Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করে কি বলেছিলেন

Spread the love

শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করে কি বলেছিলেন

পশ্চিম পাকিস্তানের জেল থেকে বেরিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই জানুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ দেখার জন্য গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিদর্শনের বের হন। ঢাকায় ফিরে ২০০ জনের অধিক বিদেশী ও দেশীয় সাংবাদিকদের নিয়ে এক সম্মেলনে নিজে থেকে সমস্ত দুঃখের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকেই পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের মতো করে নিশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে।
শেখ আরও বলেন আপনারা জানেন জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যা সম্বন্ধে পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিটি গ্রাম কেই জালিয়ানওয়ালাবাগ বানিয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমানঃ উইকিপিডিয়া

শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন পরবর্তী অনুসন্ধান কমিটির বিবরণ

বাংলাদেশ অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে, সত্যতার ভিত্তিতে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরবে বলে ঘোষণা করে। কমিটি প্রকৃত সত্য যা তাই হুবহু তুলে আনার চেষ্টা করেছিল এবং সামগ্রিক প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে তথ্য প্রমাণ প্রকাশ করেছে। এটা একেবারেই অসম্ভব ছিলনা যে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের জন্য দোষীদের পাকড়াও করা যাবে অতি সহজে।
বাংলাদেশ অনুসন্ধান কমিটি এইসব জঘন্য ঘটনাবলীর তথ্যাদি প্রমাণসহ রেকর্ড ধারণ করেছিল যাতে কিনা পাক বাহিনীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। শুধু মেয়েদের ধর্ষণের ব্যাপারেই নয় ছেলেদেরও যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল। কিছু কিছু ঘটনা কোনদিনই প্রকাশ করা হয়নি বা প্রকাশ করা যায়নি ।
বাংলাদেশ অনুসন্ধান কমিটির কাজ এটা নয় যে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে ভাষাগত ভাবে মার্জিত করে প্রকাশযোগ্য করে প্রকাশ করা প্রকৃত ঘটনা যা তাই হলো সত্য প্রকাশ এর নাম। এর মধ্যে কুমিল্লা শহরের নাগারি পাড়ার একটি ঘটনা যেখানে একটি হিন্দু মেয়ে নাম এম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাই “এম” বলে সম্বোধন করা হলো । তাকে অন্য চারটি মেয়ের সাথে উদ্ধার করা হয়। তার গল্পটি অতি মর্মান্তিক একটি ঘটনা।
ঘটনাটি ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকা সংবাদ এ ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছিল। একটি ১৬ বছরের ষোড়শী মেয়ে নাম “এ”, তার পিতা একজন কামার। পিতার চারজন পুত্রবধূকে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে যায়। তার পূর্বেই বাড়ির অন্য সব পুরুষ সহ ৬ জন সদস্যকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
এই গল্পটি বলেছিল বাংলাদেশ অনুসন্ধান কমিটির কাছে জমা দেওয়া বিবৃতিতে ওই চারজন পুত্রবধূর একজন যার নাম “এম” যা আগেই বলা হয়েছে।
আলী আজম নামে একজন স্থানীয় রাজাকার নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে কামারের বাড়িটি তল্লাশি করে । ওই রাজাকাররা ও তাদের স্থানীয় দোসরা বাড়িঘর লুট করে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যারাকে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। সৌভাগ্যক্রমে “এম” নামের মেয়েটি বাড়িতে ছিল না যখন রাজাকাররা বাড়ি তল্লাশি করেছিল। “এম” বলে যে আমরা সবাই বাড়ির পুকুরের কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে ছিলাম।
“এম” বলেছিল আমার শ্বশুরকে ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যা করা হয়। “এ” তখন হঠাৎ বাড়িতে এসে দাও দিয়ে প্রতিরোধ করতে যায় এবং আমরা সবাই তখন প্রতিরোধ করি এক পর্যায়ে রাজাকাররা চলে যায় কিন্তু পরক্ষনেই আবার পাকিস্তানি সেনাদের সাথে নিয়ে সদল বলে ফিরে আসে।
রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা বাড়িতে এসেই এলোপাথাড়িগুলি বর্ষণ করতে থাকে সমস্ত বাড়ি তছনছ করে দেয় এবং সমস্ত পুরুষ সদস্যদের ধরে নিয়ে নিকটস্থ আদালত পাড়ায় নিয়ে সেখানে গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলে। পাকসেনারা তখন যুবতী পুত্রবধূদের ধরে নিয়ে পাশের ক্যানালের কাছে গিয়ে গণধর্ষণ করে।
এম আরো বলছিল তারপর পাক সেনারা আমাদেরকে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং সেখানেও প্রচন্ড নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়। অন্য সেনারা যেন কামার্ত হয়ে আমাদের উপর একে একে বিরামহীন ভাবে ধর্ষণ করতে থাকে। তাদের এই পাশবিক নির্যাতনের খেলায় “এ” নামের পুত্রবধূটি সম্পূর্ণরূপে অচেতন হয়ে পড়ে এবং তাকে আর ধর্ষণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমরা ক্যাম্প থেকে বের হতে পেরেছিলাম কিন্তু “এ” কে তারা ছাড়েনি। তারা তাকে আরো দুই দিন ক্যাম্পে আটকে রেখেছিল।
হঠাৎ একদিন সকালে আমাদের বাড়ির পাশের ক্ষেতে তাকে অচেতনভাবে পড়ে থাকতে দেখি । সে পাগল হয়ে গিয়েছিল এবং কোন কথা বলতে পারতো না। যখন মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত মহিলাদের নির্যাতনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও সম্মানের সহিত পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির একটি দল তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে সেদিনও সে কিছু বলতে পারেনি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো।