Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

70+ অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

Spread the love

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার শ্রীমুখ থেকে নিঃসৃত উপদেশসমূহঃ

Download EBOOK অনুপ্রেরণামূলক উক্তিঃ লোকনাথ ব্রহ্মচারী Compressed PDF

ব্রহ্মজ্ঞ বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী বারদি গ্রামে প্রায় ছাব্বিশ -সাতাশ বছর লীলা করছেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ১৫০-১৫৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তাঁর অপরূপ লীলার উদ্দেশ্যই ছিল সাধারণ মানুষকে দিব্য কর্মের আদর্শ দেখিয়ে দিব্য জীবনের অধিকারী করা।

মানুষের মধ্যে ধর্ম কর্ম সত্য নিষ্ঠা ও সামাজিক রীতি নীতিকে পুনরিজ্জিবিত করে তূলতে লোকনাথ কোথাও কোন ভাষণ দেন নি। বারদি আশ্রম (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ)থেকে ভক্তদের উদ্দেশ্য করে কাখন বা কোথা প্রসঙ্গে কাখন অন্তরঙ্গ শিষ্যদের কাছে, কাখন বা তাঁর অতি প্রিয়দের কাছে, বা তত্ত্ব জিজ্ঞাসুদের কাছে বাবা লকনাথা যে উপদেশ প্রদান করেন তা বিভিন্ন সংগ্রহ সূত্র থেকে উদ্দার করে এখানে প্রকাশিত হল।

 

প্রসঙ্গতঃ লোকনাথ ব্রহ্মচারী ছিলেন জাতিস্মর, গত দুই জন্মের কথা তিনি পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করতে পারতেন। তিনি তাঁর জীবনে আরও অনেক জাতিস্মর মহান ব্যাক্তিদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাঁর মধ্যে, ত্রিকাল দর্শী তৈলঙ্গ স্বামী, জাতিস্মর মধ্যপ্রাচ্যের আব্দুল গাফফার নামে এক মহা যোগী। বাংলা ১২৯৭ সনের ১৯শে জ্যৈষ্ঠ লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবা দেহত্যাগ করেন।

 

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি/উপদেশ সমূহঃ

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি
অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

 

অধ্যয়ন করা, সৎ পাত্রে দান করা, যজ্ঞ অনুষ্ঠানকরা, নীতি পরায়ন হওয়া, সত্যকে আশ্রয় করে থাকা ক্ষমা গুন সম্পন্ন হওয়া ঘৃণা ও লোভ তাগ করা এই আট টি ধর্মের পথ।

যে কাজ আগামী কাল করা যেতে পারে সেকাজ আজই করে ফেলবি। জা বিকালে করা যেতে পারে তা সকালেই করতে চেষ্টা করবি।কেননা তোর কাজ হোক বা না হোক মৃত্যু তার জন্য অপেক্ষা করবে না

ধমই একমাত্র শ্রেয়। ক্ষমাই একমাত্র শান্তি।বিদ্যা ই একমাত্র তৃপ্তি।আর হিংসা ই একমাত্র সুখ নিদান (সুখের মুল কারণ)

অ-নৃশংসতাই (অন্যের প্রতি অনিষ্ঠ আচরণ না করা বা নিষ্ঠুরতা না দেখানো) উৎকৃষ্ট ধর্ম। ক্ষমা ই পরম বল। আত্মজ্ঞান ই সর্ব শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। আর সত্য ই পরম পবিত্র ব্রত।

যা সাধারণের হিতজনক (কল্যাণকর)তাই সত্য । সত্য ই শ্রেয় লাভের দ্বিতীয় উপায়। সততের প্রভাবেই যথার্থ জ্ঞান ও হিত সাধন হয়।

যা সত্য তাই ধর্ম। যা ধর্ম তাই প্রকাশ, যা প্রকাশ তাই আলোক, আর যা আলোক তাই সুখ। যা অসত্য তাই অধর্ম। যা অধর্ম তাই অপ্রকাশ, যা অপ্রকাশ তাই অন্ধকার , যা অন্ধকার তাই দুঃখ।

