বন্যা কি ? কেন হয় ? বন্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়?
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত সচারচর আমাদের নজরে পরে।গ্রীষ্মের প্রখরতা,শীতের কাপুনি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার মতো।তদানুরূপ বর্ষায় বন্যার বৈরি প্রকৃতিও আমাদের মাথা নত করে মেনে নিতে হয়।বর্ষা মৌসুমে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বরে প্রতিবছরেই বাংলাদেশে কোন না কোন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়।
তন্মধ্যে ১৯৬৬, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৭, ২০২২ সালের বন্যা স্মরণ কালের শ্রেষ্ঠ বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে। বর্তমান সময়ে সিলেটের বন্যার পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে,ধারণা করা হচ্ছে জেলার মানুষ ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে পারে এবং পরিস্থিতি সেটাই ইঙ্গিত করছে। বন্যার ভয়াবহতা এবং বন্যায় এতো এতো জনজীবনের দূর্ভোগ আমাদের একটি জিনিশ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়,বন্যা সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্বল্প, বন্যা প্রতিকারে আমরা নাস্তানাবুদ এবং বন্যা প্রতিরোধে নুন্যতম সচেতনতা ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা আমাদের নেই।
বন্যা:
সাধারণত বন্যা বলতে আমরা বুঝি, কোন অঞ্চল বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হওয়াকে।শুধুমাত্র বৃষ্টির পানি যে বন্যার সৃষ্টি করে সেটা তা কিন্তু নয়। প্রযুক্তির অবদানে আমরা এখন অনেক এ্যাডভান্স এক জাতি।
স্বচোখে আমরা বন্যা হওয়ার অনেক কারণ দেখতে পারি এছাড়াও প্রাকৃতিক কিছু কারণ বন্যা পরিস্থিতি তৈরিতে সহযোগিতা করে থাকে। পরবর্তীতে যা প্রাণঘাতী দূর্যোগ এবং দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।বিশেষজ্ঞগণ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে বেশ কিছু কারণ দাড় করেছেন, ১.অপরিকল্পিত নগারায়ন। ২. অপরিকল্পিতভাবে কল কারখানা গড়ে তোলা। ৩. পুকুর ভড়াট করা। ৪. নদীর পাড়ে বাঁধ। ৫. বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যাবস্থাপনা ৬। নদীর তলদেশে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া
1. অপরিকল্পিত নগরায়ন:
বিপুল জনসংখ্যার ফলে অন্তত দ্রুত গতিতে নগরায়ন হয়ে চলেছে আমাদের চোখের পলকে।আজ থেকে ১০ বছর আগে যে অঞ্চলে দু একটা কুড়ে ঘড় দেখা যেত বর্তমানে সেইহানে উঁচু উঁচু দালান কোঠা,হাট-বাজার,শপিং মল। সময়ের স্বল্প ব্যবধানে গড়ে উঠা এসব দালান কোঠার অধিকাংশই অপরিকল্পিত।
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা এসব নগরায়নের ফলে নগরে বন্যার পানি নিষ্কাশনের পথই খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা কলকারখানা : নদীর তীরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা কলকারখানার বর্জ্য নদীর তল নিয়মিত ভরাট করে চলেছে। ফলাফল নদ-নদীর আকার ক্রমশ ছোট হয়ে আসা,নদীর প্রবাহ কমে আসা,অতিরিক্ত পানি ধারণ ক্ষমতা হারানো,নদীর পানি দূষণ ন্যায় নানাবিধ সমস্যা।ইহা বন্যা সৃষ্টির পথকে সুগম করে।
2. পুকুর ভড়াট :
পুকুর ভড়াটের ফলে নগরের অতিরিক্ত পানি অপসারনের আরেকটি পথ বন্ধ হয়ে যায়।নিচু অঞ্চলের ঘড় বাড়ি প্লাবিত হয় অল্পতেই।
3. নদীর পাড়ে বাঁধ:
বর্ষা মৌসুমে প্রায় সব নদীই প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষার পানিতে নদীগুলো ফুলে ফেপে উঠে।নদীর পাড়েও বাঁধ ঠিক মতো দেওয়া না থাকলে সেই প্রবাহিত পানি নগর অঞ্চলে ঢুকে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ সৃষ্টি করে।
5. বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যাবস্থাপনা:
এছাড়াও বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টিতে মুখ্য আরেকটি ভূমিকা পালন করে।সঠিক ড্রেনেজ ব্যাবস্থাপনা থাকলে পানি বের হয়ে যাওয়ার পথ থাকে কিন্তু সেটা যদি না থাকে বন্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া দুসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠে।
6. নদীর তলদেশে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়াঃ উজান থেকে প্রচুর পলি মাটি সমৃদ্ধ পানি বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় বাংলাদেশের নদী গুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যায়। নদীর গভীরতা কমে যায় যার কারণে অতি বন্যা হলে নিদই গুলো বেশি পানি ধরে রাখতে পারে না। তাই ভারত থেকে যে সব পানি আসে বাংলাদেশের বেশিরভাগ সময় বন্যা স্মৃতি হয়।
বন্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধে করণীয়:
বন্যা প্রতিরোধের তুলনায় প্রতিকার করা কঠিন।বন্যা প্রতিরোধে আমাদের একটু সচেতনতা এবং পদক্ষেক নিলেই অনেকাংশে বন্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।কিন্তু বন্যায় দূর্ভোগ পোহানো মানুষদের এ থেকে প্রতিকার পেতে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
বন্যা প্রতিরোধ:
