্রান্ত রোগীদের সেবা।
প্লেগের কারণে ধর্মীয় অনিশ্চয়তা শুরু হয় সবার মাঝে। তারা মনে করতে থাকে দেবতা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন , তাই তাদের প্রার্থনা কোনো কাজে দিবে না। এথেন্সে আসা শরণার্থীরা মন্দিরে আবাসন খুঁজতে বাধ্য হয় এবং মন্দির গুলো অনেক দুর্দশা ছিল। এতে ধীরে ধীরে মৃতের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং তারা ভাবতে শুরু করেন দেবতারাও স্পার্টার প
মহামারী সংকলন-৩ ( খ্রিস্টাব্দ ১৬৫-১৮০ এর অ্যান্টোনিন প্লেগ মহামারী )
যখন আমরা প্লেগ নিয়ে কথা বলি , তখন সাধারণত আমরা সেই প্লেগ নিয়ে কথা বলি যা মধ্যযুগীয় সময়ে লক্ষাধিক ইউরোপীয়ানদের মৃত্যুর কারণ হয়। তবে ইউরোপীয় ইতিহাসে ভিন্নরূপ দেওয়ার এটিই একমাত্র মহামারী ছিল না। ১৬৫ খ্রিস্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যে এক রহস্যজনক মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারীই অ্যান্টেনাইন প্লেগ নামে পরিচিত।
এই মহামারীটি সম্ভবত ১৬৬ খ্রিস্টাব্দে চীনের সিল্ক রোড ধরে পশ্চিম দিক পেরিয়ে বাণিজ্য জাহাজের মাধ্যমে রোমে ছড়িয়ে পড়ে। কখনও কখনও একে গ্যালেনের প্লেগ ও বলা হয়। এই মহামারীর প্রাদুর্ভাব রোমান সাম্রাজ্যকে প্রায় ভেঙ্গে ফেলেছিল। এটি খ্রিস্টাব্দ ১৮০ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এই মহামারী এমন কাজ করেছিলো যা রোহিঙ্গাদের সেনাবাহিনীও করতে পারে নি। খ্রিস্টাব্দ ১৬৫ তে রোম সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে। রোম সাম্রাজ্য ২ জন শাসকের মাঝে বিভক্ত ছিল। দার্শনিক মার্কস অরেলিয়াস এবং যোদ্ধা লুসিয়াস ভেরিয়াসের মধ্যে ভাগ করা ছিল।
ভেরিয়াস যুদ্ধ জয়ের পর বর্তমান ইরান থেকে ফিরে ছিলেন। তিনি ও তার সৈন্যদল মন্দির থেকে লুটকৃত প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরেছিলেন। এবং তারা নিজেদের অজান্তেই পশ্চিম এশিয়া থেকে নিয়ে এসে ছিলেন আরও এক জিনিস। আর তা হলো বসন্তের ভাইরাস।যা পূর্ব এশিয়ায় আগের বছরই মারাত্নক প্রভাব ফেলেছে। সেনাবাহিনী রোমে পৌছাতে পৌঁছাতেই চারিদিক ছড়িয়ে পড়ে। সৈন্যরা যেই যেই জায়গা অতিক্রম করে এসেছিল সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে এই মহামারী ।
প্রথমে এশিয়া মাইনরে, পরে গ্রীসে এরপর ইতালিতে। রহস্যজনক এই মহামারী আগ্নেয়গিরির লাভার মত চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে শুরু করে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইতালির ঘনবসতিপূর্ণ রোমান শহরগুলো। পুরো ভূমধ্যসাগর কেন্দ্রিক বাণিজ্য রোমান রা নিয়ন্ত্রন করতো। বাণিজ্য জাহাজ ও সেনাবাহিনীর ব্যস্ততাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে রোগটি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরের দুইদিক এই মহামারীকে সঙ্গী করেই জীবন চালিয়ে করতে হয়েছে রোমানদের। ১৮০ এর দিকে রোগটি প্রায় শেষ হয়ে যায়। পরে ১৮৯ সালে আবার দেখা দেয় এই রোগ।
এইবার মহামারীটি দৈনিক গড়ে ২,০০০ জন মারা যেত এবং রোমান সাম্রাজ্যের প্রায় ৭-১০% মানুষ মারা গিয়েছিল।ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা গুলোতে মৃত্যুর হার ছিল ১৫% বা এর বেশিও হতে পারে। এমনকি সম্রাটদেরও রেহাই দেয় নি এই মহামারী। লুসিয়াস ভেরিয়াস মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে ১৬৯ খ্রিস্টাব্দে মারা গিয়েছিলেন এবং মার্কস অরেলিয়াস ও একই রোগে ১৮০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তখনকার খ্যাতিমান চিকিৎসক গ্যালেন ছিলেন মার্কস অরেলিয়াসের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ।
তিনি জ্বর, ডায়রিয়া এবং ফ্যারঞ্জাইটিস এর পাশাপাশি উত্তপ্ত ত্বক , কখনও কখনও স্ফীট যা অসুস্থতার নবম দিনে প্রকাশিত হয় ; এইগুলোকে রোগের লক্ষণ বর্ণনা করেছিলেন।অনেকেই মহামারীর আতঙ্কে যাদু টোনার দ্বারস্থ হতে শুরু করেন। একটি বিশেষ মন্ত্র মহামারী চলা কালে পুরো জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং রাজ্যের সকল প্রবেশ পথে লেখা হয়েছিল। বিশেষত যে সকল ঘর খালি ছিল।
মার্কস অরেলিয়াস তার দার্শনিক মেডিটেশন রচনায় উল্লেখ করেন, তার চারপাশে মহামারীর থেকেও যা মারাত্মক ছিল তা হল মিথ্যা, দুষ্ট আচরণ এবং কারোর সত্য আচরণ বোঝার অভাব। তিনি যখন মারা যাচ্ছিলেন তখন তিনি বলে যান , “আমার জন্য কাঁদবেন না; মহামারীর কথা ভাবুন এবং আরও অনেকের মৃত্যুর কথা চিন্তা করুন।
“অসুস্থতার প্রভাব সামরিক ও অর্থনৈতিক দোটানায় সীমাবদ্ধ ছিল না। মার্কস অরেলিয়াস খ্রিস্টানদের উপর নিপীড়ন শুরু করেছিলেন যারা দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অস্বীকার করেছিল। সম্রাট মনে করেছিলেন এজন্যই হয়তো দেবতারা রুষ্ট হয়ে তাদের ধ্বংস করতে মহামারী দিয়েছেন। মহামারী শুধু মানুষের জীবন নিয়ে যায় নি।
পরিবর্তন এনেছিল মানুষের মূল্যবোধের। স্পষ্টতই অপ্রীতিকর ছিল বসন্ত রোগটি পুরো রোমান সম্রাজ্যের উপর প্রভাব ফেলেছিল। তারা হারিয়েছিল জনপদ, হারিয়েছিল সৈন্য, পঙ্গু হয়েছিল বাণিজ্য ও অর্থনীতি। যার ফলে মানুষের মধ্যে ঘটেছিল মূল্যবোধের অবক্ষয় ।
মহামারী সংকলন-৪ ( খ্রিস্টাব্দ ২৫০-২৭১ সাইপ্রিয়ান প্লেগ মহামারী )
সাইপ্রিয়ান প্লেগ মহামারীটি ২৫০ খ্রিষ্টাব্দে ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিস্তার শুরু করে। এক বছর পর এটি ধীরে ধীরে রোমে ছড়িয়ে পরে, এরপর গ্রীসে এবং এরপর আরও পূর্বের দিকে সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সাইপ্রিয়ান প্লেগ মহামারীটি ২০ বছর যাবৎ স্থায়ী ছিল এবং এটি এর সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে রোমে দৈনিক ৫০০০ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।
যুদ্ধের কারণে সীমান্ত একের পর এক হামলা হওয়ার রোম সাম্রাজ্যের নাগরিকেরা দ্রুত প্লেগে আক্রান্ত হতে থাকেন। জার্মানির উপজাতি গাউল এবং পার্থিয়ানরা মেসোপটেমিয়ায় আক্রমণ করেছিল। সম্রাটদের কাজ সম্পাদন হয়ে পড়েছিল অশান্তির ও কঠিন। কারণ খরা, বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের জন্য জনপদ দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কার্টেজের বিশপ সেন্ট সাইপ্রিয়ান মন্তব্য করেছিলেন, “ পৃথিবী শেষের দিকে এমন মনে হয়েছিল।”
সাইপ্রিয়ান প্লেগের নামকরণ করা হয় সাইপ্রিয়ানের নাম অনুসারে যিনি প্রথম এই মহামারীর অসুস্থতার পর্যবেক্ষণ করেন এবং রোগের প্রাথমিক ধারণা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে পরিচিত করিয়েছিলেন । তিনি মহামারী সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ লেখেন তার লেখনী “On Mortality”তে ।
আক্রান্ত রোগীরা ডায়রিয়া, অনর্গল বমি, জ্বর , বধিরতা , অন্ধত্ব , পা এবং পায়ের পাতা অচল ও অনুভূতি শুন্য হয়ে যাওয়া , গলা ফোলা এবং রক্তাক্ত চোখ মুখ – এ জাতীয় লক্ষণের সম্মুখীন হতেন। বেশির ভাগ সময়ই রোগী মারা যেতেন। পৌত্তলিকরা ধারনা করেছিলেন দেবতারা শাস্তি হিসেবে এই ভয়াবহ দুর্দশার মানবজাতিকে দিয়েছেন।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে যেভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে করে প্রাক-খ্রিস্টান সংস্কৃতি অনুসারে অতিপ্রাকৃতিক কিছু বলে দাবি করা হতো রোগটিকে। পরে যদিও পন্ডিত ও ঐতিহাসিকেরা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
প্রাচীন সময়ে রোগ শনাক্তকরণ এবং তার চিকিৎসা করা বরাবরই কঠিন কাজ ছিল কারণ তখনকার প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না এবং তাদের এ ব্যাপারে জ্ঞান ও উপলব্ধির পরিসরও ছিল ছোট। জীবিতদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। এর ভিত্তিতে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে রোগ টি ছড়াতো। এমনকি পোশাকের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতো।
শতাব্দীর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পন্ডিতেরা এই রোগের নানান রকম পরামর্শ দিয়েছিলেন। খৃস্টাব্দের তৃতীয় শতাব্দীতে বুবোনিক প্লেগ, টাইফাস, কলেরা, গুটি, হাম এবং অ্যানথ্রাক্সের জন্য সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজনদের দূরে রাখা হতো। আক্রান্তদের শরীর ফুলে যাওয়া বা অন্য কোনো লক্ষণ উল্লেখ তো হয়নি প্লেগের লক্ষণে।
বিভিন্ন রোগের লক্ষণ একসাথে হয়ে দেখা দিত , যেমন তীব্র কলেরা এবং ম্যানিনজাইটিস। কাইল হপীর্স তার লেখনী “ Pandemics and Passages to Late Antiquity” তে বলেছেন, এই হেমোরজিক জ্বর সম্ভবত ইবোলা ছিল।
এই মহামারীর ছড়িয়ে পড়া সম্বন্ধে প্রথম তথ্য দেন ইতালীর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ২০১৪ সালে। লাক্সারের হারওয়ার ফিউনারারি কমপ্লেক্স থেকে তারা কিছু লাশ পেয়ে ছিলেন। সেগুলোর গায়ে চুন মেখে আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করা হয়ে ছিল। ডিএনএ পরীক্ষার পর তারা প্রমান পেয়েছিলেন ১৮০০ বছর আগে রোমান সাম্রাজ্য ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য
কিছু মহামারী কারণ ছিল। তবে তারা কোনো শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন নি।
এই মহামারীর কারণে ২০০ শতকের মাঝামাঝিতে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় উত্থান হয়েছিল। রোম ও তার আশেপাশে দৈনিক হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছিলো ।যার প্রকোপ ২ জন সম্রাটের জীবন কেড়ে নেয়। ২৫১ সালে হিস্টোলিয়ান ও ২৭০ সালে ক্লোডিয়াস দ্বিতীয় গথিকাসের। এবং এর মধ্যবর্তী সময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দীরা সিংহাসন দাবী করছিল এবং ধরে রাখতে লড়াই করছিল। নেতৃত্বের অভাবে রোমান সৈন্যরা দূর্বল হয়ে পড়ে এবং শহরের বাসিন্দারা পালাতে শুরু করে ও শহর গুলো ফাঁকা হতে শুরু কবে।
কৃষকদের মৃত্যু হতে শুরু করলে তারা ফসল ফলানো বন্ধ করে দেয়।এ ভাবে ধীরে ধীরে রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এ জাতীয় বিশৃঙখলায় শুধু মাত্র নতুন ধর্ম খৃষ্টান ও এই ধর্মাবলম্বীরা উপকৃত হয়। পরবর্তীতে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু বরণ ও করতে তবে তারা এটাকে শহীদ হওয়া বলতেন। এভাবেই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে খ্রিষ্টান ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে।
অসচেতনতাই কিন্তু যেকোনো মহামারী ছড়ানোর প্রধান কারণ। ঘন জনবসতি পূর্ন এলাকায় খুব সহজেই মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। আমরা কোনো একটা পরিস্থিতি তৈরী হলে শুরুতেই সচেতন হই না। অনেক জীবনের ক্ষতির পর আমরা বুঝতে শুরু করি যে এবার আমাদের সচেতন হতে হবে।
মহামারী সংকলন- ৫ (খ্রিস্টাব্দ ৫৪১-৫৪৯ জাস্টিনিয়ার প্লেগ মহামারী)
জাস্টিনিয়ানের শাসনামলে (৫২৭-৫৬৫ খ্রিষ্টাব্দ) এক ভয়াবহ প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল যা কিনা লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এই মহামারী ২২৫ বছর যাবৎ পৃথিবীতে এর আধিপত্য দেখিয়ে ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়। এই মহামারী ৫৪২ খ্রিষ্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলে প্রথম দেখা যায়। তার ঠিক এক বছর পর উক্ত রাজ্যের বাইরে এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে যার শুরু ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে, তারপর পুরো বিশ্বে। এই মহামারী চীন ও উত্তর পূর্ব ভারতে উদ্ভূত হয়। প্লেগটি (ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস) আফ্রিকার গ্রেট লেক অঞ্চলে যায় উপকূলীয় সমুদ্র বাণিজ্যের মাধ্যমে।
