Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

সর্প বৃত্তান্ত সব সর্পই বিষাক্ত নয় ও আদি সর্প

Spread the love

সর্প বৃত্তান্ত সব সর্পই বিষাক্ত নয় ও আদি সর্প

সাপ বা সর্প হলো ৩৪০০ সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যে একটি যা কিনা হাত পা বিহীন একটি লম্বা লেজ বিশিষ্ট সরীসৃপ। সর্পকে লিজার্ড প্রজাতির মধ্যে শ্রেণী বিন্যাস করলে এটা এমন একটি লিজার্ড যা কিনা সময়ের ব্যবধানে বিবর্তনের ধারাতে বিশেষ শারীরিক গঠন হ্রাস প্রক্রিয়ায় সরল একটি দৈহিক লম্বা লেজ বিশিষ্ট প্রাণী কে সর্প বলে। সমস্ত সর্প বা সাপের বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নাই তবে পা বিহীন সমস্ত প্রাণী ই সর্প নয়। 

কিছু কিছু উভচর প্রাণী যারা গড়তে বসবাস করে তাদের শুধুমাত্র সামনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে আবার কখনো দেখা যায় সম্পূর্ণরূপে পা বিহীন উভচর প্রাণী।

উভচর প্রাণী ব্যতীত, সাপ গুলোর নড়াচড়া-সক্ষম চোখের পাতা নেই যার ফলে তারা সার্বক্ষণিক এবং স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারেন। সর্পের বহিঃস্থ অঙ্গ গুলো থাকে না।

আভ্যন্তরীণ ভাবে সর্পের মূত্রথলি নেই। তাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলো দীর্ঘায়িত এবং ডানপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো থেকে বাম পাশের গুলো বড় বামপাশের ফুসফুস আকার ছোট কখনো সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত। সাপে দের তুলনামূলক অধিকসংখ্যক মেরুদন্ডের হাড় রয়েছে।

সর্প বৃত্তান্ত

ধারণা করা হয় স্থলভাগের লিজার্ড অথবা উভচর প্রাণী থেকে জুরাসিক সময়ের মাঝামাঝি সময়ে সবগুলো বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে আনুমানিক 174 মিলিয়ন থেকে 163 মিলিয়ন বছর পূর্বে সময়। সবথেকে পুরনো সর্প যা একটি ছোট সাপ যারা দক্ষিণ ইংল্যান্ডের 167 মিলিয়ন বছর পূর্বে বসবাস করত।

সর্প বৃত্তান্ত ভুল ভাবে ব্যাখ্যা 

সাপ সম্পর্কে বর্তমান পৃথিবীতে অজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তাদের প্রকৃত প্রকৃতি এবং অবস্থান সম্বন্ধে। সমস্ত সাপ গুলোই একে অপরের পূর্বসূরী কিন্তু যাদের বিষাক্ত বিষ রয়েছে তাদেরকে বেঠিক ভাবে বিখ্যাত করা হয়েছে তাদের সমস্ত গ্রুপের মধ্যে যেহেতু মানুষ বিষাক্ত বিষহীন সাপকে বিপজ্জনক মনে করে না। মাত্র কিছুসংখ্যক (300 প্রজাতি সম্ভবত) বিষাক্ত সাপ এবং তাদের অর্ধেকই সম্পূর্ণভাবে কামড় দিতে সক্ষম।

সমস্ত বিশ্বব্যাপী সাপের কামড়ের মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ১৪০ হাজার মানুষ প্রতি বছর এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় হয়ে থাকে এর প্রধান কারণ চিকিৎসার অভাব, ভিকটিমের অপুষ্টি এবং অধিক সংখ্যক বিষাক্ত সাপের বিচরণ। যদিও ৮ হাজার সর্পদংশন হয়ে থাকে আমেরিকাতে প্রতিবছর কিন্তু বাৎসরিক মৃত্যুর হার 10 থেকেও কম প্রতিবছর যা কিনা বজ্রপাত অথবা মৌমাছির কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা থেকেও অনেক কম। মেক্সিকোতে দশগুণ বেশি মানুষ মারা যায় প্রতিবছর সর্প দংশনে থেকে মৌমাছির কামড়ে।