সত্যের মত পবিত্র আর কিছু নাই। সত্যই স্বর্গ গমনের একমাত্র পথ। সন্দেহ নাই।

যে ব্যক্তি সকলের সুহৃদ আর যিনি কায়মনোবাক্যে সকলের কল্যাণ কামনা করেন তিনিই যথার্থ ধর্মজ্ঞানী।

মানুষের এই দেহের মধ্যেই মৃত্যু আর অমৃত দুইই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মোহান্ধ হলেই মৃত্যু লাভ হবে, আর সত্যপথ অবলম্বন করলেই অমৃত লাভ হবে।

ধর্মের প্রভাবেই মুনি ঋষিগণ সংসার সাগর থেকে উত্তীর্ণ হন। সংযত চিত্তে সর্বদা ধর্মানুষ্ঠানে সচেষ্ট হবি।

প্রজ্ঞা (উৎকৃষ্ট বোধশক্তি বা গভীর জ্ঞান), দম ( ইন্দ্রিয় দমন), শাস্ত্রজ্ঞান,বীরত্ব, মিতভাসিতা

(সংযত হয়ে কথা বলা), দান, ও কৃতজ্ঞতা পুরুষ ও নারীকে প্রতিভা সম্পন্ন করে। এসব গুন মুক্তি লাভের উদাহরণসরূপ।

যদি তোরা বাক্যবাণ, বিত্ত বিচ্ছেদ বান , বন্ধু বিচ্ছেদ বান, জয় করতে পারিস তবে মৃত্যুকেও জয় করতে পারবি।

বাইরে ধর্ম ধর্ম করে নিজেকে ধার্মিক বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াবি না। শুনে রাখ ধর্ম কখন রেপে রাখা যায় না। প্রকৃত ধার্মিকের কাজ কর্মে কথায়, ও চিন্তায় আপনা থেকেই ধর্মভাব প্রকাশ হয়ে ওঠে।

যেখানে অন্যায়, অসততা, অপবিত্রতা, কণা মাত্র দেখবি, সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে গরজে উঠবি।প্রতিকার করতে না পারলেও প্রতিরোধ করবি। তবে হাঁ, তা করতে গিয়ে মনের মধ্যে ক্রোধের চিনহমাত্র রাখবিনা।

মনে রাখবি, মানব দেহ ই পরমাত্মার বাসস্থাণ। বার বার এইকথা স্মরণ করে তোর দেহ কে পবিত্র ও সূচি শুভ্র রাখবি।

কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ উৎকট পাপের ফল ইহকালেই মানুষ ভোগ করে। তাই কামে কি কুফল, ক্রোধে কি কুফল, লোভে কি কুফল, মোহ তে কি কুফল আলোচনা ও স্থির ভাবে চিন্তা করবি।

ক্রোধ মানুষের পরম শত্রু। ক্রোধ মনুষ্যত্ব নষ্টও করে। ক্রোধের অধীন হলে মানুষ যে কোন কাজ করতে পারে, গুরুকে হত্যা করতে পারে, এমন কি সে নিজেকেও মেরে ফেলতে পারে। ক্রোধান্ধ ব্যাক্তি না পারে এমন কোন কাজ নাই, না বলতে পারে এমন কোন কথা নাই। তাই ক্রোধকে দমন করবি।

মনে রাখিস লোভ ই পাপের কারণ।লোভ চরিতার্থ করতে কোন বিঘ্ন বা প্রতিবন্ধকতা উপস্থিত হলে ক্রোধের উৎপত্তি হয়। লোভ হলেই মনের যে টান হয় তা মানুষ কে মোহান্ধ করে। কি করে সেই আকাঙ্ক্ষিত বস্তু পাবে তা ভাবতে ভাবতে মানুষ সৎ অসৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, আর তখন ই মানুষের বিনাশের কারণ উপস্থিত হয়। লোভের এই পরিণাম চিন্তা করে লোভ কে দমন করবি।

কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, বিদিতসা, নির্দয়তা, ঈর্ষা, দ্বেষ, মান, শোক, স্পৃহা, জুগুতসা (নিন্দা করা) – এই দ্বাদশ দোষ স্বযত্নে পরিত্যাগ করবি। যেমন শিকারি পশুকে বোধ করার জন্য ফাঁক খুঁজে তেমনি, এই বার টি দোষ পর্যটক মানুষ কে আকর্ণ করার জন্য সর্বদা ফাঁক খুঁজে বেড়ায়।