জাস্টিনের প্লেগের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল মিশর। সিজারিয়ার বাইজেনটাইন ঐতিহাসিক প্রোকোপিয়াসের মতে, প্লেগের শনাক্তকরণের সূচনা হয়েছিলো নীল নদের উত্তর ও পূর্ব উপকূলে। প্লেগ লেখক ওয়ন্ডি অরেন্টের মতে, এই রোগ-টি দুই দিক থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে (উত্তর দিক থেকে আলেকজান্দ্রিয়া এবং পূর্ব দিকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত)। এই মহামারী-টি ছড়ানোর প্রধান কারণ ছিল কালো ইঁদুর, যেগুলো কিনা শস্য জাহাজ এবং গাড়িতে করে চলে এসেছিলো। অষ্টম খ্রিষ্টীয় শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকা ছিল সম্পদের প্রাথমিক উৎস। শস্যের এবং কাগজ, তেল, হাতির দাঁত এবং দাস সহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্যের।
বৃহৎ গুদাম গুলিতে সজ্জিত শস্য ও খড় ছিল ইঁদুরের জন্য একটি উপযুক্ত প্রজনন কেন্দ্র। যা কিনা রোগটি ছড়াতে সাহায্য করেছিলো। জাস্টিয়ান ফ্লাইয়ার উইলিয়াম রোজেনের মতে, ইঁদুর সব কিছু খেয়ে থাকলেও ইঁদুরগুলির প্রিয় খাবার শস্য । তিনি আরও লক্ষ্য করেছেন যে, ইঁদুরগুলো সাধারণত তাদের জন্মস্থান থেকে ২০০ মিটারের বেশি ভ্রমণ করে না। তাই বলা চলে ইঁদুরগুলো একবার নৌকায় চড়ে, একবার কার্টে চড়ে সারা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়েছিলো। ঐতিহাসিক কলিন ব্যারাসের মতে, প্রোকোপিয়াস উক্ত সময়কালের দক্ষিণ ইতালিতে জলবায়ু পরিবর্তনগুলি রেকর্ড করেছিলেন।
তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে তুষারপাত ও অস্বাভাবিক তাপমাত্রা হ্রাসের ঘটনা ঘটে এবং গড় তাপমাত্রা অনেক কমে যায় সাথে রোদ হ্রাস পেতে থাকে। তাই শুরু হয়েছিলো এক দশক দীর্ঘ ‘Cold Snap’ এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছিলো সামাজিক বাঁধা, যুদ্ধ এবং প্লেগের প্রথম রেকর্ড প্রাদুর্ভাব। স্বাভাবিকের থেকে শীতল আবহাওয়া ফসলের ফলনকে প্রভাবিত করেছিল, এবং এর ফলে খাদ্য সংকটের দেখা দেয় উক্ত অঞ্চলে।
এই এলাকার রোহিঙ্গাদের সংক্রমিত ইঁদুর কামড় দেয় এবং তাদের সংক্রমিত করে। শীতের কারনে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষগুলো যুদ্ধের সময় রোগ, অসুস্থতা এবং সংক্রামক বহনকারী ইঁদুরের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং তা চারদিক ছড়িয়ে যেতে শুরু করে। পুরো পরিস্থিতি মহামারীর অনুকূলে ছিল।
বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিন প্রথমের নাম অনুসারে প্লেগের নামকরণ করা হয় জাস্টিনিয়ার প্লেগ। এই মহামারীতে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক জনগণ প্রভাবিত হয়েছিল। কবর থেকে পাওয়া হাড়ের ডিএনএ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য থেকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাস্টিনিয়ার রাজত্বকাল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের যে ধরণের প্লেগ আক্রমণ করেছিল তা ছিল বুবোনিক (ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস) যদিও এটি খুব সম্ভবত প্রবল সম্ভাবনাময় ছিল।
এটি ছাড়াও দুইটি প্লেগ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। এছাড়া নিউমোনিয়া এবং সেপটিসেমিকও বর্তমান ছিল। বুবোনিক প্লেগ চতুর্থ শতাব্দীর ইউরোপ-কে ধ্বংস করেছিলো। এই মহামারী পৃথিবীর প্রায় অর্ধকোটির মানুষ বা তখনকার সময়ের পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলো। ইতিহাসে এটি ব্লাক ডেথ হিসেবে বেশি পরিচিত। জাস্টিনিয়ার সময়েও প্লেগ ইতিহাসের কোনো নতুন রোগ ছিল না। ওয়েন্ডি ওয়েট পরামর্শ দেয় যে বুবোনিক প্লেগের প্রথম রেকর্ডকৃত বিবরণ পুরাতন টেস্টামেন্টে ফিলিস্তিনীদের গল্প বলা হয়েছিল যেখানে যে Ark of the Covenant চুরি করে ছিল সে “ফুলে” মারা যায়।
প্রোকোপিয়াস তার গুপ্ত ইতিহাসে ভুক্ত ভোগীদের বর্ণনা করেছেন যে, তারা বিভ্রান্তি, দুঃস্বপ্ন, জ্বর এবং কুঁচকে যাওয়া, বগলে এবং কানের পিছনে ফোলা ভাবে ভুগছেন। প্রোকোপিয়াসের বর্ণনা মতে, কিছু ভুক্তভোগী কোমায় পড়ে যান, অনেকে অতিরিক্ত বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। অনেকে মৃত্যুর আগে কয়েকদিন ভুগে তারপর মারা যান, আবার অনেকে লক্ষণ দেখার সাথে সাথেই মারা জান। প্রকোপিয়াসের বর্ণনা অনুযায়ী, এ জাতীয় লক্ষণের কারণ হিসেবে বুবোনিক প্লেগ কে দায়ী করা হয়। তিনি এর প্রাদুর্ভাবের জন্য সম্রাটদের দোষারোপ করেছিলেন। এবং জাস্টিন কে শয়তান বলে ঘোষণা করেছিলেন।
বলেছিলেন জাস্টিনিয়ানের পাপ কাজের শাস্তি সৃষ্টিকর্তা দিচ্ছেন সবাইকে। যুদ্ধ ও বাণিজ্যের জের ধরে পুরো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে প্লেগের বিস্তার ঘটে। জাস্টিনিয়ান তার রাজত্বের শুরুর বছর গুলি বিভিন্ন শত্রুদের পরাজিত করে পার করেছেন। ইতালি নিয়ন্ত্রণে আনতে অস্টোগোথের সাথে যুদ্ধ করেন; উত্তর আফ্রিকা নিয়ন্ত্রণে আনতে ভ্যান্ডাল এবং বারবার্সের সাথে যুদ্ধ করেন এবং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত ফ্রাঙ্কস, স্লাভস, আভারস এবং অন্যান্য বর্বর উপজাতির হাত থেকে রাজ্য কে রক্ষা করেন।
ঐতিহাসিকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, সৈন্যদের নেবার জন্যে পাঠানো ট্রেন এবং তাদের সামরিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। ওয়েন্ডি ওরেন্চ এই রোগের বর্ণনা করে বলেন, সাম্রাজ্যের বাণিজ্য পথে আসা ইঁদুর গুলোর আক্রান্ত মাড়ি এই প্রথম বাহক হিসেব ধরা হয়। এটি কনস্টান্টিনোপলে ৪ মাস প্রাদুর্ভাব চালিয়েছিলো, তবে প্রায় তিন শতাব্দী ধরে স্থায়ী ছিল। এই প্লেগের আক্রমণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে সম্রাট নিজেও আক্রান্ত হন, যদিও তিনি মারা যান নি। রাজধানীর বাস্তায় মৃতদের লাশ স্তূপ আকারে পড়ে ছিল। জাস্টিনিয়ান সৈন্যদের মৃতদের সৎকার করতে সহায়তা করার আদেশ দিয়েছিলেন।
এক বারে কবর খুঁড়ে তাতে লাশ গুলো দিয়ে তাদের মাটিচাপা দেওয়া হয়। জায়গা শেষ হয়ে গেলে লাশ গুলো সাগরে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। শুধুমাত্র আক্রান্ত মানুষই নয় বিড়াল কুকুরসহ সকল প্রাণীর মরদেহ নিশ্চিহ্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। যখন মানুষের জন্যে কোনো চিকিৎসা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন তারা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল, আশীর্বাদী পাউডার , জাদু তাবিজ , আংটি ইত্যাটিতে বিশ্বাস করতে শুরু করে।
পরবর্তীতে তারা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হাসপাতালের চিকিৎসার উপরে ভরসা করতো। প্লেগের কারণে রাজনীতি ও অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে লম্বার্ডস উত্তর ইতালি আক্রমণ করে সফল হয়েছিলো এবং ছোট বাইজেন্টাইন হ্যারিসনকে পরাজিত করেছিলো , যার ফলে ইতালীয়ান উপ-দ্বীপে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয় ।
প্রকোপিয়াস বলেছেন, কনস্ট্যান্টিনোপলে দৈনিক ১০,০০০ মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে , রাজধানীতে দৈনিক ৫,০০০ মৃত্যু অনুমান করা হতো, এর সত্ত্বেও কনস্টান্টিনোপলের ২০-৪০% বাসিন্দা অবশেষে মারা যায় এবং পুরো সাম্রাজ্যের প্রায় ২৫% মানুষ মারা যায়।
যে কোনো মহামারী-ই অর্থনৈতিক , সামাজিক ,ধর্মীয় ও খাদ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং যার কারনে এর বিস্তার প্রকট হয়। তাই মাথা ঠান্ডা করে ভেবে চিন্তে বুদ্ধিমানের মত পদক্ষেপ নিলেই এসকল মহামারীতে মৃত্যুর ও ক্ষয়ক্ষতির হার হ্রাস করা সম্ভব।
পারমিয়ান (Permian)গনবিলুপ্তি পরবর্তী বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে ৩ মিলিয়ন সময় বছর নেয়
পার্মিয়ান (Permian) সময়ের শেষ ভাগে স্বাদুপানির জলাশয় যেমন নদী এবং বিল এই সমস্ত জলাধারে বিদ্যমান বাস্তু সংস্থান এর পুনরুদ্ধার এর সময় অনেক দেরিতে সম্পন্ন হয়। সাধারণভাবে জলাশয় এর বাস্তুসংস্থানের পারমেন সময়ের গণবিলুপ্তির ধ্বংসাত্মক প্রভাবের কারণে পুনরুদ্ধার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
কিন্তু স্থলভাগের বনায়ন উজার করা বৃহৎ আকারে মাটির ক্ষয় সাধন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই ধরনের জলাশয়গুলোতে ক্ষতিকর অ্যালগি ও ব্যাকটেরিয়া সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে স্বাদুপানির বাস্তুসংস্থানের স্বাভাবিকের তুলনায় পুনরুদ্ধার দেরি হয়। বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে এই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
তারা দাবি করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বন উজাড় হয়ে যাওয়া মূলত অণুজীব বিশেষত ক্ষতিকর অণুজীবগুলো বৃদ্ধি ঘটে যার কারণে কয়েক মিলিয়ন বছর সময় সময় দেরি হয় স্বাদুপানির বাস্তুসংস্থান এর পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে। কারণ 252 দশমিক 2 মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া পার্মিয়ান (Permian) গণবিলুপ্তির সময়ে পৃথিবীর স্থলভাগ ও জলভাগের 70 % ও 95% যথাক্রমে প্রাণীর বিলুপ্ত হয়।
এর প্রভাব স্থলভাগের স্বাদুপানির বাস্তুসংস্থানের উপর ও পড়ে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বন উজাড় হয়ে যাওয়া এবং মাটির ক্ষয় সাধন হওয়ার কারণে ক্ষতিকর অ্যালগি ও ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিলে স্বাদু পানিতে বাস্তুসংস্থান স্বাভাবিক অবস্থার থেকে দেরিতে পুনরুদ্ধার হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এলাকাতে নেচার কমিউনিকেশন জার্নাল প্রকাশিত গবেষণায় ক্রিস মে বলেন, তারা ফসিল পাললিক শিলা থেকে উদ্ধারকৃত ভূ রাসায়নিক তথ্য নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন যে স্বাদুপানির অথবা লবণ মিশ্রিত ব্রাকিশ জলাধারে অ্যালগি বৃদ্ধি পায়।
পার্মিয়ান (Permian) সময়ের গণবিলুপ্তির পরে বাস্তুসংস্থানের পুনরুদ্ধারের পূর্বেই এই ধরনের ক্ষতিকর এলজি প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং এটা প্রায় 100 হাজার বছর ধরে চলতে থাকে। পরবর্তী ৩ মিলিয়ন বছর ধরে অ্যালগি ও ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে যেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা এবং বিল ও নদীগুলো বিষাক্ত হয়ে যায়।
এভাবে ভূতাত্ত্বিক সময়ের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় ক্ষতিকর অণুজীবগুলোর প্রাদুর্ভাব স্বাদুপানির জলাধার গুলোতে বাস্তুসংস্থানের পুনরুদ্ধারের জন্য একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, যার সময়সীমা ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত গণবিলুপ্তির ঘটনা পর্যন্ত ।
অ্যালগি ও সালোকসংশ্লেষণ ব্যাকটেরিয়াগুলো ভূমিকা কি?
