Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

যে কারণে ডাইনোসর বিলুপ্তি হয়েছিল ৪০ বছরের বিতর্ক

Spread the love

আজ থেকে ৬.৬ কোটি বছর আগের কথা। মহাশূন্য থেকে ১০ কিমি আকারের একটি উল্কা পিণ্ড বর্তমান মেক্সিকোর একটি অঞ্চল ইউকাতান এর একটি গ্রামে পড়েছিল আর এর ফলে ১৮০ কিমি এলাকা জুড়ে একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয় যাকে বলে ক্রাটার। যাকিনা দীর্ঘদিন ধরে মাটির নিচে লুকাইত ছিল। বিজ্ঞানীরা সেই স্থানে ড্রিল করে এই বিশাল আকৃতির গর্তের সন্ধান পায় যা কিনা শুধু মাত্র বিশাল উল্কা পিণ্ডের ফলেই তৈরি হওয়া সম্ভব। এই গর্ত যে উক্লা পড়ার কারণেই তৈরি হয়েছে তার প্রমাণ বিজ্ঞানীরা খুঁজেছেন। সেখানে তারা অধিক পরিমাণে Hg (মার্কারি ) ও (ইরিডিয়াম) Ir এর সন্ধান পেয়েছেন। আর এর উৎস পৃথিবীতে এত অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় না। সুদূর কোন উল্কা থেকেই এর উৎস হওয়া সম্ভব। তা ছাড়া আরও অনন্য কারণ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে এই বিশাল গর্ত কেবল মাত্র উল্কা পাতের ফলে তৈরি হওয়া সম্ভব। এবং এর সাথে ডাইনোসর বিলুপ্তির সম্পর্ক রয়েছে।

ডাইনোসর বিলুপ্তি
৬.৬ কোটি বছর পূর্বে উক্লা পাতের ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্তি হয়েছিল।

ডাইনোসর বিলুপ্তির কারণ কি?

৬.৬ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে কোন মানুষ ছিল না এটা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই উক্লাপাতের ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্তি হয়েছিল। উল্কাপাতের ফলে পৃথিবীতে তৎক্ষণাৎ কিছু পরিবর্তন ঘটে যেমন বিশাল আকারের সুনামি সৃষ্টি হয়, ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা ছিল রিক্টার স্কেলে ১১, উক্লা পাতের ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ চারিদিক ভস্মীভূত করে। এবং এর প্রভাব ধীরে ধীরে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপী হতে থাকে। উক্লা পাতের ২-৩ বছর ধরে পৃথিবী তে সূর্যের কিরণ পৌঁছাত না কারণ স্ত্রাটস্ফেয়ার পর্যন্ত ভস্ম ও কার্বন স্যুট কণা পৌঁছে সূর্যের কিরণ কে বাধা সৃষ্টি করত। আর আর ফলে পৃথিবী অন্ধকার ছিল ২-৩ বছর। এজন্য বিশাল আকারের ডাইনোসরদের খাবার জোগান ও বাস্তু সংস্থান পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। ৭০ ভাগ স্থলজ প্রাণী মারা যায় ডাইনোসর সহ। তবে কিছু কিছু প্রাণী যারা মাটির গর্তে বসবাস করতো তারা রক্ষা পেয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। পৃথিবী অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে আলোময় হয় হতে থাকে কিন্তু বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং সমুদ্রও পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বাড়ে, ফলে, সমুদ্রের প্রাণী মারা যায় তাছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বনে আগুন লাগা, বন ধ্বংস হওয়া থেকে শুরু করে, মাটির ক্ষয় সাধন হতে থাকে, এবং সমুদ্রে গিয়ে অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধতা পেয়ে সমুদ্রের (algae) আলজি বৃদ্ধি পায় এবং অধিক দ্রবীভূত অক্সিজেন শোষণ করে সমুদ্রের প্রাণীর ক্ষতি সাধন করে। এভাবে স্থলজ ও জলজ প্রাণী ধ্বংস হয় যা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধে দেখিয়েছেন।

ডাইনোসর যেহেতু বিশাল আকৃতির প্রাণী তাই তাদের প্রচুর খাদ্য প্রয়োজন হত তবু উক্লা পাতের সাথে সাথেই সমস্ত ডাইনোসর বিলুপ্তি হয়নি। সম্পূর্ণ রূপে ডাইনোসর বিলুপ্তি হতে সময় লেগেছে। ডাইনোসরেরা কয়েক কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাস করেছে।

ডাইনোসর বর্তমান পৃথিবীতে এখনও বসবাস করতে পারত যদি এমনটি হত!

জাপানের তহহকু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কুনিও কাইহো তার এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, বর্তমান মেক্সিকোর চিক্ষুলাব নামক যে জায়গাতে উক্লা পাত হয়েছিল তার ঠিক নিচেই রয়েছে বিশাল এক কয়লা ও তেলের খনি। যার কারণের উল্কা পাতের জন্য আর ধ্বংস যজ্ঞ ও অধিক হয়েছে এবং অধিক পরিমাণে কার্বন স্যুট কণা যা কিনা ২-৩ বছরের জন্য পৃথিবী অন্ধকার করে রেখেছিল। তা ছাড়া সালফার ডাই অক্সাইড বাতাসের জলীয় অংশের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড তৈরি করে যা কিনা ধ্বংসাত্মক প্রাণী ও উদ্ভিদ কুলের জন্য। কুনিও কাইহ আরও দেখিয়েছেন, উল্কা পাত মেক্সিকোতে না পড়ে অন্য কোন জায়গা পড়লে হয়ত এখন ডাইনোসর বেঁচে থাকতো।

বিজ্ঞানীরা ধারনা করে যে, ক্রিতেশিয়াস- পালিওসিন সময়ে উল্কা পাতের মাধ্যমে ডাইনোসর বিলুপ্তি না হলে হয়ত পৃথিবীতে মানুষ আসতো না। কারণ সমস্ত প্রকৃতি নতুন করে শুরু হত না। আর এতে মানুষের ইভলিউশন বা বিবর্তন এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ত নাও হতে পারত।