গরজ করবি কিন্তু আহাম্মক (নির্বোধ) হবি না। ক্রোধ করবি কিন্তু ক্রোধান্ধ হবি না।

ঈর্ষা তীব্র বিষের মত। ঈর্ষান্বিত ব্যক্তির দেহের হাড়কেও জর্জরিত করে।ঈর্ষান্বিত ব্যাক্তির দিবানিশি প্রাণে অসুখ।তাঁর প্রাণে সদাই কষ্ট।

মনে রাখিস, ক্রোধ উপস্থিত হলে তপস্যা বিনষ্ট হয়।ঈর্ষার উদয় হলে ধর্ম লাভ হয়না, মান অপমানের ভয় থাকলে বিদ্যালাভ হয়না, আর প্রমত্ত (অতি আসক্ত)হলে আত্মজ্ঞান লাভ হয় না।

খলতা, হটকারিতা, অন্যের অনিষ্ট চিন্তা, অন্যের গুন সম্বন্ধে অসহিষনুতা (অসহনীয় ভাব), অন্যের গুনের মধ্যে দোষ অন্বেষণ করা, যা দান করা উচিত নয় তা দান করা, প্রদত্ত বস্তু অপহরণ করা, কঠোর ওঁ কটু কথা বলা, নিষ্ঠুর আচরণ করা থেকে সর্বদা ক্ষান্ত হবি।

হাজার বছরের তপস্যা সত্যের থেকে উৎকৃষ্ট নয়। মনে রাখিস, সত্যের বলেই সকল কাজের উন্নতি সাধন হয়।

অসৎ সংসর্গ সর্ব প্রকারে বর্জন করে চলবি। অসৎ সঙ্গ বলতে শুধু অসৎ চরিত্রের লোকদের সাথে মেলামেশাই বুঝবি না। অশ্লীল পুস্তক পড়া, অশ্লীল কথা শোনা, কু রুচি পূর্ণ সঙ্গীত শোনা, ইত্যাদি সব কিছুকেই অসৎ সঙ্গ বুঝবি। যা দেখালে, যা শুনলে, যা করলে, যা পড়লে, বা যা চিন্তা করলে মনে কাম-লালসার উদয় হয়, তা বর্জন করবি।

পাঁচটি প্রাণীঃ পতঙ্গ, মাতঙ্গ, ভৃঙ্গ, কুরঙ্গ, ও মীন, প্রত্যেকেই এক একটি ইন্দ্রিয় বিষয়ে (রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ)লুদ্ধ হয়ে পাঁচে পাঁচ মিশিয়ে দিয়ে পঞ্চত্ব (প্রাণ হারায়)প্রাপ্ত হয়।পতঙ্গ অগ্নির রূপে, মাতঙ্গ (হাতি) অন্য মাতঙ্গের স্পর্শ সুখে, ভৃঙ্গ (ভ্রমর)ফুলের গন্ধে, কুরঙ্গ ( হরিণ) বাঁশির শব্দে, আর মীন (মাছ) রসে, অর্থাৎ বড়শির খাদ্যে লুদ্ধ হয়ে মোহিত হয়ে প্রাণ হারায়। তাহলে তোরা যদি এক সাথে ঐ পাঁচটি ইন্দ্রিয় বিষয়ে আসক্ত হয়ে যাস- তোদের কি পরিণতি হবে ভাবতে পারিস ?

যে কথায় অন্যের মনকষ্ট হতে পারে তেমন কথা না বলাই উচিত। কু কথা বলা উচিত নয়।মুখ থেকে একবার কু কথা বেরিয়ে গেলে দিন রাত অনুতপ্ত হতে হয়।

ক্রোধান্বিত হয়ে যজ্ঞ বা যে কোন অনুষ্ঠান, দান, তপস্যা করলে স্বয়ং যম ঐ সকল কর্মের ফল হরণ করে নেয়। তাই ক্রোধান্বিত ব্যাক্তির সকল পরিশ্রম ই বৃথা যায়।