অ্যালগি ও সালোকসংশ্লেষণ ব্যাকটেরিয়াগুলো জলাধারের খাদ্য চক্রের মূল ভিত্তি। কিন্তু তাদের অধিক প্রবৃদ্ধি জলজ প্রাণীর জন্য হুমকিস্বরূপ। অধিক পরিমাণে এই অ্যালগি ও ব্যাকটেরিয়াগুলো বৃদ্ধি পেলে যেকোনো জলাধারে বিদ্যমান জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং কিছু বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়।
যখন ওই জলাধারে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া অ্যালগি গুলো মারা যায় গুলোর মারা যায় এবং পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। যেকোনো জলাধারের ব্যাকটেরিয়া গুলোর বৃদ্ধি মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অধিক পুষ্টি বিশেষত ভূমিক্ষয় হওয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। যেহেতু কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে ক্ষতিকর অণুজীবগুলো প্রবৃদ্ধি সম্পর্কিত তাই বলা যায় ভবিষ্যতেও এই ক্ষতিকর অণুজীবগুলো বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠিক একই রকম বৈশ্বিক উষ্ণতা সম্পন্ন পরিবেশ বিদ্যমান ছিল আজ থেকে 252 দশমিক 2 মিলিয়ন বছর আগের পৃথিবীতে যাকে বলা হয় পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি সময়।
পার্মিয়ান (Permian) গণবিলুপ্তির সময়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যায় 6 থেকে 12 ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কোথাও 10 থেকে 14 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত যেখানে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পায় প্রায় 600 শতাংশ। এসব ঘটে মূলত বর্তমান সাইবেরিয়াতে বৃহৎ আকারের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে স্থলভাগের যে ক্ষতিটা হয় তারমধ্যে জলাভূমিতে বিদ্যমান গাছপালার ধ্বংস এবং পূর্ব এশিয়াতে কয়লা উৎপাদনকারী বৃক্ষের পতন।
এইগুলোর প্রত্যক্ষ প্রমাণ সমস্ত পৃথিবীব্যাপী রয়েছে এবং একটি বৈশ্বিক কয়লার শূন্যতা তৈরি করে পাললিক শিলায় স্তরে প্রমাণ পাওয়া যায় যার সময়সীমা ব্যাপ্তি ছিল কয়েক মিলিয়ন বছর।
তবে পরবর্তীতে বাস্তুসংস্থানের পুনরুদ্ধারের বিষয়ে খুব বেশি জানা যায় না কারণ বাস্তুসংস্থান এর স্থান থেকে কমসংখ্যক তথ্য-প্রমাণাদি সম্পন্ন জৈব যৌগ পাওয়া যায় এবং বৃহৎ আকারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং প্রত্যক্ষ প্রমাণের সাক্ষী স্বরূপ পাললিক শিলার না থাকা এবং ফসিল ও স্থলভাগের ওই সময়ের প্রমাণাদির পাথরের স্তর না থাকা।
পারমিয়ান সময়ে ২৫.৪ কোটি বছর পূর্বে পরপর দুবার স্থলভাগের ইকো সিস্টেমের ধ্বংস
পারমিয়ান ট্রায়াসিক গন বিলুপ্তি একটি বহুল আলোচিত দুর্যোগ । পারমিয়ান এর শেষ সময়ে ২৫.৪ কোটি বছর পূর্বে সমুদ্রের গণ বিলুপ্তির সময়ে বৃহৎ আকারে মাটি ক্ষয় সাধন বা সয়েল ইরোসন ও স্থল ভাগের ইকো সিসটেম ধ্বংস হয়। যদিও সুনির্দিষ্ট সময ও এর ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ এখনো সম্পর্নভাবে জানা সম্ভব হয় নি।
দক্ষিণ চীনের একটি জায়গা নাম সাংশি যা কিনা পারমিয়ান সময়ের সমুদ্রজাত পাললিক শিলা মজত আছে। তাছাডা জাওহিবিয়ান নামে আরও একটি জাযগা সেখানে স্থলজ ভাগের পাললিক শিলা মজুত আছে। সেখান থেকে স্যাম্পল হিসাবে পাললিক শিলা নিয়ে তার নির্যাস বের করে সেগুলো থেকে বায়োমার্কার এর উপস্থিতি দেখে প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা বলি সঠিক ভাবে বের করা সম্ভব।
পৃথিবীতে গত ৫৪ কোটি বছর সময়ের মধ্যে পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের ( আজ থেকে ২৫.৪ কোটি বছর আগে) গন বিলুপ্তি ঘটনা হল সবথেকে বৃহৎ জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের ঘটনা । এ সময়ে প্রায় সমুদ্রের ৮০-৯০ শতাংশ প্রাণী মারা যায় এবং স্থলভাগে ৭০ শতাংশ প্রাণী মারা যায়। এই গন বিলুপ্তি জল ও স্থলভাগ উভয় স্থানেই সংগঠিত হয়েছিল।
এক নজরে ফলাফলঃ
গবেষকরা এখনো স্থায়ী কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি যে, স্থল ভাগের বৃক্ষ কুল ধ্বংস জলভাগের প্রাণী ধ্বংসের সাথে সাথেই ঘটেছে নাকি আগে অথবা পরে ঘটেছে। সেই অজানাকে গবেষণার মাধ্যমে উদ্ঘাতন করার জন্য এই বর্তমান গবেষণার সূচনা করা হয়েছে।
পারমিয়ান সময়ের শেষ ভাগে সমুদ্রের গন বিলুপ্তির আগে দুইটি আলাদা আলাদা সময়ে কয়েক ডজন কিলো বছর এর মধ্যে দুটি পৃথক ভূমি বাস্তুসংস্থার ধ্বংসের ঘটনা ঘটে যেখানে অধিকাংশ বৃক্ষরাজির ধ্বংস হয়। স্থলজ ভূখণ্ডে ব্যাকটেরিয়া র প্রাদুর্ভাব ঘটে সাথে সাথে বৃক্ষরাজি কমতে শুরু করে।
সেই সাথে ২৫.৪ কোটি সময়ে সমুদ্রের গন বিলুপ্তির সময়ে ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে । এর পরে সমুদ্রের গন বিলুপ্তির কয়েক ডজন কিলো বছর পরে কিছু গুল্ম জাতীয় গাছপালার উৎপত্তি হয়। এটা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে এবং সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেন এর মাত্রা একেবারেই ছিল না অথবা সামান্য কিছু আছে এই অবস্থায়।
জাপানের তোহকু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রফেসর কুনিও কাইহো র নেতৃত্বে গবেষণা পরিচালিত হয়। প্রধান গবেষক বাংলাদেশের পটুয়াখালীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ রমন কুমার বিশ্বাস ও সহ গবেষক জাপানের রিও সুকে সাইত কাজ করেছেন। ডঃ রমন কুমার বলেন, এটা সত্যি একটা আনন্দের বিষয় যে নতুন একটি জ্ঞান সৃষ্টি হল । গবেষকদের কাজই নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। পারমিয়ান সময়ের গণ বিলুপ্ত তে স্থলজ ও জলজ ভাগের গণ বিলুপ্তিতে কোন সর্ম্পক ছিল কিনা তা অমিমাংশিত ছিল
২৫.৪ কোটি বছর আগে পর পর দুটি জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের ঘটনায় নতুন গবেষণা
পৃথিবীতে গত ৫৪ কোটি বছর সময়ের মধ্যে পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের ( আজ থেকে ২৫.৪ কোটি বছর আগে) গন বিলুপ্তি ঘটনা হল সবথেকে বৃহৎ জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের ঘটনা । এ সময়ে প্রায় সমুদ্রের ৮০-৯০ শতাংশ প্রাণী মারা যায় এবং স্থলভাগে ৭০ শতাংশ প্রাণী মারা যায়। এই গন বিলুপ্তি জল ও স্থলভাগ উভয় স্থানেই সংগঠিত হয়েছিল।
গবেষকরা এখনো স্থায়ী কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি যে, স্থল ভাগের বৃক্ষ কুল ধ্বংস জলভাগের প্রাণী ধ্বংসের সাথে সাথেই ঘটেছে নাকি আগে অথবা পরে ঘটেছে।
জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর কুনিও কাইহ এর নেতৃত্বে এক দল গবেষক এই গবেষণা পরিচালিত করেন। এর মধ্যে প্রধান গবেষক বাংলাদেশের আফতাবুজ্জামান রনি, ডঃ রমন কুমার বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক , পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের রিয়োসুকে সাইতো সহ অনেকে এই গবেষণায় কাজ করেন।
আফতাবুজ্জামান রনি বলেন, এটা পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তির গবেষণায় একটা নতুন জ্ঞান সংযুক্ত করলো। এ অনুসন্ধান সত্যি আনন্দের যে ২৫.৪ কোটি বছর পারমিয়ান সময়ে সমুদ্রের গন বিলুপ্তির সময়ে ও আগে দুইটি আলাদা আলাদা সময়ে দুটি পৃথক ভূমি বাস্তুসংস্থার ধ্বংসের ঘটনা ঘটে যেখানে অধিকাংশ বৃক্ষরাজির ধ্বংস হয়। এতো দিন স্থলভাগের সাথে সমুদ্রের গনবিলুপ্তির যে সম্পর্ক রয়েছে তা অজানা ছিল।
এই গবেষণায় বৃক্ষ রাজি থেকে নির্যাস নরমাল অ্যাল্কেন/মোট অ্যাল্কেন অনুপাত, প্রিস্টেন/ফাইটেন অনুপাত ইত্যাদি বায়োমারকার যেগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যেমন ইতালি, চীন, ভারত ও জাপানের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীর সমুদ্রও ও স্থল ভাগের স্থান থেকে নমুনা নিয়ে টেরেস্ট্রিয়াল প্লান্ট ইনডেক্স ও সমুদ্রের রেডোক্স ইনডেক্স বের করা হয়েছে যা থেকে বৃক্ষ রাজির ধ্বংস পরিমাপ করা যায়।
সমুদ্রের রেডোক্স ইনডেক্স মূলত সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেন এর মাত্রা কেমন ছিল অথবা একেবারেই ছিল না কিনা এটা নির্ণয় করা যায়। বিভিন্ন সমুদ্রের পানির রেডোক্স ইনডেক্সের সাথে প্রিস্টেন /ফাইটেন এর তুলনা করা হয়েছে। এই দুই প্রক্সি সিদ্ধান্ত দেয় যে বৃক্ষ রাজির ধ্বংস দুইটা আলাদা আলাদা সময়ে ঘটেছে। একটা সমুদ্রের গন বিলুপ্তির কয়েক দশক হাজার বছর পূর্বে আর একটা সমুদ্রের গন বিলুপ্তির সাথে সাথে।
ভূপৃষ্ঠের বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসের কারণে সমুদ্র ও নিকটের জলাশয়ে অ্যালগি জাতীয় অণুজীবের বংশ বৃদ্ধির কারণে জল ভাগে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই ঘটনা মূলত পারমিয়ান সময়ের শেষ ভাগে গাছ পালা ও বৃক্ষ রাজির ধ্বংসের কারণে বৃহৎ পরিসরে ভূমির মাটি ক্ষয়ের ফলে জলাশয়ে ও সমুদ্রে সায়ানোবাক্টেরিয়া জাতীয় অণুজীবের উত্থানের কারণে হয়।
এই গবেষণার ফলাফল আরও সংক্ষেপে বলা যায়ঃ
১। পারমিয়ান সময়ের শেষ ভাগে সমুদ্রের গন বিলুপ্তির সময়ে ও আগে দুইটি আলাদা আলাদা সময়ে দুটি পৃথক ভূমি বাস্তুসংস্থার ধ্বংসের ঘটনা ঘটে যেখানে অধিকাংশ বৃক্ষরাজির ধ্বংস হয়।
২। এর পরে ২৫.৪ কোটি বছর আগের পারমিয়ান সময়ে বৃক্ষ রাজির সম্পূর্ণ ধ্বংস যজ্ঞের ঘটনা ঘটে।
৩। পারমিয়ান সময়ের সমুদ্রের গন বিলুপ্তির কয়েক ডজন কিলো বছর পরে আবার বৃক্ষরাজির পুনরুদ্ধার বা রিকভারি হয়।
৪। তবে এই বৃক্ষরাজির পুনরুদ্ধার বা রিকভারি পৃথিবীর স্থান ভেদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে।
৫। বিরূপ পরিবেশ বিদ্যমান থাকার সময়ে সায়ানোবাক্টেরিয়া জাতীয় অণুজীবের উত্থান হয় যা কিনা সমুদ্রের প্রাণী ধ্বংসের জন্য দায়ী।
পৃথিবীতে মানুষ কত দিন টিকতে পারবে?
একটা শিশু জন্ম নেবার পর তাকে তিলে তিলে গড়ে তোলে মা বাবা। বিছানা থেকে পড়ে গেলে অথবা আগুনে হাত দিলে কি হবে সেটা সে জানে না । শিশুটি কিছুকাল প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণে যেমন প্রাণীকুল জীবন কাটায় তেমনি বেড়ে ওঠে। যখন বুদ্ধি আরও পরিপক্ক হয় সে দেখে একটা পরিবেশ যেখানে মা বাবা আত্মীয় স্বজন তাকে অতি আদরে স্নেহে বড় করে।
শিশুটি অনুভব করে সে একটা গণ্ডির মধ্যে আছে যেখানে আদর স্নেহ মায়া রয়েছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এই পৃথিবীতে । কল্পনাতীত কোটি কোটি আলোক বর্ষ দূরে আরও কোনও অধিকতর বুদ্ধি মান প্রাণ আছে কি না কে জানে ?
শিশুটি যখন বড় হতে থাকে সে শুধু তার দৃষ্টির পরিধির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে। আর সেভাবেই তার কল্পনা শক্তি নির্ধারিত হয়। মেঘ মুক্ত রাতের আকাশে তাকালে আমাদের দৃষ্টির সীমা কয়ে কয়েক লক্ষ আলোক বর্ষ দূরে পর্যন্ত যায়। কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে প্রাচীন মানুষ জানত না আর এখন আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। এখনো অনেক মানুষ সেটা উপলদ্ধি করতে পারে না। এজন্য দরকার দূরদৃষ্টি।
মহা বিশ্বের বিশালতার কাছে মানুষ আসলেই অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র।
প্রাচীন পৃথিবী থেকে বর্তমান পৃথিবীর ঘটনাবলী ও প্রকৃতির নিয়ম কানুন সমন্ধে মানুষ অনেক কিছুই জেনেছে। মানুষ ই এই জ্ঞান পৃথিবী ব্যাপি ছড়িয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানী কোপারনিকাস প্রথম যেদিন বলেছিলেন পৃথিবী নয় সুর্যই সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে তখন কেউ বিশ্বাস করেনি। এজন্য তার জীবন দিতে হয়েছে।
এখন আমরা বর্তমান পৃথিবীর সুদূর অতীতে কি কি ঘটেছিল বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ভিত্তিতে এক ঝলক দেখে আসা যাক।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির সর্বজন স্বীকৃত মতবাদ Big Bang বিগ ব্যাং থিওরী বলে আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন বছর আগের স্বতস্ফূর্ত বিস্ফোরণ থেকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি। এর পর অনেক কাল অতিবাহিত হয়েছে যখন পৃথিবীতে প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়। আজ থেকে ৫৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে অতি বৃহৎ ৫ টি প্রাণ ধ্বংসকারী ঘটনা ঘটে। এই ধ্বংসকারী ঘটনাগুলোর প্রতিটির মধ্যে সময়ের ব্যবধান এত বেশি যে মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনের তুলনায় কিছুই না।
মহা বিশ্বের এই বিশালতার মধ্যে মানুষই সেরা জীব। মানুষ সেরা জীব কিন্তু তাঁরা কতদিন পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে? কারণ প্রকৃতির নিয়মের কাছে মানুষ এখনও অসহায়। যেমন পৃথিবীর বুকে মহা শূন্য থেকে একটি উল্কা পড়লে যে ক্ষতি হবে তার প্রতিরোধ করার সক্ষমতা এখন পর্যন্ত মানুষের নাই।
মানুষ যদি এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে আবাস গড়তে পারে তবেই মানুষের বিলুপ্তি হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার ” Brief answer to the Big question” বইটিতে সে সমন্ধে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি আরো পৃথিবীর মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে মানুষ যদি অন্য কোনো গ্রহে আবাস গড়তে না পারে তবে ৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবী তে একদা বসবাসকারী ডাইনোসদের মত করুন পরিণতি হবে।
৫৩০ মিলিয়ন বছর থেকে আজ অবধি ঘটনা গুলো পর্যালোচনা করলে দেখাযায়, বৃহৎ ধ্বংসাত্মক ঘটনা গুলো একটি নিয়মিত ঘটনা।
১। অরডোভিসিয়ান- সিলুরিয়ান গণ বিলুপ্ত:
এটা ঘটেছিলো ৪৪৪ মিলিওন বছর পূর্বে।
কারণ: পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল তুষারে আচ্ছাদিত হবার কারণে। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধ্বংসাত্মক গণ বিলুপ্তি। মোটামুটি ৮৫% প্রাণী মারা যায়।
২। লেট ডেভোনিয়ান গণ বিলুপ্তি:
এটা ঘটেছিলো ৩৮৬-৩৫৯ মিলিয়ন বছর আগে। ২০ মিলিয়ন সময়ের মধ্যে মারা গিয়েছিল ৭৫ শতাংশ প্রাণী। ডিভোনিয়ান সময়ের গণ বিলুপ্তি কয়েক টি সিরিজ আকারে ঘটেছিলো। এর মধ্যে একটি ঘটনাকে বলে কেলোয়াসার ইভেন্ট। এই সময়ে হঠাৎ করে অক্সিজেন লেভেল পর্যাপ্ত পরিমাণে কমে যায়, এবং ওই সময়ে সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণী যেমন, কোনো ডন্ট, অক্টোপাস, সহ বিপুল পরিমাণে প্রাণী মারা যায়।