বন্যা প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা পারে অনেকাংশে আমাদের দূর্ভোগ কম করতে।অপরিকল্পিত নগরায়ন, কলকারখানা তৈরি বন্ধ করতে হবে আমাদের।নদী আমাদের সম্পদ,বন্যার দূর্ভোগ কমাতে প্রয়োজন নদীকে কম দূষণ করা।আমাদের উচিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবেশের সুরক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।পুকুর খেলার মাঠ ভড়াট না করে ভূমির সঠিক ব্যবহার করা আমাদের উচিৎ। পরিকল্পিত ভাবে নগরায়ন করা বাঞ্চনিয়।অন্যথায় বন্যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব।
বন্যা প্রতিকার:
বন্যা প্রতিকার করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়।বন্যায় দূ্র্ভগ পোহানো মানুষেরাই জানে কতটা নিদারুণভাবে তারা রাত কাটায়।রান্না-বান্না,চলা-ফেরা,পায়খানা-প্রসাব সবটাই কষ্ট সাধ্য।অনেক পরিবার না খেয়ে না দেয়ে দিন পার করে বন্যার পানিতে আটকে থাকে।
গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে হাহাকারের শেষ যেন নেই।ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে কৃষকের সারাবছরের পরিশ্রম নিমজ্জিত হয়ে যায় বন্যার পানিতে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ অত্যন্ত কঠিন।বন্যা চলাকালিন ঘড়েই অবস্থান করা উচিৎ।সরকার এবং অন্যান্যদের উচিৎ সর্বাপেক্ষা যারা দরিদ্র তাদের পাশে দাঁড়ানো।
শুকনা খাবার,কাপড়, প্রয়জনীয় সামগ্রী দিয়ে বন্যার্তদের যথাসাধ্য সাহায্যে সকলকেই এগিয়ে আশা উচিৎ যতদিন না বন্যা পরিস্থিতি শিথিল হয়। এরপর আশে বন্যার পানি নেমে গেলে আরও এক পরিচিত সমস্যা।সাধারণত বন্যা শেষে পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যার সময় করণীয় বিষয়গুলো অবশ্যই জেনে রাখুন
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস বন্যা কালবৈশাখী ঝড় বজ্রপাত ভূমিধস খরা শৈত্যপ্রবাহ তাদের দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্যোগের মাত্রা প্রতিবছর আরো তীব্রতর হচ্ছে পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডসহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে।
এসব দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য একটি দুর্যোগ সহনীয় জাতি গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এর মাধ্যমেবন্যার সময় করণীয় বিষয়গুলো অবশ্যই জেনে রাখুনকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছে। প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন । বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো মেনে চলা উচিত । বাংলাদেশে বন্যা অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় সেই ক্ষয়ক্ষতির জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যায় প্রতিবছর মিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই বন্যা বাংলাদেশের সাথে একটি অতি পরিচিত দুর্যোগ।
বাঙালি যেন এই বন্যার সাথে বন্ধুত্ব করে বেঁচে থাকে। কিন্তু বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি কখনই কম নয় বিশেষত প্রান্তিক ভূমিহীন মানুষ অথবা নদী তীরবর্তী বসবাসকারী নাগরিকরাই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বেশি অনুভব করে
প্রতিবছর বন্যা আসে এবং বাংলাদেশের মানুষ মোকাবেলা করে বন্যার সময় কিছু করণীয় থাকে যেগুলো অনুসরণ করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যায় । বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে বন্যার সময় করণীয় বিষয়গুলো অবশ্যই জেনে রাখুন।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে বন্যার সময় করণীয় বিষয়গুলো
যথাসম্ভব উঁচু জায়গায় বাড়ি তৈরি করুন
বাড়ি নিচু থাকলে মাটি কেটে ভিটা উঁচু করুন ( বন্যার উচ্চতা এবং আগাম বন্যার সম্ভাব্য উচ্চতা মাথায় রেখে)
বাড়ির চারপাশে গাছ লাগান।
বাড়ির চারপাশে ঢেউ প্রতিরোধ করার জন্য ধল কমলি, কাশিয়া, দূর্বাঘাস অন্যান্য ভাঙ্গন প্রতিরোধ লাগান
বন্যার আগে ঘরের বেড়া ও শক্ত মজবুত করুন
বন্যার জন্য ঘরে অবশ্যই অন্যান্য খাদ্য শস্যের পাশাপাশি কিছু শুকনো খাবার রাখুন যেমন চাল ডাল শিশুদের জন্য বিস্কুট গুঁড়া দুধ ইত্যাদি
বন্যার সময় তিন বেলা রান্না করা অসম্ভব’ যেকোনো কারণে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দিনে একবার রান্না করে সারাদিন খাওয়া প্রয়োজনে কম পরিমাণে (শুধুমাত্র বড়দের জন্য প্রযোজ্য)
বস্তা মাটির পাতিল কলসি ইত্যাদিতে জরুরী খাদ্য সংরক্ষণ করা যায় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বন্যার পানি উঠে খাদ্যগুলো নষ্ট না করে।
পরিশেষে বলা যায় বন্যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে একটু সচেতন হতে হবে যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায় । যেহেতু ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখান থেকে সাধারণ দুর্যোগ বন্যা জলোচ্ছ্বাস ভূমিকম্প দূর করা বা নির্মূল করা কখনোই সম্ভব নয় তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আমাদের নাগরিক সমাজকে আরো বেশি দুর্যোগ সহনীয় করে তোলা তাই অধিক বেশি গুরুত্ব
- What Is a Mine Shaft
- ভালবাসা নিয়ে কিছু কথাঃ উপলদ্ধি
- Student Protest in Bangladesh: Why?
