আঞ্চলিক ভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারি
1952 সালের 21 ফেব্রুয়ারি তারিখে পূর্ববঙ্গের কিছু তরুণ জনতা পাকিস্তানি শাসকের নিপীড়নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল এবং বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার দাবিতে রাস্তায় মিছিলে বেরিয়েছিল আর সেই জনতার মিছিলে পুলিশ প্রশাসন লেলিয়ে দিয়ে নিশংস ভাবে হত্যা করেছিল বাংলা ভাষার নবীন জনতা রফিক শফিক জব্বার ও নাম না জানা অনেকে। পাকিস্তান বাংলাদেশের উপর অত্যাচার করেছে দীর্ঘদিন ধরে হরণ করেছে বাংলার সম্পদ এমনকি সংস্কৃতি। বাংলা সংস্কৃতিতে তারা মিশিয়েছে পাকিস্তানি কালচার।
প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব সত্তা থাকে , একটি নিজস্ব স্টাইল থাকে। এভাবেই গড়ে ওঠে একটি পরিবার, একটি সমাজ, দেশ। কোন দেশ সম্পূর্ণ তার নিজের কৃষ্টি-কালচার আচার-ব্যবহার দিয়ে আবদ্ধ থাকে। মানুষ সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কথা বলতে। যেমন, আমরা আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে কতই না সহজ মনে করি, কতই না আরাম বোধ করি, মনে হয় যেন নিজের অতি আপন একটি সত্তা। কোন মানুষ যতই শিক্ষিত হোক, উচ্চশিক্ষায় দেশবরেণ্য হোক, বহুবিধ ভাষায় পারদর্শী হোক কিন্তু মাতৃভাষায় কথা বলা মায়ের ভাষায় কথা বলা একেবারেই অন্যরকম অনুভূতি। যখন মায়ের সাথে আমরা কথা বলি আমরা ভুলে যাই শিক্ষা উন্নত জীবন প্রাচুর্য বিলাসিতা, বিদেশি ভাষার দক্ষতা ।
মায়ের ভাষায় আমরা কথা বলি, মা বলে, “তুই কেমন আছিস বাবা” আমি প্রতি উত্তরে বলি “তুমি কেমন আছো মা” মা যেন একটু দূরে চলে গেল! যখনই আমি বিদেশি ভাষার প্রাচুর্য নিয়ে প্রতি উত্তর দেই “মা, আপনি কেমন আছেন” আমার মাকে যেন আমি আরো দূরে ঠেলে দিলাম! ঠিক তেমনি বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে ঘটেছিল, পাকিস্তানিরা চেয়েছিল আমরা যেন মায়ের সাথে নিজের ভাষায় মায়ের ভাষায় কথা বলতে না পারি। তারা চেয়েছিল উর্দু ভাষায় আমরা মায়ের সাথে কথা বলবো। এটা কি কখনো হয়? এটা একটা ব্যক্তি স্বাধীনতায় অন্তরায়। মানসিক নির্যাতনের সমান। তাই বাঙালি অনুধাবন করেছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবি ছিনিয়ে আনতে হবে। মাকে আপন করে রাখতে হবে। ভাষার মাধ্যমে। যেন কথা দিয়ে মাকে কষ্ট না দিয়ে থাকি।
এ ভাষার একটি আলাদা মাধুর্য টান প্রেম ভালোবাসা রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষা একেবারেই নিজের ভাষা তাই এই মাতৃভাষা দিবসে হোক আমাদের অঙ্গীকার আমরা যেন আমাদের আঞ্চলিক ভাষা মায়ের ভাষাকে ভুলে না যাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা। এই আঞ্চলিক ভাষা একটা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করে। যেমন জাপানিজ দে কথা বলার ভাষা হল নিহন কিন্তু তাদের প্রতিটা প্রদেশে বা প্রিফেকচারে একটা করে নিজেস্ব আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে।
বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের অন্তর্ভূক্ত জেলা গুলোতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য উপজাতি বা আদিবাসী না থাকায় এ বিভাগের সকল অধিবাসীদের ভাষা মূলত প্রমিত বাংলা। এ বিভাগের অন্তর্গত বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা পূর্বে ভারতের নদীয়া জেলার অন্তর্গত থাকায় কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা এলাকার অধিবাসীদের উচ্চারণে নদীয়া শান্তিপুরের টান লক্ষ্য করা যায়, যা পরিশীলিত ও শ্রুতিমধুর। এ বিভাগের যশোর, সাতক্ষীরা এবং অন্যান্য এলাকার ভাষায় আঞ্চলিকতা থাকলেও তা সারা দেশে প্রচলিত ভাষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আজও পর্যন্ত এ এলাকায় বিভিন্ন পূজা পার্বণে, নবান্নে, ধর্মীয় উৎসবে এ আঞ্চলিক ভাষার গান বাজনা, সয়ার পয়ার, পট, গাজীর গান, হারের গান ও অষ্টোক গান, রাম যাত্রা, পালা, কীর্তণে এ আঞ্চলিক ভাষায় গীত হয়ে আসছে।
আঞ্চলিক ভাষা র একটি গানের অংশ-
আশ্বিন গেল কাততিক আ’লো
মা লক্ষ্মী ঘরে আ’লো
ধান সত খায় রে হৈ।
‘‘ধান পড়েছে গড়ায়ে
শিয়েল গেল নড়োয়ে’’
ধান সত খায় রে হৈ।
তাই আসুন নিজ নিজ অঞ্চলের মাতৃ ভাষাকে পুনরুজিবিত করি এবং আমাদের মাতৃ ভাষাকে আরও সমৃদ্ধি করি।
More Stories
পুন্ড্রবর্ধন: ঐতিহাসিক রহস্যের এক অধ্যায়
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