Kellwasser event ঘটেছিলো ৩৭২ মিলিয়ন বছর আগে। অক্সিজেন লেভেল কমে যাবার কারণে সামুদ্রিক স্পঞ্জ, কোরাল রিফ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন প্রাণীও মারা যায়।
কারণ:
লেট ডেভোনিয়ান গণ বিলুপ্তির প্রকৃত কারণ বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিক ভাবে বলতে পারে না তবে অগ্নেয়গিরির উদগীরণ একটি প্রধান কারণ হতে পরে। বর্তমান। সাইবেরিয়ার অবস্থিত Viluy Traps উদগীরণ যা কিনা ২৪০০০০ ঘন মাইল পরিমাণ লাভা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কেলওয়াসার ঘটনার সময়ের মধ্যে ঘটেছিলো।
এর ফলে বিপুল পরিমাণ গ্রীন হাউস গ্যাস ও সালফার ডাই অক্সাইড যথাক্রমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও অ্যাসিড বৃষ্টি সৃষ্টি করেছিল। মহাশূন্যে থেকে উল্কাপাত এর একটা কারণ হতে পারে বলে কিছু কিছু বিজ্ঞানী মত দিয়েছে।
যদিও এটা খুব অবিশ্বাস্য মনে হবে কিন্তু এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের প্রচুর গবেষণা রয়েছে যে স্থলভাগের গাছপালা সামুদ্রিক প্রাণীর গণ বিলুপ্তির কারণ। বোঝার সুবিধার জন্য কথা সম্ভব বিস্তারিত বলা হলো। Devonian সময়ের গাছপালা গুলো প্রকৃতির আশীর্বাদে স্টেম সেল ও ভাসকুলার সেল উপর্যপরি উন্নতির কারণে প্রকৃতিকে গাছ পালা গুলোর অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এবং গাছপালা গুলোর মূল শিকড় মাটির অধিকতর গভীরতায় পৌঁছে যায়। যার ফলে মাটি ও পাথরের ক্ষয় হওয়ার হার বৃদ্ধি পায়। যত বেশি পাথরের ক্ষয় সাধিত হবে তত বেশি মাটির খনিজ পদার্থ ও মৌলিক উপাদান সমুদ্রের পানিতে মিশে হবে। অধিক পুষ্টি উপাদানের ফলে পানিতে অধিক আলজি (algae) অণুজীব তৈরি হবে।
এবং এগুলো মারা গেলে পচনের সময় অধিক দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। যার ফলে সমুদ্রের পানিতে একটা সময় অক্সিজেন স্বল্পতা হয়। এই অঞ্চলকে ডেড জোন dead zone বলে। ফলে সমুদ্রের প্রাণী ধীরে ধীরে মারা যায়। সেই সাথে অধিক গাছপালার কারণে CO2 কার্বন ডাই অক্সাইডের স্বল্পতায় বৈশ্বিক ঠান্ডা (Global Cooling Event) জলবায়ু হওয়া য় প্রাণীর সঙ্কটাপন্ন অবস্থা হয় এবং প্রাণী মারা যায়।
৩। পার্মিয়ান – ট্রায়াসিক গণ বিলুপ্তি:
এটা ঘটেছিলো ২৫২.২ মিলিয়ন বছর আগে। মারা যায় ৯৬ শতাংশ সামুদ্রিক প্রাণী ও ৭০ শতাংশ স্থলজ প্রাণী। Permian Triassic গণ বিলুপ্তি কে বলা হয় Great Dying কারণ এই সময়েই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি প্রাণী মারা যায়। মাত্র ৬০০০০ ষাট হাজার বছরের মধ্যে এত প্রাণী মারা যায়। পৃথিবীর বনাঞ্চল মোটামুটি পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১ কোটি বছরের আগে আর কোনো পরিপূর্ণ গাছ পালা দেখা যায় নি। সামুদ্রিক প্রাণী ধ্বংস হবার পর ৬০-৮০ লক্ষ বছর সময় নিয়েছিল পুনরায় প্রাণীর পরিপূর্ণ ভাবে সংখ্যা বৃদ্ধি হতে।
কারন: বর্তমান রাশিয়াতে অবস্থিত সাইবেরিয়া থেকে আগ্নেয় গিরির উদগীরণ। এই উদগীরণ শুধু একক কোনো উদগীরণ এর ঘটনা নয়। দীর্ঘদিনের বহু সংখ্যক উদগীরণ ঘটনা। যার ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে স্থলভাগের সমস্ত গাছপালা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি সাধিত হয় এবং ধ্বংস হয়। যার ফলে মাটির ক্ষয় সাধন ত্বরান্বিত হয়। সমুদ্র তীর বর্তী এলাকাকে যা সমুদ্রের পানিতে মিশে অধিক খনিজ সমৃদ্ধ করে যার ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীব সৃষ্টি হয় অধিক পরিমাণে। এই অণুজীব যেমন অ্যালগী, সমুদ্রের দ্রবীভূত অক্সিজেনের সংকট তৈরি করে ফলে দীর্ঘ মেয়াদ এ বড় প্রাণী গুলোও মারা যায়।
৪। ট্রিয়াস্যাসিক – জুরাসিক গণ বিলুপ্ত
পর্মিয়ান ট্রিয়াসিক সময়ে উদ্ভিদ রাজির পুনঃ স্থাপন হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কিন্তু যখন একবার গাছপালা গুলমো বৃক্ষরাজি জন্মাতে থাকে তখন থেকে এদের প্রাচুর্যতা অধিক হয়।
বিশেষ করে ঘাস জাতীয় গুলম ও চারণ ভূমি বৃদ্ধি পায় আর এতে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় এবং archosaurs পক্ষিকুলের পূর্বসুরী ও কুমির প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ২০১ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবী আরও একটি বৃহৎ গণ বিলুপ্তির শিকার হয়। এটাকে বলে ট্রিয়াস্যাসিক – জুরাসিক গণ বিলুপ্ত। এসময় ৮০% জলজ ও স্থলভাগের প্রাণী ধ্বংস হয়।
Triassic যুগের শেষে পৃথিবী ৫-১১ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় কারণ CO2 বৃদ্ধি পায়। এর প্রধান কারণ হল তৎকালীন পৃথিবী পাঞ্জিয়া নামক একটি সুপার কন্টিনেন্ট (মুল ভূখণ্ড) ছিল সেখানে অবস্থিত সেন্ট্রাল আটলান্টিক মাগ্মাটিক প্রভিঞ্চ (Central Atlantic Magmatic Province) থেকে বিপুল পরিমাণ লাভা উদ্গিরন হয় যেখান থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয় (কার্বন ডাই অক্সাইড) যার বিস্তৃতির পরিমাণ ছিল বর্তমান আমেরিকার সম্পূর্ণটাই।
যা কিনা কন্টিনেটাল ড্রিফট এর কারণে বা মহাদেশ টি বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব ভাগ, উত্তর আমেরিকার পূর্ব ভাগ এবং পশ্চিম আফিকা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল পরিমাণ নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড সমুদ্রের জলরাশিকে আসিডিক করে তোলে যার ফলে সমুদ্রের প্রাণী মারা যায়।
কিছু বিজ্ঞানী প্রমাণ পেয়েছেন যে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ও সালফার ডাই অক্সাইড এর কারণে এসিড বৃষ্টি এই ট্রিয়াস্যাসিক – জুরাসিক গণ বিলুপ্ত র প্রধান কারণ। অন্য বিজ্ঞানীরা ধূমকেতু অথবা উল্কা পাত কারণ হিসাবে ধারনা করেছে। এ সময় পৃথিবীর ৮০% প্রাণী ধ্বংস হয়। এর মধ্যে বিভিন ধরনের স্তন্য পায়ী প্রাণী যেগুলো প্রবর্তিতে ডাইনোসর এ বিবর্তন হয়েছিল।
৫। ক্রিটেসিয়াস – প্যালিওজিন গণ বিলুপ্ত
ক্রিটেসিয়াস – প্যালিওজিন গণ বিলুপ্ত হল সাম্প্রতিক সময়ের গন বিলুপ্তির ঘটনা। এর মুল কারণ ছিল উল্কা পাত। ডাইনোসর সহ ৭৬% প্রাণী ধ্বংস হয় ।
কারণ: একদা, প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ৭.৫ মাইল আকারের (ব্যাস) উল্কা বর্তমান মেক্সিকোর Yucatan Peninsula ( ছিক্সুলাভ) নামক জায়গা তে ৪৫০০০ কিমি/ঘন্টা বেগে একটি উল্কা আছড়ে পড়ে। ১২০ মাইল বিস্তৃত একটি Crater ( আঘাতের ফলে সৃষ্ট গর্ত) তৈরি হয় এবং বিপুল পরিমাণ ধুলা, বালি, পাথর, আগুন ও সালফার বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবী ক্ষণকালের জন্য সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হয় এবং সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড থাকা পরিবেশ।একে বলা হয় বিশ্ব শীতলতা।
৯০০ মাইল বিস্তীর্ণ এলাকায় গাছপালায় আগুন ধরে যায় সমুদ্রে সৃষ্টি হয় সুনামি। রাতারাতি পরিবেশ ধ্বংস হতে শুরু করে। এছাড়া ইন্ডিয়াতে অবস্থিত ডেকান ট্র্যাপ উদ্গিরিন হতে শুরু করে। কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন ডেকান ট্র্যাপ উদ্গিরিন মূলত উল্কা পাতের ফলেই শুরু হয়েছিল যা কিনা ক্রিটেসিয়াস – প্যালিওজিন গণ বিলুপ্ত ঘটনা তরান্বিত করে। এই ধ্বংসাত্মক ঘটনা পরবর্তী পৃথিবীতে নতুন নতুন প্রজাতি বিবর্তন হয়। সম্ভবত মানুষ সৃষ্টি ও এই বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি অংশ।
৬। বর্তমান সময়ের গন বিলুপ্তি (ষষ্ঠ গন বিলুপ্তি)
বর্তমান পৃথিবী ইতিমধ্যেই ষষ্ঠ গন বিলুপ্তির সম্মুখীন হতে শুরু করছে। পৃথিবী এখন তার জীব-বৈচিত্র্য হারাচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মানুষের সৃষ্ট বনায়ন ধ্বংস, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, পশু পাখি নিধন এর জন্য ১০ লক্ষ প্রাণী ও গাছাপালার প্রজাতি বিলুপ্তির সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। আরও অন্যান্য গুরুত্ব পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মানুষ সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি।
বর্তমান সময়ের গন বিলুপ্তির হার অতীতের যে কোন সময়ের থেকে অধিকতর। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তবে পরবর্তী ৫০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী একটা বড় গন বিলুপ্তির মুখে পড়বে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছে। এখন আমরা আমাদের চারিপাশে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণী দেখি। যা পরিবেশে জীব বৈচিত্র্য স্বাভাবিক রাখতে পারবে না।
কারণ প্রতিটি প্রাণী একে ওপরের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য চক্র ভেঙ্গে পড়বে। স্বাভাবিক নিয়ম হল বড় প্রাণী ছোট প্রাণীকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। এখন মানুষ অনেক বেশি প্রযুক্তির সহায়তায় গুটি কয়েক প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে যা নিকট ভবিষ্যতে প্রাণীকুলের জন্য হুমকি সরূপ।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি দীর্ঘ মেয়াদী ঝুঁকি। অতীতের বৃহৎ আকারের আগ্নেয় গিরির উদ্গিরন যে ক্ষতি করছিল মানুষ জীবাশ্ম জালানি পুড়িয়ে অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে সে কাজ ই করছে। মানুষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত জীবাশ্ম জালানি পুড়িয়ে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করেছে তা সাইবেরিয়াতে পার্মিয়ান – ট্রায়াসিক গন বিলুপ্তির সময়ের উদ্গিরিত কার্বন ডাই অক্সাইড এর ১৪০০ গুণ কম। তার পর ও পরিসংখ্যান বলছে মানুষ গ্রিন হাউস গ্যাস অধিক হারে নির্গত করছে যা পরিবেশের জন্য হুমকি সরূপ।
পরিশেষে, সুদূর ভবিষ্যতে মানুষ সৃষ্ট হোক আর প্রাকৃতিক কোন কারণেই হোক মানুষকে তার প্রজন্ম কে রক্ষার জন্য অবশ্যই অন্য কোন গ্রহে আবাস গড়া প্রয়োজন তার জন্য সব থেকে উপযুক্ত গ্রহ মঙ্গল-গ্রহ ছাড়া আর কি কিছু আছে?
পৃথিবীর প্রাগৈতিহাসিক দুর্যোগের কারণ সাইবেরিয়ার অগ্নুৎপাতঃ ৮০% প্রাণীর মৃত্যু
আজ থেকে ২৫২ মিলিয়ন (২৫.২ কোটি) বছর আগের কথা। সেই সময় পৃথিবীতে এক মহা বিপর্যয় ঘটে যায়। সেই ঘটনাকে বলা হয় পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তি বা ইংরেজিতে Permian Mass Extinction। পৃথিবীর প্রায় ৯০% প্রাণী ধ্বংস হয়ে যায় স্থলভাগ এবং জলভাগের প্রাণীদের একটা মহা বিপর্যয় ঘটে।
গবেষণায় দেখা যায় স্থলভাগের সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে ৮০% প্রাণীর মৃত্যু হয় এবং সমস্ত প্রাণীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ প্রাণীর মৃত্যু হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে, প্রাগৈতিহাসিক কালে ঘটে যাওয়া দুর্যোগের মধ্যে এটাই সবথেকে ভয়াবহ বিপর্যয়। ইংরেজিতে পার্মিয়ান গন বিলুপ্তিকে বলা হয় পার্মিয়ান গ্রেট ডাইং (Permian Great Dying event) ইভেন্ট। প্রাগৈতিহাসিক কালের মহা বিপর্যয় গুলোর মধ্যে এটা শুধু একটি নয়।
এমন আরো চারটি মহা বিপর্যয় অতীতে ঘটেছিল। সে গুলোকে বলা হয় ডেভোনিয়ান এক্সটিংশন, পার্মিয়ান এক্সটিংশন, ক্রিটেসিয়াস এক্সটিংশন, পেলিওজিন এক্সটেনশন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বর্তমান পৃথিবীতে তার ষষ্ঠ এক্সটিংশন ইভেন্ট অর্থাৎ ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি ঘটনা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ ভাবে শুরু হয়েছে।
পৃথিবীর সাইবেরিয়াতে অবস্থিত (রাশিয়ার) ভলকানিক বা আগ্নেয়গিরির দীর্ঘস্থায়ী অগ্ন্যুৎপাতের ফলস্বরূপ গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটে। বর্তমান রাশিয়ার সাইবেরিয়া তে অবস্থিত।
যাই হোক আজকের লেখাটা মূলত পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় বর্তমান সাইবেরিয়াতে অবস্থিত (রাশিয়ার) ভলকানিক বা আগ্নেয়গিরির দীর্ঘস্থায়ী অগ্ন্যুৎপাতের ফলস্বরূপ গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটে। বর্তমান রাশিয়ার সাইবেরিয়া তে অবস্থিত আগ্নেয়গিরির জমাটবদ্ধ লাভা এর বয়স নির্ণয় করে জানা যায় যে এটা ২৫২ মিলিয়ন বছর এর সমসাময়িক সময়ের।
ঠিক একইভাবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত দৃশ্যমান ২৫২ মিলিয়ন বছর সময়ের পাথরের বয়স নির্ণয় করে দেখা গিয়েছে যে সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট পাথরের বয়সের সমান। পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তির প্রমাণ হিসেবে ২৫২ মিলিয়ন বছরের পাথরের পাললিক শিলার মধ্যে অবস্থিত স্থলভাগের কোন প্রাণীর ফসিল এর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না তবে তার আশে পাশে ফসিলের অস্তিত্ব আছে।
এভাবে পার্মিয়ান সময়ের পাললিক শিলার বয়স নির্ণয় ও তাতে অবস্থিত আগ্নেয়গিরির ২৫২ মিলিয়ন বছরের ভস্ম ও তার সমসাময়িক বয়স প্রমাণ করে সাইবেরিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের হলে পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তি ঘটেছে এবং এই আগ্নেওগিরির ঘটনায় মূলত এত বৃহৎ আকারের যে স্থল ও জলভাগের প্রাণের বিপর্যয়ের মূল কারণ এই সাইবেরিয়ার অগ্ন্যুৎপাত।
সাইবেরিয়া আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত একটি দীর্ঘস্থায়ী ঘটনা, যা কিনা প্রায় ১০ লক্ষ বছর ধরে চলমান ছিল অর্থাৎ এত দীর্ঘ সময় ধরে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা সত্যিই অবাক করা বিষয় কিন্তু এটাই বাস্তবতা এবং গবেষণায় তা উঠে এসেছে।
যেকোনো গণবিলুপ্তির ঘটনা হঠাৎ একদিন এ ঘটে না। এটা একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। গবেষণায় দেখা যায় পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে যেতে ৬০ হাজার বছর সময় লাগে। অর্থাৎ ৬০ হাজার বছর ধরে প্রাগৈতিহাসিক কালের (পারমিয়ান সময়) পৃথিবীর জল এবং স্থলভাগের ৮০% প্রাণের ধ্বংস হয়।
এখন প্রশ্ন উঠে যদি সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত প্রধানত এই ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য দায়ী হয় তবে দুটো ঘটনার মধ্যে সময়ের যে একটা বিশাল ব্যবধান পরিলক্ষিত তা কিভাবে সম্পর্কিত হতে পারে? কেননা সাইবেরিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের সময়কাল ছিল দশ লক্ষ বছর অন্যদিকে পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি সময়কাল মাত্র ৬০ হাজার বছর।