- List of Earthquake in 2024
- Skills for data entry jobs 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- February 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- December 2021
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- September 2020
- August 2020
- July 2020
- June 2020
- May 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- Artwork
- Assignment
- Biomarkers
- Blog
- Career
- Climate Change
- Cyclone
- Dinosaur
- Disaster
- DRE
- Earthquake
- eBook
- Extinction
- Flood
- Freelancing
- Gallery
- GCMS
- Gemstone
- Geology
- Groundwater
- History
- Internship
- Job
- Lecture
- Map
- Mining disasters
- Natural Resource
- Notice
- Research
- Scholarships
- SEO
- Sports
- Technology
- Tips
- Water
- অপ্সরা
- আবৃত
- ইতিহাস
- ইসলাম
- উপার্জন
- এলোমেলো
- ওষ্ঠাগত
- কঙ্কনা
- কবিতা
- ক্যাম্পাস
- গল্প
- গান/লিরিক্স
- গেম
- জীবনী
- ডাইনোসর
- তৃষ্ণা
- দুর্যোগ
- দৃষ্টি
- ধরিত্রী
- নিউজ
- নীতিবাক্য
- পরিবেশ
- প্রবন্ধ
- প্রযুক্তি
- প্রাগৈতিহাসিক
- প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
- বাংলা
- বারিধি
- বিকাশ
- বিজ্ঞান
- বিনোদন
- বিষ্ময়কর
- বীমা
- ভাবসম্প্রসারন
- ভুবনমোহিনী
- ভ্রমণ কাহিনী
- মনের কথা
- মহাবিশ্ব
- মুক্তিযুদ্ধ
- মৃন্ময়ী
- ম্যাগাজিন
- যশস্বী
- শতরূপা
- শিক্ষা
- শিল্প
- সংস্কৃতি ও কালচার
- স্বাস্থ্য
বাংলাদেশের বন্যা আদ্যোপান্ত
গত কয়েক বছরের জলবায়ু ও আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্বল্পোন্নত দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমান তুলনামূলক হারে বাড়ছে। বিশ্বের উন্নত ও ধনী দেশ গুলোতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন হচ্ছে।
এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের মানষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
দুর্যোগ ও বিপর্যয়ঃ দুর্যোগের কথা বললেই বিপর্যয় শব্দটি এসে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে দুর্যোগ ও বিপর্যয় সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়।
বিপর্যয়ঃ প্রথমেই আসি বিপর্যয় মানে কী? আজকে রাতে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। আজকে বৈশাখী ঝড় হতে পারে। এ ধরণের ঘটনা দ্বারা যদি আমাদের স্বাভাবিক জীবনে কোনো বিপদ বা আপদ হবার সম্ভাবনা থাকলে তাকে বিপর্যয় বলে। এই ধরণের বিপর্যয়ের ফলে কোন কোন এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্যোগঃ দুর্যোগ হলো এমন সব ঘটনা যেসব ঘটনার ফলে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা মোকাবিলা বা প্রতিরোধ করা সাধারণ মানুষের আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যায়। দুর্যোগ এমন এক ধরণের প্রাকৃতিক বা মানুষের সৃষ্ট ঘটনা যা কোনো কোনো এলাকাকে সম্পূর্ণ ধ্বংশ করে দেয়।
আমরা পৃথিবীর যে দেশেই যাই না কেন দেখতে পাবো সকল দেশেই দুই ধরণের দুর্যোগ ঘটে থাকে। ১) প্রাকৃতিক দুযোগ ২) মানুষ-সৃষ্ট দুর্যোগ
প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ যে দুর্যোগের ফলে কোনো নির্দিষ্ট লোকালয়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি ও বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যে দুর্যোগে ঘটার সাথে মানুষের কোনো হাত থাকে না, তাকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। যেমনঃ বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়,টর্নেডো ইত্যাদি।
মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও এমন কিছু দুর্যোগ আছে, যেগুলো ঘটার পিছনে কোনো বা কোনো ভাবে মানুষ জড়িত থাকে। সেসব দুর্যোগই হলো মানুষসৃষ্ট দুর্যোগ। পূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো কিন্তু বর্তমানে মানুষসৃষ্ট দুর্যোগের প্রভাবে মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ই ক্ষতির সম্মুক্ষিন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির পরিমানঃ গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছিলো। এসব দুর্যোগের ফলে বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং আর্থিক ক্ষতিতে পড়ে। ঘরবাড়ি ধ্বংশ, ফসলের ক্ষেতের ফসল নষ্ট, মানুষ মারা যাওয়া, বিদ্যৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ সহ আরো নানা ধরণের ক্ষতির শিকার হয়।
২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে,” বাংলাদেশ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা,ভূমিকম্প ও খরা প্রবণ দেশ।” ২০১৭ সালে বৈশ্বিক জলবায়ূ পরিবর্তন ঝুঁকিসূচক অনুযায়ী,” জলবায়ূ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে ষষ্ঠ।
