মাতৃ গর্ভেই থাকতেই যখন জেনেছ আগত শিশু পুরুষ নয় নারী, তখনই বিষবাষ্প গ্রাস করেছে মনে। নারীকে আমরা নারী হতে দেয়নি। তবে আমরা ঠিক ই পুরুষ হয়ে দিব্যি আছি। নারীকে বলেছি মহিলা যেহেতু সে মহলে মহলে থাকে তাই। নারীকে বলেছি গৃহিণী যেহেতু সে গৃহে থাকে তাই। নারীকে বলেছি রমণী যেহেতু সে রমন যোগ্য। নারীকে বলেছি অর্ধাঙ্গিনী যেহেতু আমার অর্ধেক। নারীকে আমরা ভোগ্য মনে করে খুশি হই। বিক্রি করে দেই পণ্য হিসাবে। অথবা কিনি। আমরা নারীকে নারী হতে দিলাম না। এ লজ্জা আমাদের।
অতীতে বহু মনীষী চেষ্টা করেছেন নারীকে তার মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে। স্বাবলম্বী নারী হতে। রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া। কিন্তু কত টুকু স্বাবলম্বী হয়েছে নারীরা!
মিনা কার্টুন এ দেখি রাজুকে একটা আস্ত ডিম আর মিনা কে ডিমের অর্ধেক দেয়া হলো। হয়তো মিনা কার্টুন সবার ই জানা আছে। এই কার্টুন সিরিজ টা মেয়েদের মেয়ে থেকে নারী হতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেয়ে শিশুর জন্য অর্ধেক ভাগ সব কিছুতেই। যেমন মহিলা কর্মীর মূল্য অর্ধেক।
একটা সন্তান যখন ভূমিষ্ট হয় সে মেয়ে অথবা ছেলে হোক । উভয়েরই রয়েছে সমান প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ থেকে বেড়ে ওঠা। ভ্রূণের একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আমরা জানতে পারি মেয়ে অথবা ছেলে সন্তান। ভূমিষ্ট হবার পরে উভয়েরই রয়েছে সমান ইচ্ছা, ভালোলাগা, পছন্দ, স্বপ, সুখ, ও দুঃখের অনুভূতি। পার্থক্য শুধু শারীরিক অবয়বে। আমরা বিভাজন করে দেই যে তুমি রমণী, মহিলা, বা গৃহিণী, সম্পূর্ন আমাদের জন্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বড়ই স্বার্থপর।
সন্তানকে সমান দৃষ্টিতে দেখলে সমাজ পাল্টে যাবে।
কারো মনের বিরুদ্ধে কাজ করা অপরাধ। মানুষের মন এক অপার শক্তির উৎস, সৃষ্টিশীল। তাকে কোনমতে থামাতে নেই। প্রতিটি পিতা মাতার অবশ্য কর্তব্য শিশু মনের ইচ্ছা, ভালো লাগা, সহজাত আগ্রহ টাকে খুঁজে বের করা। সুপ্ত প্রতিভা। এটাই হলো শিশু মনের সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য একবার যে পিতা মাতা খুঁজে পেয়েছে আর তার লালন করেছে সেই শিশু হবে দিগ্বিজয়ী হোক সে নারী হোক সে পুরুষ।
মানুষের মন বড় চঞ্চল। সে চলে খৃপ্ত গতিতে। তাকে বসে আনা খুব কঠিন। তাই তার প্রকৃত সহজাত আগ্রহ বা পছন্দ টা বের করাও বেশ কঠিন। এমন এমন পিতা মাতা কে দেখতে পাওয়া যায় যারা সন্তানের পছন্দের কর্ম কে নিজেদের অপূর্ণ ভালো লাগা দিয়ে পূর্ণ করতে চান। এবং বহু কাল পরে ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করে বিলাপ করেন।
সন্তানের ভবিষ্যৎ রয়েছে তার চারিত্রিক আদর্শে। নৈতিক অধঃপতন যে সন্তানের হয়েছে তার ভবিষ্যতে ভালো কর্ম সন্দিহান ও অসম্ভব। সন্তানের প্রতি ১-৫ বছর পর্যন্ত অধিক স্নেহ করতে হয় । কোনো তিরষ্কার করা উচিত নয়। ৫-১৫ অবধি শাসন। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বন্ধুর মত আচরণ করা উচিত। সন্তানের আদর্শ গড়ে ওঠে ওই ৫-১৫ বছরের মধ্যে সময়ে। জেনে রাখা উচিত তখনই পিতা মাতার উচিত সন্তানের সুপ্ত প্রতিভা পুনরুদ্ধার করা। কোন কাজে সন্তানের বেশি ভালো লাগা কাজ করে, কিসে সে নিজের আগ্রহে কাজ করে। সেটা খোঁজা গুপ্তধন পাবার মত। এর পর শুধু লালন করা। সন্তানের পিছনে ছুটে বেড়ানো লাগে না।
পৃথিবীটা খুব বৈচিত্র্য ময়। স্রষ্টাও সে ভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তাই সবাইকে কে এক দিকে যে তে হবে এর কোনো যুক্তি নেই। তবেই পৃথিবী হবে আরও সৌন্দর্য ময়।

More Stories
Research Fund Deadline 30 June 2022 Ministry of Science and Technology of Bangladesh Govt.
Drawing of Padma Bridge and Celebration of Opening Ceremony 25 June 2022 II Riyana
Rare Photo of Padma Bridge