এটা সমাধান করার উদ্দেশ্যে আরো একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয় সেখানে দেখানো হয়েছে যে সাইবেরিয়ার অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা মূলত একটি সিরিজ আকারে পৃথক পৃথক আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ঘটনা। এরমধ্যে যে সময়ের অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা অত্যধিক ভয়াবহ ছিল তার একটি মূলত পার্মিয়ান সময়ের গনবিলুপ্তির সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
এখানে প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে এর একটি হলো কোরোনিন (Coronin) নামক কার্বনের একটি অ্যারোমেটিক যৌগ।
যখন কোন দহন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে দহন প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকতে পারে, সেই অসম্পূর্ণ দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জৈব যৌগ তৈরি হতে পারে এর মধ্যে একটি হল পিএএইচ (পলি অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন)। গবেষণায় দেখা যায়, কম তাপমাত্রার দহন প্রক্রিয়া কোরোনিন (Coronin) তৈরি হয় না।
এর জন্য দরকার উচ্চ তাপমাত্রা অর্থাৎ অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠে বিদ্যমান জৈব যৌগের দহন প্রক্রিয়া উচ্চ তাপমাত্রায় যদি অধিকসংখ্যক কোরোনিন (Coronin) উৎপন্ন হয় তখন বলা যায় উক্ত অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাটি একটি অধিক ধ্বংসাত্মক । এভাবে পার্মিয়ান পাললিক শিলার মধ্যে বিদ্যমান কোরোনিন (Coronin) এর অধিক উপস্থিতির মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ঘটনা প্রমাণ করা যায়।
সাইবেরিয়া তে অবস্থিত আগ্নেয়গিরির দীর্ঘস্থায়ী ঘটনাগুলোর মধ্যে ঠিক পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি সময় কার সমসাময়িক সময়ে সংঘটিত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত পার্মিয়ান বিলুপ্তির প্রধান কারণ। বলা বাহুল্য, পার্মিয়ান সময়ের গন বিলুপ্তির কারণ হিসেবে গবেষকরা বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছেন এরমধ্যে হল বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, অ্যাসিড বৃষ্টি, ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত গাছপালার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে মাটির ক্ষয় হওয়া এবং
অধিক নিউট্রিএন্ট সমৃদ্ধ মাটি সমুদ্রের জলে মিশে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে জলজ প্রাণী ধ্বংস করা। এ সবগুলোরই প্রধান কারণ হিসেবে বর্তমান সাইবেরিয়ায় অবস্থিত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দায়ী হয়।
পারমিয়ান গন বিলুপ্তি (mass extinction) দুর্যোগঃ পর্ব -১
পারমিয়ান মাস এক্সটিংশান mass extinction হল আজ থেকে ২৫১.৯৪ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে একটা বড় দুর্যোগ। এ সময়ে সমস্ত পৃথিবীর ৯০% সমুদ্রের অমেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যায় আর স্থলভাগের ৭০% মেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যায়। পারমিয়ান সময়ের প্রথম দিকে উচ্চ হারে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বর্তমান সাইবেরিয়ার তৎকালীন সাইবেরিয়ান আগ্নেয়গিরির উদ্গিরন(>3.0 × 106 km3 )এর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
তাছাড়া সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্র স্রোত এর ধীরগতি অথবা সমুদ্রের পানির অক্সিজেন এর ঘাটতি, পানি পিএইচ pH কমে গিয়ে অধিকতর অম্ল হওয়া, সমুদ্রের তলদেশের মিথেন গ্যাস এর উদ্গিরন ও অন্যান্য কারণে প্রাণীগুলো মারা যাওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।
পৃথিবীর বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা কমপক্ষে ৬০ হাজার বছর থেকে ১২০ হাজার বছর পর্যন্ত থাকার কারণে স্থলভাগের গাছপালা বা ইকো সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ার কারণ হতে পারে। বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন এ তৎকালীন সময়ের মাটির শুষ্কতার একটা প্রমাণ পাওয়া যায়। কারু-বেসিন-মডেল এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যে, গভীর নদী থেকে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার নদীতে রূপান্তর সাধারণত গুলজাতীয় গাছপালার ধ্বংস হওয়া কে বোঝায় যে এর সাথে উক্ত গুল্ম জাতীয় গাছপালার উপর নির্ভরশীল মেরুদণ্ডী প্রাণী গুলোও অতি দ্রুত হারে পারমিয়ান সময়ে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে মারা যায়।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পারমিয়ান- ট্রিয়াসসিক সময়ের মেরুদণ্ডী ফসিল রেকর্ড এর মাধ্যমে মোট ৮টি জোন এ ভাগ করা হয়। যেখানে মিডিল পারমিয়ান এর মাস এক্সস্টিংসান (mass extinction) এর সময়কার ফসিল Tapinocephalus পাওয়া গিয়েছে এবং এটা আরও অন্যান্য ইউরেনিয়ায়ম-লেড এর মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে।
একটা আগ্নেয়গিরির উদ্গিরিত ছাই এর স্তর থেকে ইউরেনিইয়ায়ম-লেড অনুপাত পরিমাপ করে বয়স নির্ণয় করে জানা গিয়েছে যে, স্থলভাগের মাস এক্সক্টিংশান mass extinction) হয়েছিল সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংশান হওয়ার কয়েক শত হাজার বছর আগে। গত ১০০ বছরের ও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন এ মেরুদণ্ডী প্রাণীর যে ফসিল রেকর্ড রয়েছে সেটা থেকে পারমিয়ান সময়ের বিলুপ্তি প্রাপ্ত মেরুদণ্ডী প্রাণী, তাদের বসবাসের জায়গা, ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ভাল ধারনা পাওয়া যায়।
পারমিয়ান সময়ের সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান ঐ সময়ের সাইবেরিয়ান ট্র্যাপ উদ্গিরন সৃষ্ট বৈশ্বিক শুষ্কতার কারণে স্থলভাগে ঘটে যাওয়া গন বিলুপ্তির সাথে সম্পর্কিত। লেট চাংশিংজিয়ান (পারমিয়ান)সময়ের আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে নির্ণীত বয়স ও Lystrosaurus মেরুদণ্ডী ফসিল এর স্তর থেকে নির্ণীত সময় এর হিসাবে সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংশান (mass extinction) থেকে ৩৪০ হাজার বছর বেশি পুরনো।
তাই আচরণগত ভাবে হোক বা ভৌতিক, ম্যাস এক্সক্টিংসানের (mass extinction) মেকানিজম যে ভাবেই হোক না কেন Lystrosaurus নামক চতুষ্পদ প্রাণীর ফসিল গুলো কিছুতেই পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংসান এর সমসাময়িক নয়।
অন্য একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে Glossopteris নামক এক প্রজাতির গাছ ধ্বংস হওয়াকে স্থলভাগের গন বিলুপ্তির প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপক করা হয় । এই স্থলভাগের গন বিলুপ্তির এর সাথে সামুদ্রিক ম্যস এক্সক্টিংসানের তুলনা করলে দেখা যায় যে সামুদ্রিক ম্যস এক্সক্টিংসানের ৩৭০ হাজার বছর আগে স্থলভাগের গন বিলুপ্তির শুরু হয়েছে, যা কিনা সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির উদ্গিরনের শুরুর সমসাময়িক।
কিছু স্পোর-পোলেন ও ইনডেক্স ফসিল সাহায্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেখা যায় যে দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সমসাময়িক ঘটনার প্রমাণ আছে। এভাবে দেখা যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাড়ু বেসিন থেকে প্রাপ্ত চতুষ্পদী প্রাণীর ফসিল দিয়ে সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান ও স্থলভাগের ম্যাস এক্সটিংসান এর ঘটনা দুটিকে সমসাময়িক ঘটনা বলা হত সেটা আর থাকছে না।
বরং সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান (mass extinction) ও স্থলভাগের ম্যাস এক্সটিংসান (mass extinction) দুটি সম্পূর্ণ পৃথক ঘটনা যাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ হাজার বছরের ব্যাবধান রয়েছে।
৬৪.৫ কোটি বছর পূর্বে বরফ যুগ snowball পরবর্তী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তে প্রান সৃষ্টির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
প্রি ক্যাম্ব্রিয়ান সময় থেকে ক্যাম্ব্রিয়ান সময়ে পরিবর্তনের সময় লেট নিওপ্রটেরোজেয়িক সময়টি ভূত্বাতিক সময়ে একটি গুরুত্ব পুর্ন সময়। ৬৪.৫ কোটি বছর পূর্বে বরফ যুগ (snowball) পরবর্তী বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রানে সৃষ্টির প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়। এই সময়ের বিস্তার ৬৪.৫ কোটি থেকে ৫৩.৫ কোটি বছরে মধ্যে ৷
পৃথিবীতে প্রথম প্রানের সূচনায় এই সময়টা কিছু সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ায় পৃথিবীতে জলবায়ু গত ও জীবের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় শুরু হয়। মোরানিয়ান সময়ের বরফাচ্ছাদিত যুগে (snowball) জলবায়ু ও রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন সাধিত হয় ৷ যার কারণে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রানের প্রথম সূচনা হয়।
প্রাগৈতিহাসিক সময়ের বিবর্তনের প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেন জাপানের গবেষক ডঃ এটেনা সিজিয়া৷ তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইহো ল্যাবের গবেষণা তত্ত্ববধায়ক প্রফেসর কুনিও কাইহো ও প্রধান গবেষক এটেনা সিজিয়াসহ একদল গবেষক এই গবেষণা পরিচালনা করেন৷ গৰেষণায় এটেনা সিজিয়া বলেন, জৈব পদার্থ থেকে নিসৃত আণবিক ফসিল ইরেজিতে molicular Fossil যাকে বলে বায়োমার্কার ৷ আমরা চীনের একটি প্রদেশ থেকে তৎকালিন সমসাময়িক সময়ের মজুতকৃত স্যাম্পল নিয়ে গবেষণা করেছি ৷
মোরানিয়ান ও ইডিয়াকারান সময়ের বিবর্তন প্রক্রিয়া বায়োমার্কার এর উপস্থিতি ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় প্রথম সম্ভ্যব্য অণুজীব অ্যালজি কর্তৃক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া শুরু হয় মোরানিয়ান সময়ের বরফাছাদিত (snowball) সময়ে । এর পর অনজীবের বংশবিস্তার কমে যায় এবং নতুন করে ব্যাকটেরিয়া এবং ইউক্যারিযটিক জাতীয় বহুকোষী অনুজীবের প্রার্দুভাব হয় ইডিয়াকারান সমযের শুরুর দিকে ৷
গবেষকদের মতে এই অনুসন্ধান একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার ৷ এই গবেষণায় প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল ৬৪.৫ কোটি বছর পূর্বের নমুনা সংগ্রহ | কারণ এত আগের নমুনায় সাধারণত প্রায সময়ই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা কঠিন কারণ প্রকৃতির ক্ষয়িষ্ণু প্রক্রিয়ায় সব প্রমান মুছে যায়।
৬৪.৫ কোটি থেকে ৫৩.৫ কোটি বছর পূর্বের লেট নিওপ্রটেরযোয়িক মোরানিয়ান বরফ যুগ (snowball) পৃথিবীর ৪৬০ কোটি বছরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় ৷ এই সময়ে পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গা বরফ আচ্ছাদিত ছিল। এই সময় পৃথিবীকে অনেক গবেষক স্নোবল আর্থ (snowball) অবিহিত করেন৷ এর পর বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে পৃথিবী উষ্ণ হয়ে বরফ যুক্ত হয়। কারণ তখন বরফের কারণে সমুদ্রে কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্রবিভূত হতে পারেনি। এই কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎস হল আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত।
পরিশেষে এভাবে অধিক গ্রীন হাউজ প্রভাবের কারণে বরফ গলতে থাকে এবং কিছু কার্বন ডাইঅক্সাইড ক্যাপ কার্বোনেট নামে সমুদ্রের মাটিতে জমা হয়। এখানে স্লোবল আর্থ (snowball) এর পাশাপাশি আর একটি হাইপোথিসিস সামনে চলে আসে ৷ সেটা হল পৃথিবী আংশিক নয় সম্পুর্নরূপে বরকে আচ্ছাদিত ছিল ৷ যদিও স্নোবল আর্থ (snowball) হাইপোথিসিস ব্যাখ্যা করতে পারে কেন ক্যাপ কার্বনেট পাললিক শিলা তৈরি হয়েছিল এবং কেন পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় গ্লেসিয়াল ফরমেশন হয়েছিল।
কিন্তু সম্পূর্ন ফ্রজেন আর্থ মডেল অনুসারে পৃথিবীর কোন অনুজীব বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখোমুখি করে। যদিও অনেক গবেষক বলেন যে স্পন্জ জাতীয় প্রাণী অধিক বরকেও বেচে থাকার সংগ্রাম করতে পারে। তাছাড়া কিছু খোলা সমুদ্র ছিল যাতে প্রাণী বাঁচতে পারে। আর এ কারণেই বর্তমানে স্নোবল আর্থ হাইপোথিসিসের পাশাপাশি অনেক মডেল এর প্রস্তাবনা এসেছেযেমন স্লাশবল আর্থ মডেল, জামমান্ডগান ও গ্লেসিয়াল ওসিস মডেল।
মোরানিয়ান বরফ যুগ (snowball) থেকে বৈশ্বিক উষ্ণতায় পরিবর্তনের পর বহুকোষী প্রাণীর প্রার্দুভাব হয় এবং শিলাতে পুঞ্জিভূত হয়। এই সময়ে কিছু মেটাজোয়া ধরনের প্রাণী যাদের দেহ খুব সরল ও শাখা বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হীন। অ্যাক্রিটারক নামক এক ধরনের অণুজীব তবে কিছু স্পাইক বা চৌকোনা বা ত্রিভুজ আকৃতির অ্যাক্রিটারক ও অনুবীক্ষন যন্ত্রে দেখতে পাওয়া যায়। বায়োমার্কার এর উপস্থিতি থেকে প্রমান করা যায় যে কিছু ব্যাকটিরিযা ও ইউক্যারিযটিক এর আধিক্য দেয়া যায় ইডিয়াকারান ও ফ্যানেরো জয়িক সময়ে ৷
পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তি ও আগ্নেয়গিরি নিয়ে নতুন Hg তত্ত্ব
আমরা পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তি সম্বন্ধে শুনেছি যে সে সময়ে ৯০ % প্রাণী মারা গিয়েছিল এবং পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া প্রাগৈতিহাসিক ঘটনার মধ্যে ধ্বংসাত্মক দিক দিয়ে প্রথম এবং শ্রেণী অনুসারে তৃতীয়। এখন পর্যন্ত এই বৃহৎ গন বিলুপ্তি সম্বন্ধে যা গবেষণায় জানা গিয়েছে তা হল সাইবেরিয়াতে আগ্নেয় গিরির অগ্নুৎপাতের জন্য এই বিশাল বিপর্যয় হয়েছিল।
তবে যেহেতু ঘটনা তা ২৫২ মিলিয়ন বছরের তার মানে আজ থেকে ২৫ দশমিক ২ কোটি বছর আগের তাই এত সহজ নয় প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা। তবে বিজ্ঞানীরা বসে নেই ঠিক তেমনি একজন বিজ্ঞানী ও প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা নিয়ে কাজ করছেন জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসর কুনিও কাইহো ।