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২০ কোটি ডলার বা ২৫,৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। যা দেশের জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ।” ২৮ শে অক্টোবর ২০২১ এ জাগো নিউজ ২৪ এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে,” ২০২০ সালে বাংলাদেশে দুর্যোগের ফলে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১১৩০ কোটি মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৬ হাজার ৯৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকারও বেশি।”
এভাবেই প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে বাংলাদেশ আর্থিক ক্ষতি সহ নানাবিধ ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরণঃ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে প্রায় ৩ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়। যথাঃ
- বায়ূমণ্ডলীয় দুর্যোগঃ এই ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে কালবৈশাখী, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়,হারিকেন, টর্নেডো, খরা ইত্যাদি।
- ভূ-পৃষ্ঠে সং ঘটিত দুর্যোগঃ বন্যা, ভূমিধস, নদীভাঙ্গন, ভূ-অভ্যন্তরস্থ পানিদূষণ প্রভৃতি ভূ-পৃষ্ঠে সংঘটিত হয়।
- ভূ-গর্ভস্থ দুর্যোগঃ এ ধরণের দুর্যোগ গুলো ভূমির অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়। যেগুলো সম্পর্কে পূর্ব থেকে কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। যেমন- ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত।
বাংলাদেশের বন্যা: প্রতিবছরই বাংলাদেশকে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ঘটে থাকে এমন কয়েকটি প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলো হলোঃ
বন্যাঃ ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঋতু হলো বর্ষা। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুইমাস মিলে আসে বর্ষা ঋতু, বাংলার প্রকৃতিকে নতুন করে সাজাতে। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলায় বর্ষা মানেই হলো বৃষ্টি। সময় নেই, ক্ষণ নেই, নিমন্ত্রণ নেই, বৃষ্টি চলে আসে যখন-তখন।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টি যখন অতিরিক্ত মাত্রা ধারণ করে খাল-বিল ভরাট হয়ে যায়, তখন তার পরিবর্তিত রূপের নাম হয় বন্যা। সাধারণত বর্ষা কালে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে খাল-বিল, নদী-নালা সব ভরাট হয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তখন একে বন্যা বলে। মে মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বন্যা ভয়ংকর রুপে দেখা দেয়।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক রূপে ৫ টি বন্যা হয়েছে। সালের বন্যায় বাংলাদেশ প্রচুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৯৫৫,১৯৬৩, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮,১৯৯৮, ২০০০,২০০৪ ও ২০০৭ সালের বন্যা।তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিলো ১৯৯৮ সালের বন্যায়।
বাংলাদেশে বন্যার ধরণঃ প্রতি বছরই বাংলাদেশে কম-বেশি বন্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রধানত চার ধরণের বন্যা হয়ে থাকে।
১) আকস্মিক বন্যাঃ এপ্রিল-মে, সেপ্টেম্বর- নভেম্বর মাসে স্বল্পস্থায়ী ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ি নদীর পানি উপচে পড়ার ফলে পাহাড়ের পাদদেশে যে বন্যার সৃষ্টি হয়, তাকে আকস্মিক বন্যা বলে। দেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি আকস্মিক বন্যায় কবলিত এলাকা। এদেশে ২০০২, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১০ সালের আকস্মিক বন্যায় উত্তর-পূর্ব হাওড় অঞ্চলে শীতকালীন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
২) নদীসৃষ্ট বন্যাঃ জুন ও জুলাই মাসে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ব্রহ্মপুত্র নদীখাতে সর্বোচ্চ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। আগস্ট- সেপ্টেম্বরে গঙ্গার পানি সর্বোচ্চ প্রবাহ হয় এবং বন্যার সৃষ্টি হয়।
৩) বৃষ্টিজনিত বন্যাঃ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিজনিত বন্যা বেশি হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যা হয়।
৪) উপকূলীয় বন্যাঃ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল রেখা( প্রায় ৮০০ কিলোমিটার) সংলগ্ন এলাকাতে উপকূলীয় বন্যা দেখা দেয়। বঙ্গোপসাগরের অগভীর মহাসোপান, বঙ্গোপসাগরে পূর্ব অংশের ফানেল ও মোচাকৃতির উপকূল রেখার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের উচ্চতা (১০-১৫) মিটারের অধিক হলে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা হয়। ১৯৭০ সালের ১২ ই নভেম্বর, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ বন্যা হয়।
বন্যা কেন হয়? বন্যা যেহেতু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই আমরা বলতে পারি, প্রাকৃতিক কারণেই বন্যা হয়ে থাকে। তবে বন্যার কিছু মানুষসৃষ্ট কারণও রয়েছে। বন্যার কারণ সমূহকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।
বন্যার প্রাকৃতিক কারণঃ
- বর্ষাকালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নদীর উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই প্রচুর বৃষ্টিপাতই বন্যার একটি কারণ।
- হিমালয়ের বরফ গলে পানিপ্রবাহ নদীর অভিমুখে চলে আসে। যার ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এতে বন্যা সৃষ্টি হয়।
- মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেও বন্যা হয়ে থাকে।
- নদীসমূহের গভীরতা হ্রাস পাওয়া
- বঙ্গোপসাগরে ভরা জোয়ারের পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা হতে পারে।
বন্যার মানবসৃষ্ট কারণঃ
- গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত ফারাক্কা বাধ ও তিস্তা নদীর উপর নির্মিত বাধের প্রভাবে বন্যা হয়ে থাকে।
- বালু ভরাট ও উত্তোলনের কারণে নদী সমূহের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
- শহরাঞ্চলে নগরায়নের ফলে জলাধার ও খাল সমূহ ভরাট করার কারণে পানি চলাচলে বাধা পায় এবং জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যাঃ
১৯৮৭ সালের বন্যাঃ ১৯৮৭ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের বন্যায় বাংলাদেশে নেমে আসে ধ্বংশের মাতম। বাংলাদেশ প্রচুর ক্ষতির শিকার হয়। প্রায় ৪০% এর বেশি এলাকা প্লাবিত হয়। যা প্রায় ৫৭ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার সমান। এই ধরণের বন্যা ৩০-৭০ বছরে একবার হয়।
১৯৮৮ সালের বন্যা প্রতি বছরে বন্যায় বাংলাদেশে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এ যাবতকালে বাংলাদেশে সবচে প্রলয়ংকারী বন্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৮৮ সালের বন্যা। ১৯৮৮ সালের বন্যার কথা স্মরণ হলে আজও মানুষ কেঁপে ওঠে। স্মরণকালের সেই ভয়াবহ বন্যায় দেশের প্রায় ৬০% এলাকা ডুবে গিয়েছিলো। আগস্ট – সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত সেই বন্যায় ১৫-২০ দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় টানা বৃষ্টি হয়েছিলো।
সেই সময় ভয়ংকর বন্যায় মাত্র ৩ দিনেই দেশের প্রধান ৩ টি নদীর পানি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয় এবং বন্যা তীব্র আকার ধারণ করে। এই সময় বন্যার পানি ১২২ মিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই বন্যার কারণে দেশের প্রায় ৮২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৩ শে আগস্ট পর্যন্ত ১২১ জন মারা যায়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ মেরামতে প্রায় ৪০ কোটির মতো খরচ হয়েছিলো। রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিলো। কয়েক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছিলো।
১৯৯৮ সালের বন্যাঃ বাংলাদেশে সংঘটিত ভয়াবহ ও ভয়ংকর বন্যা সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৯৮ সালের বন্যা। এই বন্যা প্রায় দুই মাস স্থায়ী ছিলো। প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই সময় সারা দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।বৃষ্টিপাতের ফলে মাত্র ৩ দিনেই প্রধান ৩টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে একই সময়ে প্রবাহিত হয়। যা পরবর্তীতে ভয়ংকর ও ভয়াবহ বন্যায় রূপ নেয়।
১৯৯৮ সালের বন্যা ১০০ বছরের মধ্যে সবচে ভয়াবহ। বন্যায় বিপদসীমার ৬৮ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। এতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৫২ টি জেলা এই বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দেশের অসংখ্য মানুষ বন্যার ফলে গৃহবন্দী হয়ে পড়ে।
১২ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ বন্যার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করে। প্রায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে ছিলো দীর্ঘদিন। খাদ্য ঘাটতি ছিলো প্রায় ২১৮ লাখ মেট্রিক টন। সেই সময় ১৫০০ মানুষ মারা যায়। এই বন্যা ৮০ দিনের মতো স্থায়ী ছিলো।
২০০০ সালের বন্যাঃ আজ থেকে ২০-২২ বছর আগের কথা। ২০০০ সালের আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসের এক আকস্মিক বন্যায় বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ ছিলো অপরিমেয়। সেই বন্যায় বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ৭টি এবং দক্ষিনের ২ টি জেলার প্রায় ৪১ টি উপজেলার ২৮০ টি ইউনিয়নে বন্যায় ৩০ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ৮ লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি হারায়।