স্মরণ রাখবি, কাল ক্রমে সকল সঞ্চিত পদার্থের ক্ষয় হয়। সকল উন্নত বস্তুর ই পতন হয়।সংযোগ মাত্রের ই বিয়োগ হয় আর জীবিত ব্যাক্তি মাত্রেই মরণ হয়।

দেখা, অর্থ উপার্জন করা, তা ব্যয় করার সময় বিষম দুঃখ ভোগ করতে হয়।অর্থ সকল অবস্থাতেই মানুষ কে কষ্ট দেয়। তাই অর্থ ব্যয় হলে বা চুরি হলে তাঁর জন্য চিন্তা করে কোন লাভ হয় না।

মনে রাখিস, জ্বরা সৌন্দর্য নাশ করে, আশা ধৈর্য নাশ করে, ক্রোধ সম্পত্তি নাশ করে, ঈর্ষা- দ্বেষ ধর্মাচরণ নাশ করে, অসাদু ওঁ অশিষ্ট লোকের সেবা শীল (চরিত্র, কৌলীন্য ও মর্যাদা) নাশ করে, কাম লজ্জা লজ্জা করে, মৃত্যু প্রাণ নাশ করে আর অভিমান সব কিছুই নাশ করে।

যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ, ধার্মিক, সত্তচারি, উদারচিত্ত, ভক্তি পরায়ণ, জিতেন্দ্রিয়। মর্যাদা রক্ষা করতে জানে, আর কখনও আপন সন্তানকে পরিত্যাগ করে না, এমন ব্যক্তির সঙ্গেই বন্ধুত্ব করবি।

উদ্যোগী হবি। উদ্যোগ পরায়নতা সম্পত্তি লাভের মুল। উদ্যোগী ব্যক্তি সর্ব প্রধান হয়ে চির কাল সুখ লাভ করে।

তোদের মন যা চায় তাই করবি।তবে করবার আগে বিচার করে নিবি। তোদের ঐ বিচারবোধ ই যেকোনো কাজে প্রবৃত্তি জোগাবে, কিংবা এ কাজে নিবৃত্ত করবে।

লোকনিন্দার ভয়ে অনেকেই মনুষ্যত্ব বিহীন হয়ে পড়ে। লোকও নিন্দার ভয়ে অনেকেই অনেক সৎ কাজ থেকে বিরত থাকে—- এ ঠিক নয়। সাধুভাবে চলতে গেলে অনেক সময় নিন্দা ভাজন হতে হয়। লোকনিন্দা ভয়কে তুচ্ছ জ্ঞান করবি। যা সত্য যা ধর্ম তা পালনে সচেষ্ট হবি।

নিঃস্বার্থ, উদার ও সরল লোকেদের চরিত্র অনুশীলন করবি, তাতে তোদের মনের ঘের কেটে যাবে, স্বার্থপরতা কমে যাবে, কুটিলতা দুর হবে, প্রাণ মন সরল হবে, আর ধূর্ততার ইচ্ছা কমে যাবে।

এটা চাই, ওটা চাই, সেটা চাই—- এমন চাই চাই করবি না। অতি অল্পত্বেই সন্তুষ্ট হতে চেষ্টা করবি। তোদের কল্পিত অভাব, যেন তোদের সর্বনাশ ডেকে না আনে।

শোন, বিদার তুল্য চোখ, কর্মের ফল ত্যাগের তুল্য সুখ, আর বিষয় স্পৃহার তুল্য দুঃখ আর নাই।

শোন, যাতে তাপ তাগে তাই পাপ। যে কাজ করে তুই তাপগ্রস্থ হচ্ছিস বা তোর সমাজকে তাপ গ্রস্থ করছিস তাই পাপ।

মনে রাখিস, বিষয় ভোগ বাসনাই তাপের বা দুঃখের মুল কারণ। বাসনা নাই যার তাপ ও নাই তাঁর।

যখন তোদের মন বাসনা বিহীন ও অতো নিরত হবে তখন ই তোদের যথার্থ মঙ্গল হবে।

তোরা যদি বীতরাগ (আসক্তিহীন), ও জিতক্রোধ (ক্রোধকে বশীভূত করা)হতে পারিস তবে বিষয়ের মধ্যে থাকলেওতোদের পাপে লিপ্ত হতে হবে না।

তোদের যে পরিমাণ কামনা পরিত্যাগ করতে পারবি, তোদের সি পরিমাণ সুখ লাভ হবে।কামনাধীন হলেই তোদের প্রতিনিয়ত দুঃখ ভোগ করতে হবে।

জগতের সকল লোকই আপন আপন কর্মে ব্যাপৃত রয়েছে। তাই কর্মানুষ্ঠান করা সকলের কর্তব্য। কর্মহীন ব্যক্তি কখনও সিদ্ধি লাভ করতে পারে না।

তোরা ইহলোকে জন্ম গ্রহণ করে পূর্ব জন্মের অর্জিত কর্মের ই ফল ভোগ করছিস। ইহলোকে কেউই তোরা কর্ম ছাড়া অণু মাত্র প্রিয় বা অপ্রিয় বস্তুও লাভ করতে পারবি না।

শোন, কর্ম দ্বারাই সুখ লাভ হয়ে থাকে, তাই কর্মই তোদের কর্তব্য।

তোরা যদি, শত্রুতা আচরণে বিমুখ, শঠতা বিহীন, সচ্চরিত্র , বিশুদ্ধ চিত্ত, ধৈর্যশালী ও জিতেন্দ্রিয় হতে পারিস, তাহলে তোরা ইহকালে সম্মান লাভ ও পরকালে স্বর্গ ভোগ করতে পারবি।

প্রত্যক্ষ ভাবেই হোক আর পরোক্ষ ভাবেই হোক, বাক্য-মন-ইঙ্গিত দ্বারা কারো নিন্দা করা উচিত নয়।

কখনও সন্তাপ করবি না। সন্তাপ থেকে রূপ নষ্টও হয়, সন্তাপ থেকে শক্তি নষ্ট হয়, সন্তাপ থেকে জ্ঞান নষ্টও হয়, আর সন্তাপ থেকে ব্যাধি উৎপন্ন হয়।

তুই কাউকে হিংসা করলে হিংসিত হবি, আর কাউকে প্রতিপালন করলে প্রতিপালিত হবি। তাই হিংসা না করে সকলের প্রতিপালন করাই তোর কর্তব্য।

সর্ব ভুতে অহিংসাই পরম ধর্ম ও প্রধান কাজ। এই অহিংসা ধর্ম্যা উদ্বেগের লেশ মাত্র নাই। যে হিংসা ধর্ম্যা লিপ্ত হয়না সে অনায়াসে মৃত্যু ভয় অতিক্রম করে, অনন্তকাল অবস্থান করতে পারে।

যার শত্রু না তাঁর ভয়ের লেশ মাত্র থাকে না। যার কাছ থেকে কোন প্রাণী ভীত হয় না কননপ্রানি থেকেই তাঁর কিছু মাত্র ভয় থাকে না।

তপস্যা, যজ্ঞ, দান ও জ্ঞান উপদেশ দ্বারা যে ফল লাভ হয় একমাত্র অভয়দান দ্বারা সেই ফল লাভ হয়।

দেখ, যেখানে ত্যাগ নাই, আছে মোহ, আসক্তি, সেখানেই যত দুঃখ, দৈন, ও অশান্তি।

যে ব্যক্তি অহংকার ও মমতা পরিহার করে সেই যথার্থ ত্যাগ শীল। শুধু গৃহ ত্যাগ করলেই ত্যাগশীল হওয়া যায় না।

অতিমান, অতিবাদ, অতি অপরাধ, ক্রোধ, আত্মরম্ভরিতা (দাম্ভিকতা, স্বার্থপরতা) আর মিত্রদ্রোহ (বন্ধুর ক্ষতিসাধন)—এই ছয়টি দোষ তীক্ষ্ণ বানস্বরুপ হয়ে মানুষের আয়ু কর্তন করে ও প্রাণ হরণ করে।

মনে রাখিস যতক্ষণ তোর অহংবোধ থাকবে, ততক্ষণ তুই মূর্খ ও বদ্ধ জীব। গুরু কৃপায় যখন তোর ঐ অহংভাব ক্ষয় হইবে তখন তোর চিত্ত শুদ্ধি ঘটবে।চিত্ত শুদ্ধি ঘটলেই তোর আত্ম তত্ত্ব বোধ হবে , আর তখনি তুই হবি জ্ঞানী ও মুক্ত।