তার গবেষণার জ্ঞান ও পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ব বিদ্যালয়ের গবেষকদের জ্ঞান এখন পর্যন্ত এই কঠিন কাজের যে পর্যন্ত সত্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন তা অত্যন্ত সীমিত তবে যুগান্তকারী। পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তি নিয়ে আরও বিস্তর কাজ চলছে সারা পৃথিবী ব্যাপী।
পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তি নিয়ে সম্প্রতি একটি গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা তা হল; বর্তমান দক্ষিণ চায়নাতে ও রাশিয়াতে অবস্থিত যথাক্রমে সাবডাকশন ভল্কানিজম (Subduction Regional Volcanism) ও সাইবেরিয়ান ট্র্যাপ উদ্গিরন একসাথে পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তি র কারণ ও সেই সময়ের পরিবেশের হুমকি হিসাবে আগ্নেয়গিরির উদ্গিরন দায়ী এসব তথ্য Hg উপস্থিতি ও ঘনত্ব থেকে তা জানা যায়।
এর মধ্যে Subduction Regional Volcanism এর বিস্তৃতি , শক্তি ও সময় সম্পূর্ণ ভাবে জানা যায়নি। এই গবেষণায় দক্ষিণ চায়না থেকে ৩ টি সামুদ্রিক সেকশন এ Hg ঘনত্বের সাহায্যে বিস্তরভাবে তথ্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই Hg ঘনত্বের উপস্থিতি থেকে দেখা যায় যে পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের মাসুদ্রিক গন বিলুপ্তি র ২০ লক্ষ বছর আগে তেসিস সাগরের তীর বরতি অঞ্চলে এক তীব্র আগ্নেয়গিরির উদ্গিরন শুরু হয়েছিল।
Hg আইসোটোপ এর তথ্য থেকে দেখা যায় পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের মাসুদ্রিক গন বিলুপ্তি র ২০ লক্ষ বছর পূর্বে যে Hg ঘনত্বের আধিক্য সেটা মূলত দক্ষিণ চায়নাতে সাবডাকশন ভল্কানিজম (Subduction Regional Volcanism) কারণে এবং পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের মাসুদ্রিক গন বিলুপ্তির সময়ে রাশিয়াতে সাইবেরিয়ান ট্র্যাপ উদ্গিরন এর কারণে।
এই আবিষ্কারের ফলে এত দিনের যে ধারনা তার বিষয়ে একটা নতুন কিছু আসল কারণ আগে মনে করা হত যে শুধু মাত্র সাইবেরিয়ান ট্র্যাপ উদ্গিরন ই পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সময়ের গন বিলুপ্তির প্রধান কারণ।
মানব বিবর্তন এর প্রারম্ভিক ইতিহাস
মুগ্ধ তার বাবার সাথে চিড়িয়াখানা ঘুরতে গিয়েছে।সেখানে সে অনেক প্রজাতির জীব জন্তু দেখছে আর তার বাবার কাছে এক এক জীব জন্তু নিয়ে এক এক রকম প্রশ্ন করছে।মুগ্ধ বলছে,বাবা এখানে তো অনেক ধরণের জীব জন্তু আর পশু পাখি আছে কোনোটার সাথে কোনোটার মিল নেই কিন্তু বানর দের সাথে কেন মানুষের মিল রয়েছে।ওদের চোখ মুখের চাহনি হাত পা গুলো কেমন যেন মানুষের মতই বাবা? তখন মুগ্ধর বাবা তাকে বললেন ওরা আমাদেরই বিবর্তনীয় রূপ আবার নানাভাবে বিভিন্ন প্রজন্ম ধরে জিনের ক্রমবিবর্তন এর ফলেই হয়েছে আজকের মানুষ জাতি।
আধুনিক মানুষের শিকড় দীর্ঘ সময় পূর্বে বহু মিলিয়ন বছর আগে ফিরে পাওয়া যায়। প্রাথমিক প্রমাণগুলো আসে জীবাশ্ম থেকে – কঙ্কাল, হাড়ের টুকরা, খুলি ইত্যাদি। এটি প্রায়শই মনে করা হয় যে জীবাশ্মগুলি কেবল সামান্য সূত্র সরবরাহ করে এবং মানব বিবর্তনের ইতিহাসের বেশিরভাগই অনুমান করা। তবে বিজ্ঞানীদের কাছে এমন অনেক সরঞ্জাম রয়েছে যা তাদের প্রাচীন হাড় এবং তাদের পরিবেশগত বিন্যাস থেকে সূক্ষ্ম তথ্য আহরণের স্বীকৃতি দেয়।
আধুনিক ফরেনসিক কাজ এর ক্ষেত্র এবং পরীক্ষাগার এখন আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রার একটি সমৃদ্ধ উপলব্ধি প্রদান করতে পারে।সময়টা ছিল গভীর সময় পূর্বের এবং দীর্ঘ সময়, সেই সময়ে পৃথিবীটি গঠিত হয়েছিল, অতীতে বহু মিলিয়ন বছর বিস্তৃত হয়েছিল।এর অধ্যয়ন হচ্ছে পৃথিবী আর ভূত্বত্তের রিজার্ভ (সংরক্ষিত বস্তু)। ভূতাত্ত্বিকেরা এখন ব্যাপক পরিমাণে জানেন কিভাবে দিনের পর দিন কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর উপরিভাগ পরিবর্তিত হয়েছে এবং পৃথিবীর উপরিভাগ যে শিলা তৈরি করে তা ক্রমবর্ধমান নির্ভুলতার সাথে।
মহাকাশে ঘনীভূত উপাদান থেকে প্রায় ৪,৫০০ বছর পূর্বে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। প্রথমে পুরো গ্রহটি গলিত অবস্থায় ছিল এবং কোনও শক্ত ভূত্বক, জল বা বায়ুমণ্ডল ছিল না।প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর পরে পৃষ্ঠটি শিলা গঠনে ঠাণ্ডা হয়েছিল এবং সমুদ্র জমে উপরিভাগ আবারো ঠাণ্ডা হয়েছিল। প্রথম সাধারণ মাইক্রোবিয়াল জীবন উদ্ভূত হয়েছিল প্রায় ৩,৬০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে। পরবর্তী ৩০০০ মিলিয়ন বছর জীবন তুলনামূলকভাবে সহজই থেকে যায়, আণুবীক্ষণিক থেকে দৃশ্যমান গঠনগুলিতে অগ্রসর হয়। এই পুরো সময়টাকে ভূতাত্ত্বিকগণ পূর্বসূরী বলে অভিহিত করেন।
ভূতাত্ত্বিক সময়ের অবশিষ্ট বিগত 544 মিলিয়ন বছর বেশি জানা যায় কারণ জীবাশ্মগুলি প্রথম সেই যুগের শিলায় বিস্তৃত হয়েছিল। জীবাশ্মগুলি সেই সময়ের জীবন সম্পর্কে আমাদের জানায় এবং এর ভূতাত্ত্বিক টাইমস্কেল নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই স্কেলটি পুনর্বিবেচনা ও উন্নতির ঊর্ধ্বে।এই গ্লোবগুলি সময়ের সাথে মহাদেশগুলির অবস্থান দেখায়।
মহাদেশগুলি হলো একত্রে আফ্রিকা ও ভারত মহাদেশ এর কিছু অংশ। বিভিন্ন মহাদেশ তখন থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ভূতাত্ত্বিক সময়কাল কে যুগ এবং কাল এই ২টি অংশে ভাগ করা হয়েছে যেগুলি মূলত 1830 এবং 1840 এর দশকে নামকরণ করা হয়েছিল।এই দশকের বছরের গঠনগুলো থেকে যা জানা যায় তা হলো একটি গলিত শিলা থেকে স্ফটিকাকার খনিজ তৈরী হয়,যা বহন করে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম -২৩৫ পরমাণু।
অবশেষে আইসোটোপ সীসা-২০৭ গঠনের জন্য ইউরেনিয়াম -২৩৫ আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকবে। আর টাইমস্কেল ডেটিং থেকে জানা যায়,স্ট্যান্ডার্ড জিওলজিক্যাল টাইমস্কেল আঞ্চলিক ভূতত্ত্ব,জীবাশ্ম পারস্পারিক সম্পর্ক এবং পরম ডেটিং এর স্কেল এর উপর নির্ভর করে।২০০ বছর আগে আঞ্চলিক ভূতাত্ত্বিক কাজ শুরু হয়েছিল যখন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং জার্মানির ভূতাত্ত্বিকেরা লক্ষ্য করেছিলেন যে, শিলাস্তর গুলো অনুমানযোগ্য ক্রমে ঘটেছিল এবং এটিকে প্রায়শই কোনো নির্দিষ্ট জীবাশ্ম দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে।একই জীবাশ্ম, শিলার বয়সও একই।
আর জায়গায় জায়গায় এসমস্ত জীবাশ্মের হাজার হাজার সংযোগ কয়েক মিলিয়ন বছরে বিশদ আপেক্ষিক টাইমস্কেল তৈরী করে।এছাড়া নির্দিষ্ট ভূতাত্ত্বিক তারিখ গুলো নির্দিষ্ট শিলার তেজস্ক্রিয় খনিজ গুলো থেকে আসে,বিশেষ করে পললগুলোর অনুক্রমের মধ্যে আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে আসে।যখন গলিত ছাই স্থির হয়ে যায়, তখন অনেক সদ্য খনিজ এর কাঠামো স্থির হয়ে গিয়েছিল।
তেজস্ক্রিয় খনিজ যেমন ইউরেনিয়াম বা পটাশিয়াম লক্ষ লক্ষ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষয় হতে থাকে।কার্বন -১৪ হলো রেডিওমেট্রিক ডেটিং এর অন্যরূপ যা কেবল ক্ষয় পরিমাপ এর নীতিতে কাজ করে।এটি শুধু ৫০,০০০ হাজার বছর পর্যন্ত পুরোনো জৈব পদার্থের কাজ করে।এভাবেই ক্রমানুসারে চলতে থাকে ভূতাত্ত্বিক গঠনের সাথে সাথে জীবাশ্ম বিবর্তন অর্থাৎ মানব বিবর্তনের ধারা।
মানব বিবর্তন
মানুষ বা হিউম্যান বা হোমো স্যাপিয়েন্স (মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম) প্রকৃতপক্ষে হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত প্রাণীদের কে বুঝায়। এক কথায় মানব বিবর্তন হচ্ছে,বিবর্তনের মাধ্যমে অন্যান্য হোমিনিড প্রজাতি থেকে একটি আলাদা প্রজাতি-হোমো স্যাপিয়েন্স এর উদ্ভব কে বোঝায়। বিবর্তন বা অভিব্যক্তি হলো এমন একটি জীব বৈজ্ঞানিক ধারণা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবহমান জীবের গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্টের ক্রমপরিবর্তন কে বুঝায়।কোনো জীবের বংশধরদের মাঝে যে জিনরাশি ছড়িয়ে পড়ে সেগুলোই বংশপরম্পরায় ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে।
জিনের পরিব্যক্তির মাধ্যমে জীবের নির্দিষ্ট কোনো বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে আবার পুরোনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ও হতে পারে।যদিও একটি প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা খবুই সামান্য।কিন্তু কালক্রমে সেই পরিবর্তন জীবগোষ্ঠীতে উল্লেখযোগ্য হয়ে ধরা দেয় এমনকি এক সময় তা নতুন প্রজাতির উদ্ভব এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মানব বিবর্তন হলো এমনই একটি প্রক্রিয়া যা জন্মগতভাবে আধুনিক মানুষের জীবপ্রক্রিয়াকে উত্থান এর দিকে পরিচালিত করে।প্রাইমেটস এমনি একটি বিশেষ জেনোস হোমো যার বিবর্তনের ইতিহাস এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় হোমো স্যাপিয়েন্স এর হোমোনিড পরিবারের একটি বিশেষ প্রজাতি হোমিনিন।
মানব বিবর্তন এর ইতিহাস এর জন্য কয়েকটা বৈজ্ঞানিক শাখা জড়িত যেমনঃ শারীরিক নৃবিজ্ঞান,প্রাইমেটোলজি,প্রত্নতত্ত্ব বিদ্যা,জীবাশ্মবিজ্ঞান,স্নায়ুবিজ্ঞান,বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান,ভ্রুণবিদ্যা,ভাষাতত্ত্ব বিজ্ঞান,জেনেটিক্স ইত্যাদি। যদিও মানব বিবর্তন গবেষণা করতে গিয়ে অস্ট্রালোপিথেকাস গণের অনেক প্রজাতি নিয়ে অধ্যয়ন করতে হয়। আনুমানিক ২৩-২৪ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতে হোমো গণটি অস্ট্রালোপিথেকাস গণ হতে পৃথক হয়েছিল,আর এই হোমো গণে অনেক প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছিল কিন্তু মানুষ ছাড়া সবই বিলুপ্ত হয়েছিল।
এসব বিলুপ্ত প্রজাতিদের আবার বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে নাম দেয়া হয়েছে,যেমনঃ হোমো ইরেক্টাস যারা এশিয়ায় বাস করত,আবার হোমো নিয়ানডার্টালেন্সিস যারা ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর্কায়িক হোমো স্যাপিয়েন্স এর উদ্ভব হয়েছিল প্রায় ৪-২৫ লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকাতেই, আধুনিক মানুষ থেকে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে পৃথক ছিল এরা দেহের অভ্যন্তরীণ গঠন ও বুদ্ধিমত্তায়।
আফ্রিকাতে উদ্ভূত হয়ে ৫০ হাজার-১লক্ষ বছর পূর্বে ছড়িয়ে পড়েছিল বিভিন্ন মহাদেশে,আমাদের এই মানুষ জাতিই।ধারণা করা হয় আনুমানিক ২৫ লক্ষ বছর পূর্বে ইরেক্টাস বা এরগ্যাস্টরা আফ্রিকাতে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদেরই উত্তরসূরি হিসেবে পৃথকভাবে উৎপত্তি হয়েছে আমাদের এই মানুষ জাতি। তবে ভৌগলিকতার কারণে সেসব হোমো দের ভেতরেও অন্তঃপ্রজনন সম্ভব ছিল।
২০১৯ সালের অক্টোবর এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে আধুনিক মানুষ প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা হতে যাত্রা শুরু করেছিল এবং এর উৎপত্তি স্থল ছিল বৎসোয়ানা।
মহাসমুদ্র ও সৌরজগৎ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল
সৌর জগত সৃষ্টির জন্য এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অনেক প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে সবথেকে গ্রহণযোগ্য যে মতামত এটা দিয়েছিলেন ইমানুয়েল কান্ট ১৭৫৫ সালে তাঁর Universal natural history and theory of the heavens বইয়ে।
কান্ট প্রস্তাব করেন যে নিজের অক্ষের ডিস্ক এর মত ঘূর্ণায়মান ধূলিকণার মত পদার্থগুলো সতত সংযুক্ত হয়ে আকার বৃদ্ধি করার সাথে সাথে সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণনশীল ছিল।
এরপর ফ্রান্সের গণিতবিদ পিয়েরে সিমন লপ্লেস, কান্টের প্রস্তাবনাকে নিয়ে গবেষণা করেন এবং অধিকতর উন্নত করেন।
কান্ট লপ্লেস সম্মিলিতভাবে প্রস্তাব করেন যে সৌরজগৎ সৃষ্টির শুরুতে ছিল অধিক ঘনত্বের গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ। 460 কোটি বছর আগে একটি বৃহৎ সুপারনোভা বিস্ফোরণের শক ওয়েব এর মাধ্যমে ঘুর্ণয়মান পদার্থের ডিস্কটিতে মহাকর্ষ বল প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধূলিকণা গুলো নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক বলেন মাধ্যমে সংযুক্ত হতে থাকে এবং ঘূর্ণন অবস্থায় আকার বৃদ্ধি পেয়ে ছোট পেবল আকারের হয় এভাবে কণাগুলো ঘূর্ণায়মান ডিস্কের মাঝামাঝি অবস্থান করে ঘুরতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এবং পেবল আকারের পদার্থগুলো কিলোমিটার আকারের পদার্থে পরিণত হয় এবং তা চন্দ্রের মত বৃহৎ আকারের বস্তুতে পরিণত হয় এবং যথারীতি ঘূর্ণন প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল থাকে যদিও এই প্রক্রিয়াটা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত নয় যে এটা কিভাবে ঘটেছে।
পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তি দুর্যোগের আদ্যোপান্ত
আজ থেকে ২৫২.০৯ মিলিয়ন বা ২৫.২০ কোটি বছর আগের কথা পৃথিবীতে একটি বৃহৎ দুর্যোগ ঘটেছিল। সেই দুর্যোগ এর নাম পার্মিয়ান গণবিলুপ্তি দুর্যোগ। সেই সময়ে পৃথিবীর 90% প্রাণী মারা গিয়েছিল এবং স্থলভাগের 70% প্রাণীর মারা যায়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে এযাবৎকালের সব থেকে বেশি প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা।বিজ্ঞানীরা এই বৃহৎ প্রাগৈতিহাসিক কে নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে যাচ্ছেন।
এই দুর্যোগ মূলত ঘটেছিল কয়েকটি কারণে তার মধ্যে এযাবতকালের সবথেকে বেশি প্রমাণযোগ্য বাস্তব তথ্য উপস্থাপন করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে বর্তমান সাইবেরিয়াতে তৎকালীন সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থেকে দীর্ঘস্থায়ী অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট লাভাস্রোত ভূপৃষ্ঠের বিস্তর জায়গা নিয়ে প্লাবিত হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর আবহাওয়া ও সামুদ্রিক পরিবেশের যে পরিবর্তন সাধিত হয় সেটাই হলো মূলত এই পার্মিয়ান মহাদুর্যোগের প্রধান কারণ। পার্মিয়ান মহা দুর্যোগ মূলত সামুদ্রিক প্রাণীদের ধ্বংস ও স্থলভাগের প্রাণীদের ধ্বংস করেছিল। সমুদ্রের প্রাণীদের একটা বৃহৎ অংশ মারা গিয়েছিল।