২০০৭ সালের বন্যাঃ ২০০৭ সালকে বলা যায় দুর্যোগের বছর। এই বছর একই সাথে কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। বন্যা, খরা, নদী-ভাঙ্গন, ভূমিধস, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস- প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সারা বছর জুড়েই একের পর এক দুর্যোগকে সামাল দিতে হয়েছে দেশবাসীকে। দুর্যোগের ঘনঘটা ছেয়ে গেছে গোটা দেশ।
২০০৭ বছরের প্রথমেই জানুয়ারি মাসে খরার কবলে পড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ কয়েকটি এলাকা। জুলাইতে প্রথম ধাপের বন্যা। সেপ্টেম্বরে আকস্মিক অস্বাভাবিক বন্যা। সেই সাথে দেখা দেয় নদীভাঙ্গন। পরপর দুইবারের বন্যায় প্রায় ১৪ লাখ টন ফসল খাদ্যশষ্য নষ্ট হয়। যার ফলে খাদ্যঘাটতি দেখা দেয় প্রায় ১৯ লাখ টন। অতিবৃষ্টি বরাবরই পাহাড়ি এলাকার জন্য আতঙ্কের কারণ। সেবার মানে ২০০৭ সালের জুন মাসে হঠাৎ অতিবৃষ্টি শুরু হয়। চট্টগ্রাম ও আশেপাশে পাহাড় ধসে পড়ে।
পাহাড়ধস ও পাহাড় চাপায় ১২৭ জন মারা যায়। তবুও দুর্যোগ ছাড়ে নি দেশের মানুষকে। ২০০৭ এর ১৫ ই নভেম্বর দেশের ইতিহাসে একটি ভয়ংকর দুর্যোগের দিন। এই দিন দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। সিডরের ভয়াবহতা বর্ণনা করার মতো নয়। এতে দেশের ৩২ জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতির সম্মুক্ষিন হয়। সিডরে প্রায় ১৫ হাজার লোক মারা যায়। বিশেষজ্ঞের মতে,” গত ১৩১ বছরের ইতিহাসে এটি অন্যতম।”
২০১৪ সালের বন্যাঃ উত্তর-পূর্ব ও উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ টি জেলায় ২০১৪ সালের ১৩ ই আগস্ট থেকে বন্যার কবলিত হয়। এই বন্যাও বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ বন্যায় পরিণত হয়। অতিরিক্ত বর্ষন, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ী ঢল এই বন্যার কারণ। এছাড়া প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বন্যা হয়ে থাকে।
নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, বগুড়া, সিলেট সহ অন্যান্য জেলায় প্রবল বর্ষনের ফলে বন্যায় কবলিত হয়। প্রায় ৮৪২৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সমগ্র বাংলাদেশের ১৮ টি জেলার ২.১৫ মানুষের ঘরবাড়ি, বসতবাড়ি, আবাদি জমি, জীবন-জীবিকা এবং ফসলের ক্ষতি হয়। এই বছরের বন্যায় প্রায় ২১ জন মানুষ মারা যায়।
কোন কোন জেলায় বন্যা বেশি হয়? ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তন-এই দুই কারনে বাংলাদেশে বন্যা বেশি হয়। তবে সব জেলায় হয় না। কোনো কোনো জেলায় অতিরিক্ত বন্যার কবলে জনজীবন হুমকির সম্মুক্ষিন হয়। আষাঢ় থেকে আশ্বিন এই মাসগুলোতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেমন সুনামগঞ্জ, বরগুনা, পিরোজপুর, মাদারীপুর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, বাগেরহাট, নেত্রকোনা, নিলফামারী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ি, সিলেট, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর সহ আরো অনেক।
বন্যায় মোকাবিলায় করণীয়ঃ পূর্ব প্রস্তুতিঃ আমরা দেখেছি যে, বন্যা হলে আমাদের দেশ প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সমুক্ষিন হয়। এসব ক্ষতি এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যদি বন্যা মোকাবিলা করার জন্য কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারি, তবে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ক্ষতি আমরা এড়াতে পারি।
বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে যেসব কাজে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকারঃ
- সবসময় আবহাওয়ার সংবাদ শোনা।
- যেদিন থেকে বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে, সেদিন থেকেই বন্যা মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
- শুকনো খাবার ও খাবার পানি আলাদা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
- বাড়িতে কার্বলিক এসিড মজুদ রাখা যাতে করে সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচা যায়।
- গবাদিপশু যেমন- গরু-ছাগল ও হাস-মুরগির জন্য উঁচু করে মাচা তৈরি করা।
- বন্যা প্রতিরোধী শস্য রোপন করা অর্থাৎ যেসব ফসল বন্যার পানিতেও টিকে থাকতে পারে সেগুলো রোপন করা।
- শোবার খাট ও বাড়ির চারপাশে সম্ভব হলে বেষ্টনি দেওয়া। যাতে ছোট বাচ্চারা পানিতে না পড়ে।
- বন্যার সময় চলাচলের জন্য নৌকা তৈরি করা।
- বাড়ির ভিটা উঁচু করা
- শিশুদের সাঁতার শেখানো
- নিরাপদ অথবা বিকল্প আশ্রয় কেন্দ্রের খোঁজ রাখা।
বন্যা কালীন প্রস্তুতিঃ
- বন্যা কালীন সময়ে কাছাকাছি উঁচু স্থান বা নিকট কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে।