শোন, যিনি বাক্য, মন, ক্রোধ, প্রতিচিকীর্ষা (প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা), উদর, (ভজনে লোভ), ও উপস্থের (জননেন্দ্রিয়ের) বেগ সহ্য করতে পারেন, আমি তাঁকেই যথার্থ ব্রাহ্মণ ও সাধু মনে করি।

বাঁচালের মত অকারণ কথা বলার চেয়ে মৌনী হওয়া, মৌনী হওয়ার থেকে শুধু সত্য কথা বলা, সুধু সত্য কথা বলার চেয়ে, ধর্ম বিষয়ে সত্য কথা বলা শ্রেয়। আবার ঐ ধর্ম বিষয়ে যদি সত্য বাক্য লোকের প্রিয় হয়, তবে তাঁর চেয়ে শ্রেয়স্কর আর কিছু নাই।

অশ্রদ্ধার চেয়ে গুরুতর পাপ আর শ্রদ্ধার চেয়ে পাপ নাশের প্রধা উপায় আর নাই।শ্রদ্ধাবান হতে চেষ্টা করবি তাহলেই ধর্ম লাভ হবে।

মনে রাখবি, দানের চেয়ে উৎকর্ষ কর্ম, গর্ভধারিণীকে প্রতিপালন করার চেয়ে সৎকাজ, আর সন্ন্যাসের চেয়ে উৎকর্ষ কর্ম আর কিছু নাই।

মনে রাখবি, চিন্তা পরিত্যাগ ই দুঃখ পরিত্যাগের মহা ঔষধ। দুঃখ চিন্তা করলে কখনও দুঃখ দুর হয় না, তা ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলে। শাস্ত্রজ্ঞান দ্বারা মানসিক দুঃখ আর ওষুধের দ্বারা শারীরিক দুঃখ দুর করতে হয়।

পিতা মাতা যতই বৃদ্ধ হন না কেন, তারা পিতামাতাই। তাদের সন্তুষ্টির জন্য কোন রকম বিরক্তি প্রকাশ না করে, বার বার তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া, আর কোন কারণ জিজ্ঞেস না করে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া উপযুক্ত সন্তানের কর্তব্য।

কখনও কু তর্ক করবি না। কু তোরকে হৃদয় শুষ্ক হয়ে যায় আর বুদ্ধি বিচলিত হয়। তর্ক করে কখনও ব্রহ্মকে বা ঈশ্বরকে উপলদ্ধি করা যায় না। ব্রহ্ম/ঈশ্বর মানুষের বুদ্ধির অতীত।

উপাসন হল ভক্তি মার্গের সাধনা, স্রবণ মননাদি হল জ্ঞান মার্গের সাধনা, প্রাণায়ামাদি হল যোগমার্গের সাধনা, কিন্তু ত্যাগ হল সকল মার্গের সাধনা। ত্যাগ ছাড়া জ্ঞান- ভক্তি, যোগ, কর্ম, কোন মার্গেই সিদ্ধি লাভ হয় না। কেননা, ত্যাগ ই হল সকল সাধনার মুল।

নিন্দিত কর্মের দ্বারা অর্থের উপার্জন করা উচিত নয়।অধর্মের পথে উপার্জিত অর্থে ধিক। ইহলোকে ধর্ম ই নিত্য পদার্থ। অর্থ লাভের জন্য সেই ধর্মকে পরিত্যাগ করা উচিত নয়।

প্রতিদিন রাতে সবার আগে, তোর সারা দিনের কাজের হিসেব নিকেশ করবি। অর্থাৎ ভাল কাজ কি কি করেছিস, আর মন্দ কাজ কি কি করেছিস? যে সব কাজ মন্দ বলে মনে হয় সেসব কাজ যাতে আর করতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবি। সূর্য উথলে যেমন আধার পালিয়ে যায়, ঘুম ভেঙ্গে গেলে যেমন চোর পালিয়ে যায়, তেমনি, বার বার বিচার করলে মন্দ কাজ করার প্রবৃত্তি পালিয়ে যাবেই।

 

Download EBOOK অনুপ্রেরণামূলক উক্তিঃ লোকনাথ ব্রহ্মচারী Compressed PDF