বর্তমান সাইবেরিয়াতে অবস্থিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্রথমে পৃথিবীর একটা বৃহৎ পরিবর্তন হয় এটাকে বর্তমান সময়ের অতি পরিচিত বৈশ্বিক উষ্ণতার চরম অবস্থা বলা হয়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা থেকে যে কার্বন ডাই অক্সাইড বা অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস সহ সালফার ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলে যুক্ত হয় এই সালফার-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলের পানির সাথে যুক্ত হয়ে অ্যাসিড বৃষ্টি হয় এভাবে দীর্ঘস্থায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এসিড বৃষ্টির কারণে পৃথিবীর স্থলভাগের গাছপালার সাধিত হয় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
পৃথিবীর গাছপালা স্থলভাগের বিস্তর অঞ্চলজুড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার প্রমাণ বর্তমান অস্ট্রেলিয়া, চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায়। স্থলভাগের গাছপালা ধ্বংস হলে সহজেই মাটি ক্ষয় সাধন হয় যার কারণে সময়ের ব্যবধানে এগুলো পানির সাথে মিশে সমুদ্রে পতিত হয়। অধিক পরিমান এই মাটির ক্ষয় প্রাপ্ত খনিজ পদার্থগুলো সমুদ্রের পানিতে মিশে অধিক পরিমাণে অতিক্ষুদ্র এলজি জাতীয় অনুজীব তৈরি করে যার ফলে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেন এর ঘাটতি দেখা যায়।
এভাবে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার ফলে সামুদ্রিক প্রাণী যেমন মাছ ও অন্যান্য প্রাণীগুলোর জীবন বিপন্ন হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়াতে প্রাণী গুলো মারা যায়।
সমুদ্রের প্রাণী গুলো বিলুপ্তি হওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা আরো কয়েকটি কারণ দেখিয়েছেন এর একটি হলো সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত অগ্ন্যুৎপাতের ফলে গ্যাস পানির সাথে মিশে যাওয়া গ্যাস ও সমুদ্রের তলদেশে জমাকৃত মিথেন গ্যাস উদগীরণ হওয়ার মাধ্যমে পানিতে মিশে সমুদ্রের প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করে। সমুদ্রের পানি অধিকতর অম্ল হয়ে যাওয়া একটা অন্যতম প্রধান।
কারণ বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন সমুদ্রের প্রাণীগুলোর বিপর্যয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি কারণ দায়ী নাও হতে পারে। সমস্ত ঘটনাগুলো একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত অর্থাৎ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কারণগুলো একটির সাথে একটি সম্পর্কযুক্ত।দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে সমুদ্রের প্রাণীগুলোর বিলুপ্তি হতে পারে।
পার্মিয়ান সময়ের সামুদ্রিক উপরিভাগের তাপমাত্রা বর্তমান বিশ্বের সমুদ্রের তাপমাত্রা থেকে ৮ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি হয়ে গিয়েছিল যার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের সাধারণ গড় তাপমাত্রা বেশি হওয়ার জন্য সমুদ্রের প্রাণীগুলোর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে প্রাণী গুলো মারা যায়। সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত পার্মিয়ান সময়ের সমুদ্র ও স্থলভাগের প্রাণীগুলো বিলুপ্তির জন্য প্রধান নিয়ামক।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সাইবেরিয়ার অগ্নুৎপাত প্রথমে স্থলভাগের গাছপালা ধ্বংস করে পরবর্তীতে এর প্রভাব সমুদ্রের প্রাণীগুলোর জীবন বিনষ্ট করে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বয়স নির্ধারণ করেছেন যে সমুদ্রের প্রাণীগুলোর বিপর্যয় এবংস্থলভাগের গাছপালা ও প্রাণীগুলোর ধ্বংস দুটি পৃথক ঘটনা। এই দুটি পৃথক দুর্যোগ দুটি আলাদা সময় ঘটেছে।
এ দুটি মহাদুর্যোগের মধ্যে সময়ের ব্যবধান তিনশো সত্তর হাজার বছর। পার্মিয়ান সময়ের সমুদ্রের প্রাণীগুলোর গণবিলুপ্তি ঘটেছিল আজ থেকে 25.2 কোটি বছর আগে এবং এর ঠিক তিনশো সত্তর হাজার বছর পুর্বে স্থলভাগের প্রাণী ও গাছপালার ধ্বংস হয়। এ দুটি ঘটনা সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের লাভাস্রোত এর দীর্ঘস্থায়ী প্লাবিত হওয়ার ঘটনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
পৃথিবীতে এক সময় ডাইনোসর বসবাস করত। এটা আমরা সবাই জানি। ডাইনোসর আজ থেকে 6.6 কোটি বছর আগে পৃথিবীতে বসবাস করত এবং মহাশূন্য থেকে আগত উল্কাপাতের হলে ডাইনোসরের বিলুপ্তি হয়। ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার আগে পার্মিয়ান সময়ের বিলুপ্তির ঘটনা ঘটে যা কিনা 25.2 কোটি বছর আগের ঘটনা।
পার্মিয়ান সময়ে স্থলভাগের যেসব প্রাণী বসবাস করত তারমধ্যে অন্যতম হলো ডিসাইনডনট, লিসটসোরাস ইত্যাদি। এগুলো তৃণভোজী প্রাণী।পার্মিয়ান সময়ের গণবিলুপ্তি, ডাইনোসরের গণবিলুপ্তি সহ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এমন মহা বিপর্যয় পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত পাঁচবার ঘটেছে।বর্তমান পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, মানুষ সৃষ্ট কারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে পরিবেশের পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি বা সিনজোয়িক গন বিলুপ্তি। পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঘটনা একটা প্রাকৃতিক নিয়ম।
ঠিক এভাবেই ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। মানুষের সৃষ্ট প্রযুক্তির উন্নতি ও অধিকহারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বর্তমান পৃথিবী কে অনেক ভাবিয়ে তুলেছে। সেজন্য বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন যে ষষ্ঠ বিলুপ্তির হার পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতের ঘটে যাওয়া গণবিলুপ্তি প্রাণীর থেকে তুলনামূলক ভাবে দ্রুততর।
তাই ষষ্ঠ বিলুপ্তির হাত থেকে পৃথিবী কে বাঁচানোর জন্য মানুষকে এখনই সজাগ হতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করতে হবে এবং মনুষ্য সৃষ্ট কারণে যাতে এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত না হয় সেজন্য সচেতন থাকতে হবে পৃথিবীর মানবজাতিকে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা অন্তত একটি সংঘর্ষ হয়েছে যেখানে নতুন পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের আকারের কোন গ্রহের সাথে সংঘর্ষে আমাদের চাঁদ নামক উপগ্রহটি সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে গ্রহের মতো বড় আকারের পদার্থ, ধূমকেতুর সংঘর্ষ 400 কোটি বছর পর্যন্ত চলমান থাকে।
ধীরে ধীরে পৃথিবী শান্ত হয় ও উত্তপ্ত গলিত পদার্থগুলো ঠান্ডা হতে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে শক্ত পদার্থের একটা আবরণ তৈরি হয় সেই আবরণ কে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ক্রাস্ট বা পৃথিবীর উপরিভাগের শক্ত ভুমি। বিজ্ঞানীরাও পৃথিবীর উপরিভাগের শক্ত ভূমির তেজস্ক্রিয় বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বয়স নির্ণয় করেছেন এবং পৃথিবীর প্রথম শক্ত ভূমি অন্তত 430 কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল।
কিভাবে পৃথিবীতে সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছিল
পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে 380 কোটি বছর পর্যন্ত সময়কে বলা হয় এই হেইডেন ইয়ন। এই সময়ে পৃথিবীর উপরিভাগের তাপমাত্রা ছিল 1000 ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে এবং উত্তপ্ত গলিত লাভা এই সময়টা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা করে প্রমাণ করার মত কোন কিছুই পাওয়া যায় না। পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে প্রথম পাথর তৈরীর আগ পর্যন্ত এই সময়টাকে হেইডেন ইয়ন বলে।
পৃথিবীপৃষ্ঠ শক্ত আবরণ এ পরিণত হওয়ার পরেও মহাশূন্য থেকে নতুন পৃথিবীর উপর ধূমকেতুর বৃষ্টি চলমান থাকে। বিজ্ঞানী ডেলসেমেন, (1996) ধারণা করেন এই ধুমকেতুর পতন থেকেই পৃথিবীপৃষ্ঠে পানির সঞ্চার ও গ্যাসীয় পদার্থের সংযুক্তি ঘটেছিল বায়ুমন্ডলে। এভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠ ঠান্ডা হতে হতে বিশাল সমুদ্রে পরিণত হয় আর বায়ুমণ্ডলের সৃষ্টি হয়।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার মানব জাতির ধ্বংসের আলামত নয় তো? ইতিহাস কি বলে?
এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের যে ভয়াবহতা তা দেখে মনে হয় এটা কে নির্মূল করতে পৃথিবীকে অনেক মূল্য দিতে হবে। আর তা হবে মানুষের তাজা প্রাণ। ওয়াশিংটন ভিত্তিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে শুধু ভারতেই ৩০ কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। ইতিমধ্যের সমস্থ পৃথিবীর ১৬৯ টি দেশে এ মরণ ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। মানুষ আজ অসহায়।
বর্তমান পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতা ও টেকনোলজির উন্নতি যে মানব জাতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে না এর কোন নিশ্চয়তা নাই। কারণ বিখ্যাত নেচার সাইন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখান হয়েছে যে, ৬ষ্ঠ গন বিলুপ্তি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং অতি উচ্চ হারে প্রাণীর বিপর্যয় হচ্ছে।
আর বর্তমান করোনা ভাইরাসের যে মৃত্যু হার তাতে ৬ষ্ঠ গন বিলুপ্তির প্রাণীর বিপর্যয় হওয়ার হার আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়। ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিশাল আকৃতির ডাইনোসর গুলো পৃথিবীতে ১৬ কোটি বছর রাজত্ব করেছিল।আর এই দীর্ঘ সময় রাজত্বের পর মহা শুনন থেকে এক বিশাল উল্কা পিণ্ড বর্তমান মেক্সিকোর চিকচুলাভ নামক এক জায়গায় আছড়ে পড়ে আর এর প্রভাবে তাৎক্ষনিক ক্ষয়ক্ষতি সহ দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায় যাকে বলে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ধীরে ধীরে ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটে।
অনেকে ধারনা করনে যে, ডাইনোসরদের বিলুপ্তি সহ ওই সময়ে গন বিলুপ্তির ঘটনায় ৭০% প্রাণীর ধ্বংস হয়। এই সময়ের গন বিলুপ্তিকে বলে ট্রিয়াসসিক-জুরাসিক (KT Mass Extinction) গন বিলুপ্তি।
ট্রিয়াসসিক-জুরাসিক (KT Mass Extinction) সময়ে ডাইনোসর বিলুপ্তির আরও আগে ৪ বার মহা বিপর্যয় ঘটেছে যেখানে পারমিয়ান- ট্রিয়াসসিক (Permian-Triassic Mass Extinction, 252.0 Ma) সময়ে ৯০% পর্যন্ত প্রাণী মারা গিয়েছিল। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এই মহা বিপর্যয় ঘটেছে বলে অনেক ভূতাত্ত্বিক গবেষক প্রমাণ দেখিয়েছেন। সুতরাং অতীতের যত মহা দুর্যোগ তার বেশির ভাগ ই বৈশ্বিক উষ্ণাতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
আধুনিক যুগেও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, টেকনোলজির উন্নতি, ৬ষ্ঠ গন বিলুপ্তির (6th Mass Extinction) জন্য অন্যতম প্রভাবক। আর এই প্রক্রিয়া এখন চলমান। এর অনেক প্রমাণ বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, আমরা আমাদের চারিপাশে তাকালেও আমরা তার প্রমাণ পাই। যেমন কিছু প্রজাতির পাখি আমরা আর এখন দেখি না আমাদের চারিপাশে এমনি অনেক নাম না জানা প্রাণী ইতিমধ্যেই বিলুপ্তু ঘটেছে।
টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে আর এর ফলে করোনা ভাইরাস সমস্ত পৃথিবীতে মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়েছে। কিন্তু এই করোনা ভাইরাস গত শতাব্দীতে এতোটা ভয়াবহ ভাবে দ্রুত ছড়ায়নি। বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছে।
পৃথিবী এখন সবার হাতের মুঠোয় তবে এটা ঠিক যে এই বিশ্বায়নের জন্যই প্রাণী কুলের বিপর্যয় ও সহজতর হতে পারে। আধুনিক অস্ত্র যেমন পারমানবিক অস্ত্র মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে পারে। পারমানবিক অস্ত্রের আঘাত চোখে দৃশ্যমান হলে ও পরিবেশ ও জল বায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগ দৃশ্যমান নয়, দীর্ঘ মেয়াদে বোঝা যায়।
৬ষ্ঠ গন বিলুপ্তির চলমান প্রক্রিয়ার যোগ হতে পারে আর একটি প্রজাতি আর সেটা হল মানব জাতি। এজন্য এই মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে মানুষ কেই সচেতন হতে হবে।
মনুষ্য সৃষ্টি ও আদিম পৃথিবীঃ সংক্ষিপ্ত
আধুনিক মানব জাতির অস্তিত্বের প্রমান মিলিয়ন বছর আগে এই পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। প্রাথমিক প্রমান পাওয়া যায় বিভিন্ন ভাবে যেমন, ফসিল, মাথার খুলি, ও মানুষের হাড়ের খণ্ডাংশ থেকে। এটা সাধারণত মন করা হয় যে, ফসিল শুধুমাত্র সাধারন ও অনুমান নির্ভর প্রমান দেয়।
বিজ্ঞানিদের এখন অনেক নিখুত পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে ঐ সব পুরন ফসিল বা পরিবেশগত তত্ত বাবহার করে নির্ভুলভাবে প্রকৃত সত্য বের করে আনা সম্ভব। আধুনিক ফরেনসিক সাইন্স ও প্রযুক্তি বাবহার করে একটা বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য ঘটনা বের করে আনা যায়। আমাদের আধুনিক মানব জাতির পূর্বসূরীরা যে কত হাজার বছর আগে এই পৃথিবীতে বসবাস করত।
পৃথিবী সৃষ্টির সময় থেকে আজ পর্যন্ত বহু মিলিয়ন বছর পার হয়েছে, আর এই পৃথিবী নিয়ে গবেষণা করার জন্যই ভু তত্ত নামক বিষয়টির অধ্যয়ন শুরু হয়েছে। ভু তত্ত বিধ দের কাছে এখন আগের তুলনায় অনেক নিখুত প্রমান রয়েছে মিলিয়ন বছর ধরে কিভাবে পৃথিবী তার ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন সাধন করেছে আর এই ঘটনা গুলোর সঠিক সময় পৃথিবী পৃষ্ঠে বিদ্যমান প্রাগৈতিহাসিক পাথর গুলো থেকে নির্ভুল ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।
মহাশুন্যে বিগ ব্যাঙ থেকে বিচ্ছুরিত কনা গুলো ঘনীভূত হওয়ার মাধ্যম আজ থেকে ৪৬০ কোটি বছর আগে আমদের এই নীল পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল। অবাক লাগে তাই না? এত কাল আগে এই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল? হ্যাঁ এটা এখন সর্বজন সিদ্ধ একটা সত্য।