- নিজের বসতবাড়িতে থাকা সম্ভব না হলে নিকটবর্তী কোনো জায়গায় বা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা।
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘরের চালের নিচে পাটাতনে রাখা।
- টিউবওয়েলের পানি পান করুন। টিউবওয়েলের পানি না থাকলে ফুটিয়ে পানি পান করুন।
- শুকনো খাবার সংরক্ষণ করুন
বন্যাকালীন নারীদের করণীয়ঃ
- দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগে থেকেই অর্থ সঞ্চয় করুন।
- আলগা চুলা ও জ্বালানী জোগাড় করে রাখুন।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ঠিক করে রাখুন। এলাকার ধাই ও স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ রাখুন। নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য বাড়িতে সব উপকরণের ব্যবস্থা রাখুন।
বন্যাকালীন রোগব্যাধি থেকে বাঁচার উপায়ঃ
- বন্যার পানি ফুটিয়ে পান করুন
- খাবার ঢেকে রাখুন
- পঁচা-বাসী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে ডায়রিয়া হতে পারে।
- খাবার আগে ও টয়লেট ব্যহারের পর সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে।
- পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে স্যালাইন পান করতে হবে।
বন্যা পরবর্তী করণীয়ঃ
- বন্যার পানি নেমে গেলে নিজ বাড়িতে গিয়ে বাড়িঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও মেরামত করুন
- বাড়ির আশেপাশে শাকসব্জির চাষাবাদ করা শুরু করা যায়
- বন্যার পর পানিবাহিত রোগবালা দেখা যায়। এসব থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার করতে হবে।
- পানি পানের আগে ফুটিয়ে নিতে হবে।
- ঘরবাড়ি মেরামত বা পূনঃনির্মাণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- পানি বাহিত রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ আবশ্যক
- সবসময় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
- নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি খেয়াল ও যত্ন নিতে হবে।
- পুকুর ডোবায় পানি কমে গেলে মাছ সংগ্রহ ও পরবর্তীতে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাঃ
যদিও বন্যা এক প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একে নিয়ন্ত্রন করা সহজ নয়। তবুও এমন কিছু পদক্ষেপ আছে যেগুলো গ্রহণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা কিছুটা হলেও সম্ভব। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১) সাধারণ ব্যবস্থাপনাঃ নদীর দুই তীরে বৃক্ষ রোপন করা, নদী শাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা, বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা ইত্যাদি।
২) ব্যয় বহুল প্রকৌশলগত ব্যবস্থাঃ ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, জলাধার নির্মাণের মাধ্যমে পানি প্রবাহকে সম্পূর্ণ রূপে নিয়ন্ত্রণ করা, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৩) সহজ প্রকৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণঃ নদীর দুই তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, বনায়ন সৃষ্টি করা, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা।
শেষ কথাঃ একবিংশ শতাব্দিতে বাস করছি আমরা। প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের বসবাস। তথ্য সংগ্রহতে নেই কোনো বিরাম। আবহাওয়ার সংবাদ পেয়ে যাচ্ছি সেকেন্ডেই।
তাই আগাম প্রস্তুতি নিতেও নেই কোনো কার্পন্য। সুতরাং আমরা যদি ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাবে সচেতন হতে পারি, তাহলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিজেদের অনেকাংশে রক্ষা করতে পারি। আমরা যারা বন্যা কবলিত এলাকা থেকে দূরে আছি, তারা যেন বন্যা কবলিতদের সাহায্য- সহযোগীতার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে তাদের পাশে থাকতে পারি।
তুরস্কের কৃষ্ণ সাগর বন্যা
মুসলিম পরাশক্তি সমৃদ্ধ দেশ তুরস্ক। ভৌগোলিক কাঠামোগত দিক থেকে তুরস্ক দেখতে মোটামুটি চতুর্ভুজাকৃতির। দেশটির ইতিহাসে সভ্যতার মতোই, এর ভৌগোলিক কাঠামো অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এশিয়ার আনাতেলিয়া উপদ্বিপ এবং দক্ষিণ-পূর্বাংশে ইউরোপের বলকান উপদ্বিপ। ফলে তুরস্ক ভৌগোলিকগত দিক থেকে একই সঙ্গে এশিয়া এবং ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত। যা সচরাচর ওন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না।
ভৌগোলিক এই বিচিত্রতা তুরস্ককে সকল দেশের চেয়ে আলাদা করেছে। তুরস্কের ইউরোপের অংশটি তেরাকিয়া নামে পরিচিত। যেখানে তুরস্কের মোট আয়তনের ৩% হলেও জনসংখ্যার ১০% লোক বাস করে। এখানেই আছে তুরস্কের এবং ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তাম্বুল।ইতিহাস এবং ঐতিয্যগত দিক থেকেও তুরস্কের একটি বিশেষ মর্যাদা আছে।
তুরস্কের হাজারও ইতিহাসের সাক্ষি এই ইস্তাম্বুল শহর। এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ।তুরস্কের অন্যতম বড় সাগরের নাম হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর। আজ আমরা ২০২১ সালে এই কৃষ্ণসাগরে ঘটে যাওয়া, তুরস্কের ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে বড় বন্যা flash flood সম্পর্কে জানব। তুরস্কের কৃষ্ণ সাগরীয় সাধারণত যখন কোন স্থলভাগ পানি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয় তখন তাকে বন্যা Flash Flood বলে।
আবহাওয়া বিজ্ঞান তুরস্কের কৃষ্ণ সাগর বন্যাকে মুলত তিন ভাগে ভাগ করেছেন।
১. মৌসুমি বন্যাঃ
মৌসুমি বন্যা মৌসুমভিত্তিক হয়ে থাকে। এ ধরনের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।
২. আকস্মিক বন্যাঃ
এ ধরনের ঘটনা সাধারণত কোন সময়ের উপর নির্ভর করে হয়না।
আবহাওয়াবিদদের মতে, কোন ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সংঘটিত বন্যাকে আকস্মিক বন্যা বলা হয়। এ ধরনের বন্যা সাধারণত খুব কম পরিলক্ষিত হয়।
৩. ঋতুভিত্তিক বন্যাঃ
বাংলাদেশসহ দক্ষিন এশিয়ায় এ ধরনের বন্যা সাধারণত বর্ষাকালে দেখা যায়। অন্যান্য বন্যার চেয়ে এ ধরনের ঋতুভিত্তিক বন্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে। ঋতুভিত্তিক বন্যা অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ীও হয়ে থাকে।
বন্যার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। পৃথিবিবাসি প্রাচীনকাল থেকেই বন্যার সাথে পরিচিত ছিল।ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে, হলুদ নদিতে খৃস্টপূর্ব (২২৯৭) এবং নিলনদে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে বন্যা সংঘটিত হওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বন্যাগুলোর মধ্যে তুরস্কের কৃষ্ণসাগরীয় প্রদেশগুলোর বন্যা উল্লেখ্যযগ্য। সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হওয়া বন্যার মধ্যে এটিকে সবচেয়ে বড় flash flood বন্যা বলে বিবেচিত করা হয়। ১৩ই আগস্ট ২০২১ বুধবার তুরস্কে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে, তুরস্কের কৃষ্ণসাগরীয় প্রদেশগুলোতে পানির পরিমান হো হো করে বাড়তে থাকে। সবাই কোন কিছুই বুঝে উঠার আগের চারদিকে পানি থই থই করতে থাকে। সবার হতবম্ব হয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কোন কিছুই করার থাকে না।
পানির পরিমান এতটাই বেশি ছিলো যে, সবাই সুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিল, এর বাইরে কারো কোন কিছু করার ছিলনা। এক মুহূর্তে ভারী বৃষ্টিপাত কৃষ্ণসাগরের প্রদেশগুলোকে যেন তচনচ করে দিয়েছিল। এই বন্যার কারণে তুরস্কের উত্তরাঞ্চলে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩ জন আহত হয়েছিল, এছাড়া একজন বয়স্ক নারী নিখোঁজ ছিল।
পরবর্তীতে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। উপরোক্ত সবগুল তথ্য তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। বেসরকারি তথ্যমতে এই সংখ্যা, দিগুন বা তিনগুন পর্যন্ত হতে পারে।
তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেক প্রাণ যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তুরস্কের কান্তামনু প্রদেশের কাতালজাইতিন জেলার বন্যার ফলে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাছাড়া বারটিন প্রদেশের উলুস জেলার আরিফ কুনাল নামের ৮৫ বয়সের এক নারী নিখোঁজ হয়েছিলো। পরবর্তীতে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হয় তিনি হয়তো বন্যার পানির সঙ্গে কৃষ্ণ সাগরে ভেসে গিয়েছে।
তুর্কি সরকার অনেক চেষ্টা করেও ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে পারেননি। তুরস্কের সরাস্ট্প্রতিমন্ত্রি ইসমাইল কাটাকলি জানিয়েছিলেন যে, আন্টালিয়া প্রদেশের কুমলুচা জেলায় আরও একজন নিখোঁজ হয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর বন্যার কারণে তুরস্কের অনেক ঘরবাড়ি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পরবর্তীতে যার প্রভাব অর্থনীতিতে ব্যপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তিপক্ষ জানিয়েছিলেন বন্যা আক্রান্ত এলাকাসমুহের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এই বন্যায় নিহতের সংখ্যা সঠিক ভাবে বলা না গেলেও অনুমান করা হয় ৫৭ জন এই বন্যায় নিহত হয় এবং আনুমানিক ৮৯ জনের মতো আহত হয়। যাদের অনেককেই এখনও খুজে পাওয়া যায়নি। সর্বোপরি বন্যার হাত থেকে বাঁচতে আমাদের প্রয়োজন সঠিক নগরায়ন এবং পরিকল্পিত পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা।
More Stories
Russell Viper নিধন কেন সমাধান নয়?
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে করণীয়
ঝুঁকি কি কত প্রকার হ্রাস ও ব্যাবস্থপনা