সর্পের একটি বিপুল ক্ষমতা রয়েছে তাদের বিষ নির্গতের হার বৃদ্ধি এবং কম হওয়ার ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে খাবার এবং আক্রমনাত্মক ভূমিকার জন্য তারা এটা ব্যবহার করে থাকে । সাপের সাধারণত খুব কম পরিমাণ বিষ মজুদ থাকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এবং তারা এটাকে শিকারি শরীরের প্রয়োগ করতে চায়না। মানুষের ক্ষেত্রে মাত্র ৪০ শতাংশ সর্পদংশন হয়ে থাকে আক্রমণাত্মক প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থায়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় সর্পদংশন এর একটা বড় অংশই থাকে সাপ ধরা এবং সাপের নিয়ে খেলা করা অথবা অন্য কোন সম্পর্কে মারতে উদ্যত হওয়ার সময়। সেজন্য বলা হয়ে থাকে সাপ (Snake) শুধুমাত্র প্রতিরোধ করার জন্যই তাদের বিষ এর মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে।

রেটেল স্নেক Rattlesnake এটা খুবই বিষাক্ত এদের একটা বড় অংশ খুবই বিপদজনক এর কারণ তারা বিষ পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত করতে সক্ষম যদিও এরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাজুক এবং কাউকে আক্রমণ করে না।

সর্পদংশন পরিলক্ষিত হয় সাধারণত সর্পের বসবাস কৃত অঞ্চলের মানুষের পদচারণা বা কর্মের কান্ডের ভিত্তিতে তারা যখন নিজেদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে অথবা যখন তাদের ডিম পাড়ার সময় তখন নিজেদেরকে খুব অনিরাপদ মনে করে।

এতগুলোর মধ্যেই দুইটা সাপ প্রজাতি তাদের বিপদজনক আক্রমণাত্মক ভূমিকার জন্য বিখ্যাত কালো মাম্বা আফ্রিকাতে এদের বসবাস এবং কিং কোবরা ইন্ডিয়া বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে দের বসবাস। তথাপিও সাপ Snake সাধারণত আক্রমনাত্মক হয় না বেশিরভাগ পরিস্থিতিতেই মানুষ এ বিষয়ে খুব কম জানে সাধারণত তারা তাদের আবেগ-অনুভূতি কে ব্যবহার করে এমনকি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে তাদেরকে একটা অপরিণামদর্শী ভয়ঙ্কর প্রাণী বলে সম্মোধন করে এটা একটা আশ্চর্যের বিষয় যে বেশিরভাগ মানুষই সাপকে ভয় করে

এবং দেখা যায় চিড়িয়াখানা তে সাপের জায়গাগুলোতে মানুষ বেশি প্রদর্শনের জন্য যায় এ থেকে প্রমাণিত হয় সব একটি রহস্যজনক প্রাণী। তবে সাপের রঙের বৈচিত্র্য শারীরিক নড়াচড়ার ধরন সাঁতার কাটার স্টাইল গাছে উঠার সৌন্দর্য সবকিছু মিলিয়ে একটি সুন্দর প্রাণী বলা যায়।

সাধারণভাবে বিষাক্ত সাপ কে ইংরেজিতে বলা হয় পয়েজন স্নেক। এটা টেকনিক্যালি সঠিক নয় কারণ বিষাক্ত শব্দটা ব্যবহার করা হয় সেই সব প্রাণীদের ক্ষেত্রে যারা তাদের বিষ কোন প্রাণীর শরীরে গ্রহণ করে কিন্তু খুব কমসংখ্যক Snake প্রকৃতপক্ষেই বিষাক্ত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ক্ষতি করে না দক্ষিণ আমেরিকার বিষাক্ত সাপ গুলো মধ্যে গার্ডার স্নেক এবং বিষ শোষণ করতে পারে এবং জমা রাখতে পারে নিউজ সালামান্ডার্স এবং অন্য বিষাক্ত সাপ।

প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই সাপ Snake গুলোকে পূজা করা হয় বিশেষ করে বিষধর সাপকে এবং এই সর্প পূজা শুরু হয়েছে আজ থেকে দশ হাজার খ্রিস্টপূর্ব থেকে।