প্রথমে সমস্থ গ্রহটা ছিলও গলিত, কোন বাতাস, পানি ছিল না। ৫ কোটি বছর পর, পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং পৃথিবী পৃষ্ঠে কঠিন পাথর সৃষ্টি হয়। পাথর সৃষ্টির প্রক্রিয়া তা খুব ই সাধারন ও সহজ। গলিত অংশ টা মুলত বর্তমানে পৃথিবীর গভীরে অবস্থিত ম্যাগমা যাকে ভু গর্ভ থেকে উদ্গিরিত হয়ে ভু পৃষ্ঠে বের হয়ে আসলে লাভা বলে।
এরপর আরও অধিক তাপ কমে গেলে ধীরে ধীরে মহা সাগর সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে প্রথম আণুবীক্ষণিক জীব ৩৬০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়। তার পরের ৩০০ কোটি বছরে সৃষ্ট প্রাণী মুলত খুব সাধারন মানের ছিল। যেমন, এক কোষী প্রাণী থেকে শুরু করে সাধারন দৃশ্যমান প্রাণী। এর একটা উদাহরণ হল, ট্রাইলবাইট। এই ট্রাইলবাইট প্রাণীটা অধিক সংখ্যক বিদ্যমান ছিল তরকালীন সমুদ্রে।
এবং ঐ সময় টাকে বলা হয় প্রিকাম্ব্রিয়ান সময়। অর্থাৎ পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে ৫৫ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত সময়কে প্রিকাম্ব্রিয়ান সময় বলা ৫৫ কোটি বছর থেকে আজ অবধি সময় টাকে বলা হয় প্যালিওজোইক সময়। এই প্যালিওজোইক সময়ের ইতিহাস মানুষ অধিক বিস্তারিত ভাবে জানার সুযোগ পেয়েছে এর একটা কারন হল এ সময়ে ভু পৃষ্ঠে ও পাথরের মধ্যে মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ এর উপস্থিতি যাকে বলে ফসিল।
এই ফসিলের উপস্থিতই পূর্বের সময়কে আমাদের সামনে তুলে আনে কি কি প্রাণী ছিল ও কোন পরিবেশে তারা বাসবাস করত, ইত্যাদি। এই ফসিল এর সাহায্যেই বিজ্ঞানীরা প্রথম জিওলজিক টাইম স্কেল তৈরি করেছিল যা এখন আরও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে উন্নত ও নিখুত হয়েছে।
প্রাগৈতিহাসিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাঃ ৪৬০ কোটি- বর্তমান সময়
ভূতাত্ত্বিক সময়কে ইরা ও পিরিয়ড এ ভাগ করা হয়েছে যে গুলো ১৮৩০ থেকে ১৮৪০ সালের দিকে নামকরণ করা হয়েছে।
৪৬০ কোটি বছরঃ পৃথিবীর সৃষ্টি
৩৬০ কোটি বছরঃ প্রথম প্রাণের সন্ধান
২৪০ কোটি বছরঃ প্রথম ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান
১৮৫ কোটি বছরঃ প্রথম ইউক্যারিওটিক কোষের সন্ধান যার দ্বারা মানুষের শরীর গঠিত।
৫৩.৫ কোটি বছরঃ প্রথম মাছ
৪৮.৫ কোটি বছরঃ প্রথম হাড় বিশিস্ঠ প্রাণী
৪২.৫ কোটি বছরঃ সব থেকে পুরাতন গাছ
৩৮.০ কোটি বছরঃ প্রথম মাকড়শা
৩৭.৫ কোটি বছরঃ প্রথম উভচর যেমন ব্যাঙ
৩২.০ কোটি বছরঃ প্রথম কনিফার গাছ
২২.৫ কোটি বছরঃ প্রথম ডাইনোসর
২১.৫ কোটি বছরঃ প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী
১৫.৫ কোটি বছরঃ প্রথম পাখি
১২.৫ কোটি বছরঃ ফুল ধরে এমন প্রথম গাছ
৬.৫ কোটি বছরঃ প্রথম প্রাইমেট। মানুষের পূর্ব পুরুষ। ডাইনোসর বিলুপ্তির পর পরই কাঠবিড়ালি জাতিও কিছু গেছো প্রাণীর উদ্ভব হয়।
৬.৫- ৫.৫ কোটি বছরঃ কনিফার জাতিও গাছগুলোর অধিক বৃদ্ধি পায়।
৬.৫- ৫.৫ কোটি বছরঃ অতি দ্রুত বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবির্ভাব হয়।
৬.৫ কোটি বছরঃ বর্তমান মেক্সিকোতে উল্কাপাত
৬.০ কোটি বছরঃ প্রথম মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী।
৬.০ কোটি বছরঃ রকি পর্বতের উৎপত্তি।
৫.৫ কোটি বছরঃ প্রথম ঘাস
৫.৫ কোটি বছরঃ প্রথম তিমি, প্রথম ঘোড়া, প্রথম খরগোশ।
৫.0 কোটি বছরঃ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের কার্বনডাই অক্সাইড ছিল বর্তমান পৃথিবীর দুই গুন বেশি ও অক্সিজেন ছিল বর্তমান অক্সিজেন এর ২৩%।
৩.৫ কোটি বছরঃ প্রথম কুকুর সদৃশ প্রাণীর আবির্ভাব।
৩.০ কোটি বছরঃ বানরদের থেকে এপ (নরবানর) প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধি।
৩.০ কোটি বছরঃ প্রথম বিড়াল
৩.০ কোটি বছরঃ আল্পস পর্বতের উত্থান শুরু।
২.৮ কোটি বছরঃ প্রথম বৃহদাকার স্থলভাগের স্তন্যপায়ী প্রাণী।
২.৫ কোটি বছরঃ প্রথম হরিণ
২.০ কোটি বছরঃ হিমালয় পর্বতের উত্থান শুরু।
১.৯ কোটি বছরঃ আফ্রিকা মহাদেশে নরবানরদের বংশবৃদ্ধির আধিক্য।
১.৪- ১.০ কোটি বছরঃ (প্রাইমেটস)নরবানরগুলো আফ্রিকা থেকে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আল্পস পর্বতের উত্থান শুরু।
১.০ কোটি বছরঃ দক্ষিণ আমেরিকা ধীরে ধীরে উত্তরে সরে যেতে থাকে।
৮০ লক্ষ বছরঃ ইউরোপের সাথে ধাক্কা লেগে, আফ্রিকা মহাদেশর উত্তরে সরে যাওয়ার গতি থেমে যায়।
৬৫ লক্ষ বছরঃ প্রথম সম্ভব্য মানুষের পূর্বপুরুষ।
৬০ লক্ষ বছরঃ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বর্তমান তাপমাত্রার সদৃশ হয়।
৫০ লক্ষ বছরঃ বৃহৎ আকারের তৃণভোজী ও মাংসাশী প্রাণীর উত্থান।
৫০ লক্ষ বছরঃ তেথিস সাগরের সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হওয়া।
৪২ লক্ষ বছরঃ প্রথম অস্ট্রেলপিথেসিয়ান্স মানুষের আবির্ভাব।
২ লক্ষ বছরঃ প্রথম আধুনিক মানুষের আবির্ভাব।
পারমিয়ান গন বিলুপ্তি (mass extinction) দুর্যোগঃ পর্ব -১
পারমিয়ান মাস এক্সটিংশান mass extinction হল আজ থেকে ২৫১.৯৪ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে একটা বড় দুর্যোগ। এ সময়ে সমস্ত পৃথিবীর ৯০% সমুদ্রের অমেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যায় আর স্থলভাগের ৭০% মেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যায়। পারমিয়ান সময়ের প্রথম দিকে উচ্চ হারে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বর্তমান সাইবেরিয়ার তৎকালীন সাইবেরিয়ান আগ্নেয়গিরির উদ্গিরন(>3.0 × 106 km3 )এর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
তাছাড়া সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্র স্রোত এর ধীরগতি অথবা সমুদ্রের পানির অক্সিজেন এর ঘাটতি, পানি পিএইচ pH কমে গিয়ে অধিকতর অম্ল হওয়া, সমুদ্রের তলদেশের মিথেন গ্যাস এর উদ্গিরন ও অন্যান্য কারণে প্রাণীগুলো মারা যাওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।
পৃথিবীর বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা কমপক্ষে ৬০ হাজার বছর থেকে ১২০ হাজার বছর পর্যন্ত থাকার কারণে স্থলভাগের গাছপালা বা ইকো সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ার কারণ হতে পারে। বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন এ তৎকালীন সময়ের মাটির শুষ্কতার একটা প্রমাণ পাওয়া যায়।
কারু-বেসিন-মডেল এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যে, গভীর নদী থেকে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার নদীতে রূপান্তর সাধারণত গুলজাতীয় গাছপালার ধ্বংস হওয়া কে বোঝায় যে এর সাথে উক্ত গুল্ম জাতীয় গাছপালার উপর নির্ভরশীল মেরুদণ্ডী প্রাণী গুলোও অতি দ্রুত হারে পারমিয়ান সময়ে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে মারা যায়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পারমিয়ান- ট্রিয়াসসিক সময়ের মেরুদণ্ডী ফসিল রেকর্ড এর মাধ্যমে মোট ৮টি জোন এ ভাগ করা হয়।
যেখানে মিডিল পারমিয়ান এর মাস এক্সস্টিংসান (mass extinction) এর সময়কার ফসিল Tapinocephalus পাওয়া গিয়েছে এবং এটা আরও অন্যান্য ইউরেনিয়ায়ম-লেড এর মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। একটা আগ্নেয়গিরির উদ্গিরিত ছাই এর স্তর থেকে ইউরেনিইয়ায়ম-লেড অনুপাত পরিমাপ করে বয়স নির্ণয় করে জানা গিয়েছে যে, স্থলভাগের মাস এক্সক্টিংশান mass extinction) হয়েছিল সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংশান হওয়ার কয়েক শত হাজার বছর আগে।
গত ১০০ বছরের ও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন এ মেরুদণ্ডী প্রাণীর যে ফসিল রেকর্ড রয়েছে সেটা থেকে পারমিয়ান সময়ের বিলুপ্তি প্রাপ্ত মেরুদণ্ডী প্রাণী, তাদের বসবাসের জায়গা, ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ভাল ধারনা পাওয়া যায়।
পারমিয়ান সময়ের সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান ঐ সময়ের সাইবেরিয়ান ট্র্যাপ উদ্গিরন সৃষ্ট বৈশ্বিক শুষ্কতার কারণে স্থলভাগে ঘটে যাওয়া গন বিলুপ্তির সাথে সম্পর্কিত। লেট চাংশিংজিয়ান (পারমিয়ান)সময়ের আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে নির্ণীত বয়স ও Lystrosaurus মেরুদণ্ডী ফসিল এর স্তর থেকে নির্ণীত সময় এর হিসাবে সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংশান (mass extinction) থেকে ৩৪০ হাজার বছর বেশি পুরনো। তাই আচরণগত ভাবে হোক বা ভৌতিক, ম্যাস এক্সক্টিংসানের (mass extinction) মেকানিজম যে ভাবেই হোক না কেন Lystrosaurus নামক চতুষ্পদ প্রাণীর ফসিল গুলো কিছুতেই পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংসান এর সমসাময়িক নয়।
অন্য একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে Glossopteris নামক এক প্রজাতির গাছ ধ্বংস হওয়াকে স্থলভাগের গন বিলুপ্তির প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপক করা হয় । এই স্থলভাগের গন বিলুপ্তির এর সাথে সামুদ্রিক ম্যস এক্সক্টিংসানের তুলনা করলে দেখা যায় যে সামুদ্রিক ম্যস এক্সক্টিংসানের ৩৭০ হাজার বছর আগে স্থলভাগের গন বিলুপ্তির শুরু হয়েছে, যা কিনা সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির উদ্গিরনের শুরুর সমসাময়িক।
কিছু স্পোর-পোলেন ও ইনডেক্স ফসিল সাহায্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেখা যায় যে দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সমসাময়িক ঘটনার প্রমাণ আছে। এভাবে দেখা যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাড়ু বেসিন থেকে প্রাপ্ত চতুষ্পদী প্রাণীর ফসিল দিয়ে সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান ও স্থলভাগের ম্যাস এক্সটিংসান এর ঘটনা দুটিকে সমসাময়িক ঘটনা বলা হত সেটা আর থাকছে না।
বরং সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান (mass extinction) ও স্থলভাগের ম্যাস এক্সটিংসান (mass extinction) দুটি সম্পূর্ণ পৃথক ঘটনা যাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ হাজার বছরের ব্যাবধান রয়েছে।
পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত না হলে এখন যা ঘটতো
পৃথিবীতে এক সময় ডাইনোসর রাজত্ব করেছে একথা দিবালকের মত প্রমাণিত। আজ থেকে ৬৬ মিলিওন বছর আগে এক মহা বিপর্যয় ঘটেছিল আর ট্যাট্যাই সমস্ত ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে। ডাইনোসর পৃথিবীতে কোটি বছর রাজত্ব করছে। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে ডাইনোসরদের অভিযোজন ক্ষমতা কতো টা শক্তিশালী।
বিজ্ঞানীদের ধারনা এক উল্কা পাতের কারণে ডাইনোসরগুলো মারা গিয়েছিল। তবে জাপানের তহকু বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর কুনিও কাইহ গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, ৬.৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে পতিত উল্কা যদি বর্তমান মেক্সিকোর চিকশুলুব খাদ (Chicxulub crater) নামক জায়গাই না পড়ে অন্যও কোথাও পড়ত তবে ডাইনোসর বিলুপ্ত নাও হতে পারত।
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার পর পৃথিবীর যে আবহাওয়া গত পরিবর্তন হয় তার জন্য নতুন নতুন প্রাণীর আবিরভাব হয়। তার মধ্য মানুষ ও ছিল। তাই ডাইনসর বিলুপ্ত না হলে হয়ত মানুষ এই পৃথিবীতে আসতে পারত না। ধন্যবাদ ডাইনোসর।
তবে যদি ডাইনোসর আর মানুষ এক সাথে পৃথিবীতে বসবাস করত তবে নিশ্চয়ই মানুষ ই জয়ী হত।
ডাইনোসর dainosaur বিলুপ্ত হয়েছিল কিভাবে?
উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয় । তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্তত ৬০ মিলিয়ন বছর আগেই তাদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। নতুন এ তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১২০ মিলিয়ন বছর আগেই ডাইনোসরের (dainosaur) বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ধারণা করা হয়, ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে অন্তত ১০ কিলোমিটার আকৃতির গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।
তবে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, এর অনেক আগে থেকেই এ বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। উল্কা আঘাতের ফলে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত
আকাশ ঢেকে যায়। যে স্থানটিকে উক্লাপাত হয়েছিল সেই স্থানের নাম মেক্সিকোর চিকচুলাব। এই চিকচুলাবের ভু গর্ভে প্রচুর পরিমাণ তেল গ্যাস মজুত ছিল । অর্থাৎ এটা একটি কয়লা ও পেট্রলিয়াম এর খনি। উল্কা পাতের ফলে ভস্মীকৃত কয়লার কণা আকাশের স্ট্রাটস্ফারের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
ফলে ২০৩ বছর পর্যন্ত আকাশ কালো মেঘে ঢেকে থাকতো। এর ফলে ডাইনোসর (dionosor) গুলো তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙ্গে পড়ে। দীর্ঘ মেয়াদে কিছু ডাইনোসর dainosaur মারা পড়ে।
এর পরে যখন ধীরে ধীরে পৃথিবীর আকাশের কার্বন স্যুট কণা গুলো মাটিতে পড়ে আকাশ পরিষ্কার হতে থাকে। উক্লাপাতের ফলে বিপুল পরিমাণ SO2, CO2, নির্গত হয়। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ মেয়াদে এটার একটি নেতিবাচক ফল ছিল ডাইনোসর (Dainosaur) গুলোর বিলুপ্তির জন্য।
তবে ডাইনোসর বিলুপ্তির জন্য শুধু একটি কারণ ই দায়ী নয় বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা। প্রমাণের ভিত্তিতে তারা বলে যে বর্তমান ইন্ডিয়াতে ডেক্কান ট্র্যাপ নামক জায়গাতে দীর্ঘ সময় ধরে তিনটা ধাপে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে ডাইনোসর (Dainosaur) বিলুপ্তি হতে পারে।
কারণ ডেক্কান ট্র্যাপ এমন একটি জায়গা যেখানে ক্রিতেচিয়াস পালেওজিন সময়ের মধ্যেই অগ্নুৎপাত হয়। এবং এটা এত বৃহৎ আঁকারে হয় হয় পৃথিবীর সবথেকে বৃহৎ লাভা ফ্ল এই ডেক্কান তড়পেই অবস্থিত যেটা মহারাষ্ট্র থেকে শুরু হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছিল। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে এই অগ্নুৎপাত হয়েছিল। যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে ডাইনোসর দের জন্য বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে এবং ডাইনোসর (Dainosaur) গুলো গুলো মারা যায়।।
More Stories
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪
রাসেল ভাইপার কেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে